"উড়ুক্কু" বইয়ের ফ্ল্যাপের লেখা: নীনা এই কাহিনির প্রধান চরিত্র। নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণির চাকুরিজীবী মেয়ে। বিয়ে হয়েছিল, তারপর বিচ্ছেদও হয়ে গেছে। এক পরিবারের সঙ্গে সাবলেটে বসবাস করে। দারিদ্র্য, মনােকষ্ট, চাকরিতে আপস—জীবন ক্রমশ দুর্বিষহ হয়ে ওঠে তার কাছে। এরকম এক সময়ে তার পরিচয় হয় এক মহৎ ব্যক্তির সঙ্গে। এই মানুষটি একদা তার মায়ের প্রেমিক ছিলেন। এই মানুষটির সান্নিধ্যে এসে নীনা যেন জগৎ ও জীবনকে নতুনভাবে দেখতে শেখে। মানুষটির প্রতি প্রগাঢ় এক শ্রদ্ধাবােধ জন্ম নেয় তার মনের গভীরে। এদিকে তার একদা স্বামী আবার মিলিত হতে চায় তার সঙ্গে। কিন্তু পুরােনাে স্মৃতি তাকে ভয় দেখায়। সদ্যোজাত সন্তানের জন্ডিসে মৃত্যু, হাসপাতাল তােলপাড় করা চিৎকার তাকে আতঙ্কিত করে তােলে। ইতিমধ্যে ওমরের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। ছেলেটি ভারী অদ্ভুত। রাগ-ঘৃণা-আনন্দ-বেদনা কিছুই যেন তাকে ছুঁতে পারে না। সমাজের চোখে আত্মসম্মানবােধ বিবর্জিত ছেলেটির সহমর্মিতায় নীনা আলুত হয়। গর্ভে আবার সন্তানের উপস্থিতি টের পায় সে। প্রথম সন্তানের মৃত্যু সে ভুলতে পারে না। অথচ এই নতুন ভুণকে নষ্ট করে দিতেও মন চায় না। কী করবে নীনা? কীভাবে এই প্রবল আত্মসংকটের মােকাবিলা করবে সে? সমাজের রূঢ় বাস্তবতার মুখােমুখি দাঁড়াতে পারবে সে? দাঁড়াতে পারবে তার অস্তিত্বের মুখােমুখি?
নাসরীন জাহান ১৯৬৪ সালে ৫ মার্চ বাংলাদেশের ময়মনসিংহ জেলার হালুয়াঘাটে জন্মগ্রহণ করেন। একজন বাংলাদেশী লেখক, ঔপন্যাসিক, এবং সাহিত্য সম্পাদক। আশির দশকের শুরু থেকে তিনি লেখালেখি শুরু করেন। তার বাবা গোলাম আম্বিয়া ফকির ছিলেন সরকারী চাকুরিজীবী ও মা উম্মে সালমা ছিলেন গৃহিণী। বাবার চাকরীর কারণে থাকতেন মামাবাড়িতে। ১৯৭১ সালে যুদ্ধ শুরু হলে তাকে আর তার ভাইকে ভারতের সীমান্তবর্তী এলাকায় তাদের এক মামীর বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। যুদ্ধ শেষে ফিরে এসে ভর্তি হন শানকিপাড়া স্কুলে। যাতায়াতের সুবিধার জন্য থাকতেন ফুফুর বাড়িতে। ফুফুর এক মেয়ে ছিল শবনম জাহান। ফুফু তার নামের সাথে মিল রেখে মা-বাবার দেয়া নাম নাসরীন সুলতানা পরিবর্তন করে তার নাম রাখেন নাসরীন জাহান। স্কুলে পড়াকালীন পারভিন সুলতানা নামে এক বন্ধুর সাথে তার সখ্য গড়ে উঠে। সে বিদ্যাময়ী সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়-এ ভর্তি হলে তিনিও একই স্কুলে ভর্তি হন। ১৯৭৭ সালে শিশু একাডেমি থেকে লেখা চাওয়া হলে দুই বান্ধবী লেখা পাঠায়। দুজনের লেখা প্রকাশিত হয় সেই পত্রিকায়। ব্যক্তিগত জীবনে নাসরীন জাহান কবি আশরাফ আহমেদের স্ত্রী। লেখালেখির সূত্রেই তার সাথে পরিচয় এবং সে থেকে প্রণয়। ১৯৮৩ সালে তারা বিয়ে করেন। তাদের এক মেয়ে। নাম অর্চি অতন্দ্রিলা। নাসরীন জাহান পাক্ষিক পত্রিকা অন্যদিনের সাহিত্য সম্পাদক। ১৯৯৭ সাল থেকে তিনি এই পত্রিকার সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছেন। তিনি উড়ুক্কু উপন্যাসের জন্য ১৯৯৪ সালে ফিলিপ্স সাহিত্য পুরস্কার অর্জন করেন।