‘জলন্ত প্রান্তর’ বইয়ের ফ্ল্যাপের লেখা জাদু-বাস্তবতার প্রথম সার্থক সূচনা যাঁর লেখায় সেই হুয়ান রুলফোর সমগ্র রচনা মানে একটি ছোটো উপন্যাস ও একটি গল্পসংকলন। 'জ্বলন্ত প্রান্তর' পনেরোটি গল্পের সংকলন। 'ভোরবেলায়' গল্পের সময়ের পরিসর মাত্রই চব্বিশ ঘণ্টা, এক সূর্যোদয় থেকে আর-এক সূর্যোদয়, অথচ সময় বয়ে যেতেই থাকে অন্তহীন, পটভূমি হয়ে ওঠে ফাঁদ। রুলফোর কাহিনিগুলি নাটকীয়তায় ভরপুর, রুদ্ধশ্বাস। চলমান, দপদপ করতে থাকা জীবনকে রুলফো আশ্চর্য দক্ষতায় থামিয়ে দেন, তৈরি করে দেন নিশ্চলতার প্রতিভাস। তাঁর স্বগতোক্তির মধ্যে একটা সহজ, অনায়াস, স্বতঃস্ফূর্ত ভঙ্গিমা রয়েছে। মেহিকোর দুঃস্থ দুর্গম, রুক্ষ, ঊষর গ্রাম তার মাটিপাথর, ধুলো, হাওয়া, কুয়াশা, চাঁদ, করোটি, শকুন ইত্যাদি নিয়ে হয়ে ওঠে কাহিনিরই অবিচ্ছেদ্য অংশ। গল্পের পর গল্পে নিরন্তর ক্ষয়ে যাচ্ছে এই গ্রাম– নিঃসঙ্গ, পরিত্যক্ত, নাছোড় অদৃষ্টবাদে ম্রিয়মাণ। ‘মনে আছে’ গল্পে কথক আর-একজন কাউকে কাহিনি বলে যাচ্ছে। হ্যাঁচকা টানে রুলফো মুখোশ খুলে দিয়েছেন। দুঃস্থ ইন্ডিয়ানরা যখন কঠোর শারীরিক পরিশ্রম করে বেঁচে থাকার চেষ্টায় হন্যে হয়ে যায় তখন তাদের অন্তর্জগৎ ভরে ওঠে তীব্র মানসিক বিক্ষেপে— আতঙ্কে, শোকে, বেদনায়, আক্ষেপে, গ্লানিতে। যেন তারা সবাই মরে গেছে, মরে পড়ে আছে। এখনও জন্মায়নি, জন্মের আগেই মৃত্যুর দ্বারা লাঞ্ছিত ।