ভূমিকা শুধু বেঁচে থাকার জন্য নয়, বেঁচে থেকে আনন্দভোগের জন্যও আহারের প্রয়োজন। আহার, নিদ্রা, মৈথুন--এই তিনটি জীবনে আনন্দভোগের প্রধান উপায়। সেই আদিম কাল থেকে একেবারে সহজাত ভাবে এই তিনটি উপায় প্রচলিত আছে এবং এই তিনটির প্রথমেই আছে আহার । আহার জীবনের এক মস্ত আনন্দ। এই আনন্দ থেকে কোনও ডায়াবিটিজের রোগীকে বঞ্চিত করা অন্যায়। আহারের ব্যাপারে আর-সকলের মতো ডায়াবিটিজের রোগীদেরও সমান চাহিদা, সমান আকাঙ্ক্ষা এবং সমান লোভ—শরীরের প্রয়োজনও মোটামুটি সমান। কিন্তু যে মুহূর্তে ধরা পড়ে আপনার অলক্ষিতে আপনার শরীরে ডায়াবিটিজ এসে বাসা বেঁধেছে সেই মুহূর্তে হঠাৎ আপনি কিছু বিধিবন্ধনের মধ্যে পড়ে যান—আর আপনি আগের মতো নির্বিচারে আহার করতে পারেন না। আহারও আপনার চিকিৎসার অঙ্গ হয়ে দাঁড়ায়-এবং অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। আপনার ডাক্তার আপনার রান্নাঘরে আর খাবারের টেবিলে কিছু ‘ঠিক’ও ‘বেঠিক’, কিছু ‘খাবেন’ ও ‘খাবেন না'-র পোস্টার লাগিয়ে দেন। ডায়াবিটিজের বার্তা সত্যিই বড়ো বেশি স্পষ্ট। এই বার্তা আধুনিক জ্ঞানে ঋদ্ধ হয়ে ডায়াবিটিজের রোগীদের কাছে স্পষ্ট করেই পৌঁছনো দরকার। তাঁদের জানা দরকার, ডায়াবিটিজের রোগীদের আহারের ক্ষেত্রে নিঃশব্দে এক বিপ্লব ঘটে গিয়েছে। বহু বছরের বহু পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে, ডায়াবিটিজের রোগীরা সত্যি সত্যিই আর-সকলের মতো যে কোনও খাদ্যই খেতে পারেন এবং সব খাদ্যই খেতে পারেন—কিছু বিধিবন্ধন মেনে।
এই বইয়ের উদ্দেশ্য, আপনি ডায়াবিটিজে আক্রান্ত হয়েছেন বলেই ‘দণ্ডাদেশ’ পেয়ে গিয়েছেন এমন কথা আপনাকে না ভাবতে বলা, আপনাকে কিছু আশার বার্তা শোনানো— এবং ডায়াবিটিজ আসলে কী, ডায়াবিটিজে আপনি কী করবেন ও কী ধরনের খাদ্য খাওয়ার চেষ্টা করবেন সে সম্বন্ধে কিছু বলা, সেইসঙ্গে ডায়াবিটিজ নিয়ন্ত্রণে খাদ্যেরও যে একটা অতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে সে বিষয়ে আপনাকে অবহিত করা ।