ভূমিকা আমি অর্থনীতি বা রাজনীতির ছাত্র নই। ইউরোপে যতগুলি ism-এর সৃষ্টি হইয়াছে (যথাঃ Capitalism, Socialism, Nazism, Fascism ইত্যাদি) সে সব লইয়া আমি মাথা ঘামাই না। ও-পথ আমার নয়। আশ্চর্যের বিষয়, তবু কিন্তু আমাকে কমিউনিজম্ সম্বন্ধে বেই লিখিতে হইল।
মুসলিম তরুণদের অনেকেই আজকাল কমিউনিজমের প্রতি বেশ খানিকটা ঝুঁকিয়া পড়িয়াছে বলিয়া মনে হয়। ইসলামী আদর্শকে পরিত্যাগ করিয়া তাহারা কমিউজিমের রূপে ভুলিয়াছে। কমিউনিজম্ই হইল তাহাদের কাছে আদর্শ সমাজ ও রাষ্ট্র-ব্যবস্থা। যেন দুনিয়ায় এমন সুন্দর ব্যবস্থা আর কোথাও ছিল না, নাই বা হইবে না। ইসলামের বিধান অপেক্ষা কমিউনিজমের বিধানই যে শ্রেষ্ঠতর এবং বর্তমান যুগসমস্যার সমাধানে এই ব্যবস্থাই যে সর্বাপেক্ষা উত্তম, ইহাই তাহাদের ধারণা। এই ভ্রান্ত ধারণা দূর করিবার জন্যই আমার এই প্রয়াস।
একজন আনাড়ী লোকের কাছ হইতে পাঠক কিন্তু এ-বিষয়ে বড় কিছু আশাকরিতে পারেন না। উপযুক্ত লোকের হাত হইতে এই বই বাহির হওয়াই উচিত ছিল। কিন্তু কেহই যখন আসরে নামিলেন না, তখন অগত্যা আমাকেই নামিতে হইল।
কমিউনিজম্ সম্বন্ধে এ যাবত বহু পুস্তক-পুস্তিকা প্রকাশিত হইয়াছে; কিন্তু ইসলামের দিক দিয়া এ-বিষয়ে কেহই তেমন কোন আলোকপাত করেন নাই। আমি সেই চেষ্টা করিয়াছি। কতদূর কৃতকার্য হইলাম, পাঠকই তাহার বিচার করিবেন।
ভুল-ত্রুটি হয় ত অনেকেই ঘটিয়াছে; কিন্তু বিজ্ঞ পাঠক তাহা গ্রহণ করিবেন না, কারণ পূর্বেই বলিয়াছি, এ কাজের উপযুক্ত আমি নই।
বিনীত- গ্রন্থকার
সূচিপত্র * প্রস্তাবনা * কমিউজিম্ কী? * কমিউনিজমের ইতিহাস * কমিউনিষ্ট ইশতেহার * রাশিয়ায় কমিউনিজম্ * সোভিয়েট রাশিয়ার পরিচয় * সোভিয়েট রাশিয়ার বৈশিষ্ট্য * কমিউনিজমের স্বাভাবিকতা * কমিউনিজমের দার্শনিকতা দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ * ইসলমের আলোতে কমিউনিজম * ইসলামের সহিত কমিউনিজমের সাদৃশ্য * ইসলামের সহিত কমিউনিজমের পার্থক্য * কমিউনিজম না ইসলামিজম? * কমিউনিজমের ভবিষ্যৎ * কমিউনিজমের সহিত ইসলামের রাজনৈতিক সম্বন্ধ * মার্ক্সীজম কি বাঁচিয়া আছে? * সোভিয়েট রাশিয়ায় নারী-প্রগতি * সোভিয়েট রাশিয়ার কৃষক-শ্রমিক * ইসলামিক সোশ্যালিজম * কমিউনিজমকে ভয় করি না * পরিশিষ্ট * প্রমাণপঞ্জী
গোলাম মোস্তফার জন্ম ১৮৯৭ সালে যশোর জেলার ঝিনাইদহ মহকুমার শৈলকূপা থানার অন্তর্গত মনোহরপুর গ্রামে। পিতা কাজী গোলাম রব্বানী, পিতামহ কাজী গোলাম সরওয়ার। তাঁরা ছিলেন সাহিত্যানুরাগী-ফারসী ও আরবী ভাষায় সুপন্ডিত। তাঁর তিন পুত্রের মাঝে একজন হলেন বিখ্যাত পাপেটনির্মাতা ও চিত্রশিল্পী মুস্তফা মনোয়ার এবং সাম্প্রতিককালের অস্কারজয়ী বাংলাদেশী নাফিস বিন জাফর তাঁর নাতি।
শিক্ষা জীবন গোলাম মোস্তফার শিক্ষা জীবনের সূচনা হয় চার বছর বয়সে নিজগৃহে ও পার্শ্ববর্তী দামুকদিয়া গ্রামের পাঠশালায়। কিছুদিন পরে তিনি ফাজিলপুর গ্রামের পাঠশালাতে ভর্তি হন। দু’বছর এই পাঠশালায় বিদ্যা অর্জনের পরে তিনি ভর্তি হলেন শৈলকূপা উচ্চ ইংরেজী স্কুলে। ১৯১৪ সালে এই স্কুল থেকে বিশেষ কৃতিত্বের সাথে তিনি প্রবেশিকা বা ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন। ১৯১৬ সালে তিনি দৌলতপুর বি. এল কলেজ থেকে আই. এ এবং ১৯১৮ সালে কলকাতা রিপন কলেজ থেকে বি. এ পাশ করেন। পরে ডেভিড হেয়ার ট্রেনিং কলেজ থেকে বি. টি ডিগ্রীও লাভ করেন।
পেশাগত জীবন ১৯২০ সালে জানুয়ারী মাসে ব্যারাকপুর সরকারি হাই স্কুলের সহকারী শিক্ষক হিসেবে গোলাম মোস্তফার শিক্ষকতা জীবনের সূচনা হয়। ১৯২৪ সালে ব্যারাকপুর হাই স্কুল থেকে তিনি কলকাতা হেয়ার স্কুলে বদলী হন। দীর্ঘদিন এখানে শিক্ষকতা করার পর তিনি কলকাতা মাদ্রাসায় বদলী হন। সেখান থেকে ১৯৩৫ সালে বালিগঞ্জ সরকারি ডিমনেষ্ট্রেশন হাই স্কুলে বদলী হয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষকের পদে উন্নীত হন এবং কয়েক বছর পর উক্ত বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদমর্যাদা লাভ করেন। এই বিদ্যালয়ের তিনিই প্রথম মুসলিম প্রধান শিক্ষক। ১৯৪০ সালে তিনি বাঁকুড়া জিলা স্কুলে বদলী হন। শিক্ষকতা জীবনে বিভিন্ন স্কুলে শিক্ষকতা করার পর ১৯৪৬ সালে তিনি ফরিদপুর জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। দীর্ঘ ত্রিশ বছর শিক্ষকতা করার পর ১৯৫০ সালে তিনি চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করেন। বাংলা সাহিত্যের সাধক কবি গোলাম মোস্তফা তাঁর শেষ জীবনের কয়েক বছর ঢাকা শান্তিনগরস্থ নিজ গৃহে (মোস্তফা মঞ্জিল) অতিবাহিত করেন। বেশ কিছু দিন রোগ যন্ত্রণা ভোগ করার পর কবি ১৯৬৪ সালের ১৩ অক্টোবর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।