"প্রশ্নোত্তরে ফিকহুল ইবাদাত" বইয়ের সংক্ষিপ্ত বিবরণ: ‘কবর কিয়ামাত আখিরাত’ নামক বইটি মহা সুসংবাদ ও এক ভয়ংকর দুঃসংবাদ বাহক গ্রন্থ। প্রতিটি মানুষ ও জিন অচিরেই এমন কিছু ঘাঁটি অতিক্রম করবে যা ভীষণ ভয়ঙ্কর, মর্মান্তিক ও মর্মন্তুদ। আর এগুলো হলো মৃত্যু, কবর, নশর, হাশর, সিরাত, কান্তারা, অতঃপর জান্নাতের বাগান বাড়ি বা জাহান্নামের আগুনের বাড়ি। এর মধ্যে আছে আবার আল্লাহর সামনে দাঁড়ানো, হিসাব-নিকাশ পেশ ও জিজ্ঞাসাবাদের পালা এবং বিবস্ত্র ও জুতাবিহীন অবস্থায় সেখানে পঞ্চাশ হাজার বৎসর রৌদ্রে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা ও পিপাসার্ত কঠিন মুহুর্ত। যে বিপদগুলোর বিভীষিকা বলার বা বুঝানোর কোন ক্ষমতা আমারও নেই, কারো নেই। সেখানে অনুপস্থিত থাকা বা পালানোর ক্ষমতাও কারো নেই। শিশু থেকে বৃদ্ধ, নারী থেকে পুরুষ, আদম থেকে শেষ দিন পর্যন্ত আগত প্রাচ্য-প্রতীচ্যের সকলকেই সেখানে একসাথে একমাঠে জড়ো হতে হবে, হবে সেখানে মহাসম্মেলন। বুক ফাটা তৃষ্ণা নিয়ে শেষ ফলাফলের অপেক্ষায় দাড়িয়ে থাকবে পঞ্চাশ হাজার বছর। যদিও নেক বান্দাদের বিষয়টি কিছুটা ভিন্ন। প্রতিটা ঘাটিতে কি কি ধরনের বিপদ ঘটবে, কারা বিপদে নিমজ্জিত হয়ে যাবে, কারা পরিত্রাণ পাবে এবং শেষ ঠিকানা কার কিরূপ হবে এগুলোর আগাম সংবাদ নিয়ে বইটি প্রণীত হয়েছে। ইসলামী কোনো পুস্তক হলে মানুষ মনে করে যে, বইটি শুধু মুসলিমদের জন্য। কিন্তু এ বইটি জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সকলের জন্য। কেননা, মানুষ বলতে সকলেই এ ঘাঁটিগুলোর সম্মুখীন হবে। পদে পদে বিপদের মুখোমুখি হবে। তাই এ থেকে পূর্ব সতর্কাবস্থানে থাকা, নিজেকে নিরাপদে রাখার জন্য প্রত্যেক ভাই-ই বইটিতে নজর বুলাবেন। তাই এটি একটি সার্বজনীন গ্রন্থ, বিপদ সংকুল ও বিপদমুক্তির গ্রন্থ। বইমেলা ও বইয়ের বাজারে হাজারো-লাখো গ্রন্থ পাওয়া যায়। সব বই আমাদের সবার পড়তে হবে, সকলের ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য নয়। কিন্তু এ বইয়ে মানুষের অদূর ভবিষ্যতের যেসব আগাম সংবাদ প্রদান করা হয়েছে, সেগুলো অক্ষরে অক্ষরে জানা ও করণীয় পদক্ষেপ নেয়া, হুঁশিয়ার থাকা প্রতিটি বনী আদমের জন্য জরুরির চেয়েও জরুরি।
মরণের পর মানুষ চলে যায় মাটির নিচের বাড়িতে। সে বাড়িটি কেমন, অতঃপর কি কি বাড়ি ও ঘাঁটিতে কি হাল অবস্থা হবে তার একটা চিত্র তুলে ধরা হয়েছে এ গ্রন্থে। কবরের পরের বাড়িগুলোতে কতকাল কি অবস্থায় কে কিভাবে থাকবেÑ তা আমরা বলতে পারি না। সকলের হাল-হকিকত হবে কেবল নিজের আমলের ভালোমন্দ বিবেচনার আলোকে। এতকাল পাড়ি দিয়ে এত বাড়ি অতিক্রম করে শেষ ঠিকানায় চির আবাসে কেউ যাবে জান্নাতের গুলবাগিচায়, কেউবা যাবে আগুনের কারাগারে। বেহেশতের গুলবাগিচা ও আগুনের কারাগারে কারা ঢুকবে, কিভাবে ঢুকবে, এগুলোর বিবরণও এ বইয়ে দেয়া আছে। শুরুতে আছে কবর ও কিয়ামতের বিবরণ। সবচেয়ে বড় হলো, এতে আছে জান্নাতের নেয়ামতের অপূর্ব বর্ণনা ও জাহান্নামের বিভীষিকাময় বিবরণ। এসব তথ্য সংগ্রহ কোনো কবি-সাহিত্যিক, দার্শনিক, বিজ্ঞানী, গবেষক বা উপন্যাসিক থেকে নয়। বরং, নেয়া হয়েছে মহাগ্রন্থ আল কুরআনুল কারীম থেকে; যে গ্রন্থে কোনো ভুল নেই, বিগত প্রায় দেড় হাজার বছরেও কেউ কোনো একটা মানুষও যেখানে কোনো ভুল খুঁজে পায়নি। এ বইয়ের ক্ষেত্র বিশেষে বিশুদ্ধ হাদীস থেকে কিছু তথ্য সন্নিবেশ করা হয়েছে। আর এজন্যই এটি এক অকাট্য ও নির্ভুল সংবাদ বাহক গ্রন্থ। আরো সতর্কতার জন্য দুইটি তাফসীর গ্রন্থ থেকে প্রায় হুবহু তথ্য, হুবহু বঙ্গানুবাদ এবং হুবহু তাদের ভাষা এখানে সযতেœ জমা করেছি। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে উভয় কিতাবের তথ্য একত্রিকরণ, পূর্বাপর মিলানো, ভাষার কাঠিন্য দূরীকরণ এবং বক্তব্যকে সহজ ও সাবলীল করার জন্য ভাষাগত সামান্য কিছু পরিমার্জন করেছি। তাফসীর দু’টো হলো:
ঈমানের ৬টি ভিত্তি; যার প্রথমটি হলো, আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস এবং শেষটি হলো মৃত্যুর পর পুনরুত্থান, অর্থাৎ আখেরাতের জীবন। যেহেতু বিষয়টি ঈমানের অঙ্গ সেহেতু এটা আমাদের প্রত্যেককে জানা-মানা ফরয। আর আশা করি, বইটি অধ্যয়নের পরে যেকোন কট্টর অমানুষও ভাল মানুষ হয়ে যাবে। এমন অগাধ বিশ্বাস নিয়ে আঠারো মাসে বইটির কাজ শেষ করি।
নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার আদিয়াবাদ ইউনিয়নের সিরাজনগর (নয়াচর) গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। মরহুম মোঃ চান মিয়া ও মরহুমা সালেহা বেগমের দ্বিতীয় সন্তান তিনি। উপজেলার শত বছরের গৌরবোজ্জ্বল আদিয়াবাদ হাইস্কুল থেকে ১৯৭৫ সালে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ফার্স্ট ডিভিশনে এসএসসি পাশ করেন। ১৯৭৫-৭৬ সেশনে ঢাকা কলেজে অধ্যায়ন এবং পরে ১৯৭৭ সালে নরসিংদী সরকারি কলেজ থেকে আইএসসি পাশ করেন। জগন্নাথ কলেজ (বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়) থেকে গ্র্যাজুয়েশন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ থেকে ফার্স্ট ক্লাশ পেয়ে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। প্রথম জীবনে তিনি স্কুল-কলেজের ছাত্র ও গণিতের শিক্ষক ছিলেন। ১৯৮১ সালে সৌদি বাদশাহ’র গৌরবময় শিক্ষাবৃত্তি নিয়ে মক্কা শরীফের উম্মুলকুরা ইউনিভার্সিটিতে গমন করেন। সেখানে তিনি এরাবিক ল্যাংগুয়েজ ইনস্টিটিউট ও অনার্স কোর্সে বিভিন্ন দেশের স্কলারদের নিকট দীর্ঘ দশ বছরকাল আরবী ভাষা, নাহু-ছরফ, তাফসীরুল কুরআন, হাদীস ও ফিক্হ শাস্ত্র অধ্যয়ন করেন। তাঁর শিক্ষকদের মধ্যে সৌদি আরবের সাবেক প্রধান বিচারপতি ও পবিত্র কাবা’র সম্মানিত ইমাম শাইখ ড. সালেহ বিন হুমাইদ ও কাবা’র আরেক সম্মানিত ইমাম ড. উমর আস্-সুবাইল রাহেমাহুল্লাহ অন্যতম। জনাব নূরুল ইসলাম দেশে ফিরে ১৯৯৬ সাল থেকে এশিয়ান ইউনিভার্সিটিতে ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগে অধ্যাপনায় রত আছেন। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সেমিনারে যোগদানের জন্য তিনি ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, শ্রীলংকা, থাইল্যান্ড, ভারত, আরব আমিরাত, সৌদি আরব ও মিশরসহ অনেক দেশ সফর করেন। ১৯৯৮ সাল থেকে অদ্যাবধি টিভি-চ্যানেল ‘এটিএন বাংলা’র প্রভাতের দারসে হাদীস অনুষ্ঠানের তিনি একজন নিয়মিত আলোচক। তাঁর সহধর্মিণীর নাম আঁখিনূর বেগম (এমএ ইসলামিক স্টাডিজ)। তিনি তিন ছেলে ও এক মেয়ে সন্তানের জনক। ইসলামের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তার রচিত গ্রন্থের সংখ্যা প্রায় ২০টি। তন্মধ্যে উলেখযোগ্য হলো- (১) কুরআন কারীমের মর্মার্থ ও শব্দার্থ (ত্রিশতম পারা), (২) বিশুদ্ধ তিলাওয়াত পদ্ধতি, (৩) বিশুদ্ধ পদ্ধতিতে ওযূ-গোসল, (৪) যেভাবে নামায পড়তেন রাসূলুলাহ [স] (৫) প্রশ্নোত্তরে জুমুআ ও খুৎবা, (৬) প্রশ্নোত্তরে যাকাত ও সদাকাহ, (৭) প্রশ্নোত্তরে রমযান ও ঈদ, (৮) প্রশ্নোত্তরে হজ্জ ও উমরা, (৯) উমরা কিভাবে করবেন?, (১০) প্রশ্নোত্তরে কুরবানী ও আকীকা, (১১) শুধু আলাহর কাছে চাই (দু‘আ-মুনাজাতের বই), (১২) উঁধ ইড়ড়শ রহ অৎধনর ইধহমষধ ঊহমষরংয, (১৩) আকীদা ও ফিক্হ (১ম থেকে ৫ম শ্রেণী), (১৪) চরিত্র গঠনের উপায়, (১৫) কবর কিয়ামাত আখিরাত।