সৈয়দ আলী আহসান জন্ম: ২৬শে মার্চ, ১৯২২ সাল, অবিভক্ত ভারতে তৎকালীন যশোরের আলোকদিয়া গ্রামের একটি সম্ভ্রান্ত সূফী পরিবারে। তঁঅর পূর্বপুরুষ হযরত শাহ আলী রোগদাদী দিল্লীতে সৈয়দ আলাউদ্দিন আযম শাহ্র শাসনামলে বাগদাদ থেকে আগমন করেন।
কবি, সাহিত্যিক, শিল্প তত্ত্বজ্ঞ হিসেবে তিনি দেশে ও বিদেশে খ্যাতিলাভ করেছেন। ছোট এবং বড় মিলিয়ে তাঁর লেখা এবং সম্পাদিত গ্রন্থের সংখ্যা প্রায় একাশীটি।
দেশে ও বিদেশে বহুবিধ কর্মকান্ডে তিনি জড়িত ছিলেন। প্রথমে তিনি সরকারী কালেজ শিক্ষকতা করেছেন। পরে অল ইন্ডিয়া রেডিওতে কিছুকাল কার্যরত ছিলেন। পাকিস্তান আমলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলার অধ্যাপক ছিলেন, করাচী বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের প্রধান ছিলেন। বাংলা একাডেমির পরিচালক ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রফেসর এবং কলা অনুষদের ডীন ছিলেন। মাঝখানে কিছু সময় টোকিওতে ইউনেস্কোর উপদেষ্টা ছিলেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিযুক্ত হন এবং পরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েরও উপাচার্য নিযুক্ত হন। সেখান থেকে শহীদ জিয়ার উপদেষ্টা পরিষদের (মন্ত্রীসভা) শিক্ষামন্ত্রী নিযুক্ত হন। এক বছর সে পদে বহাল ছিলেন। সেখান থেকে আবার শিক্ষা কর্মে ফিরে আসেন। তার সর্বশেষ দায়িত্ব ছিল বাংলাদেশ মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে।
বর্তমানে অবসর জীবন যাপন করছেন। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ক্ষেত্রে সৈয়দ আলী আহসান একজন অনন্যসাধারণ ব্যক্তিত্ব। বাংলা সাহিত্যের সকল ক্ষেত্রে তাঁর আশ্চর্য অধিগম্যতা আছে। শিল্পকলা বিষয়েও তাঁর পরিণত বুদ্ধি এবং বিচার-বিশ্লেষণ সকলকে মুগ্ধ করেছে। মানবতাবোধের সকল অঙ্গনকে তিনি স্পর্শ করতে চেয়েছেন।
আবাল্য তিনি ধর্মীয় পরিবেশে বড় হয়েছেন। তাঁর পূর্বপুরুষ সকলেই সূফী মতাদর্মে দীক্ষিত ছিলেন। শৈশবে পারিবারিক পরিবেশে আরবী, ফারসী ও উর্দু শিক্ষা লাভ করেছেন। তাঁর দুটি ধর্মীয় গ্রন্থ ইতিমধ্যেই জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। গ্রন্থ দুটির নাম ‘হে প্রভু আমি উপস্থিত’ এবং ‘নাহ্জুল বালাঘা’।
সম্প্রতি তিনি মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লামের একটি অসাধারণ জীবনীগ্রন্থ আমাদের উপঢৌকন দিয়েছেন। সাহিত্যের স্বাদযুক্ত এই জীবনীগ্রন্থে আধুনিক বাংলা গধ্যের একটি বিস্ময়কর পরচর্যা ঘটেছে। একটি মহান জীবন এবং প্রজ্ঞার কাছে নিজেকে সমর্পণ করে তিনি এ গ্রন্থটি রচনা করেছেন। যে জীবন মানুষকে অভিভূত করে, যে জীবন বিধাতার নিকট আত্মসমর্পণের একটি অলৌকিক পরিচয় বহন করে এবং যে জীবন সকল মানবের কল্যাণে সর্ব সময়ের জন্য নিয়োজিত সেই জীবনের একটি মনোজ্ঞ আলেখ্য ‘মহাবনী’ গ্রন্থটি। আমরা এ গ্রন্থটি পাঠকের হাতে তুলে দিতে পারে গর্ববোধ করছি।
Syed Ali Ahsan (২৬শে মার্চ, ১৯২২ - ২৫শে জুলাই, ২০০২) বাংলাদেশের একজন খ্যাতনামা সাহিত্যিক, কবি, সাহিত্য সমালোচক, অনুবাদক, প্রাবন্ধিক ও শিক্ষাবিদ। ১৯৮৯ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশ সরকার তাঁকে জাতীয় অধ্যাপক হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে। তিনি তাঁর পাণ্ডিত্যের জন্য প্রসিদ্ধ ছিলেন। সৈয়দ আলী আহসান কৃত বাংলাদেশের জাতীয় সংগীতের ইংরেজি অনুবাদ সরকারি ভাষান্তর হিসাবে স্বীকৃত। পুরোনো ঢাকা শহরের আরমানিটোলায় অবস্থিত আরমানিটোলা সরকারি হাইস্কুল থেকে এন্ট্রান্স (এসএসসি) এবং ঢাকা ইন্টারমিডিয়েট কলেজ (বর্তমানে ঢাকা কলেজ) থেকে এফএ (এইচএসসি) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দে স্নাতক (বিএ)এবং ১৯৪৪ সালে স্নাতকোত্তর (এমএ) ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর তিনি কলকাতা চলে যান। সেখানেই বিয়ে করেন ৭ জুলাই, ১৯৪৬। অত:পর যথাক্রমে অল ইন্ডিয়া রেডিও কলকাতা কেন্দ্রে এবং রেডিও পাকিস্তান ঢাকা কেন্দ্রে কর্মসূচি নিয়ামকরূপে চাকরি করেছেন। তিনি ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দে সৈয়দ আলী আহসান করাচি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রধান নিযুক্ত হন। ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত এ পদে কর্মরত ছিলেন। ১৯৬০ থেকে ১৯৬৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বাংলা একাডেমীর পরিচালক (প্রধান নির্বাহী) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ও অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়। ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দ থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর পুনরায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে প্রত্যাবর্তন করেন। ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দের ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে ১৯৭৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০০২ খ্রিস্টাব্দের ২৫ জুলাই তিনি ঢাকায় ইন্তেকাল করেন। তাকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ সংলগ্ন কবরস্থানে সমাহিত করা হয়।