কায়সুল হক-এর জন্ম : ২৯ মার্চ ১৯৩৩। ছাত্রাবস্থায় তাঁর সাহিত্য সাধনা শুরু। একটি মাত্র কাব্যগ্রন্থ প্রকাশের পরই কবিতার জন্য বাংলা একাডেমির পুরষ্কার পান (২০০১)। প্রকাশিত গ্রন্থ : শব্দের সাঁকো (১৯৭৪ : কবিতা), রবীন্দ্রনাথের নিরুপম বাগান (২০০১; প্রবন্ধ), স্বদেশ সংস্কৃতি ও রবীন্দ্রনাথ (২০০৪; প্রবন্ধ), সাহিত্য পত্রিকা ‘অধুনা’ ১৯৫৫ সালে রংপুর এবং পরবর্তীকালে ঢাকা থেকে প্রকাশিত পাক্ষিক ‘শৈলীর’ সম্পাদক হিসেবে সুধীজনের প্রশংসিত ব্যক্তিত্ব।
সাহিত্যের উদ্দেশ্য কি? এর জবাব বোধ করি কারও তরফ থেকে এক কথায় দেয়া সম্ভব নয়- না পাঠকের না লেখকের। প্রবন্ধের সবকিছুর বিশ্লেষণ অবশ্য আমরা খুঁজি। জীবনের সঙ্গে সাহিত্য সম্পৃক্ত। জীবন যাপনের যে সৌন্দর্য তার খোঁজ সাহিত্যই দিয়ে থাকে। আর সে কারণেই যে সমাজে সাহিত্যের পাঠক বেশি সে সমাজ শুভবোধের দিকে চালিত হওয়ার প্রয়াসে প্রণোদিত। সেখানে আলোর অংশটা যেন একটু বেশী অনুভূত হয়।
প্রবন্ধ রচনা যেমন মনন দাবি করে তেমনি আয়াস সাপেক্ষ। পন্ডিতজনের দর্শনসহ যাবতীয় যুক্তিবাদের চর্চায় যিনি নিরলস শ্রমিক, আসলে এ তাঁর কাজ। পান্ডিত্য জাহির করা প্রবন্ধকারের কাজ নয়। শুধু বক্তব্যকে রসের ভিয়েন সহযোগে করার মধ্যেই তার কৃতি।
নতুনের সন্ধানী না হতে পারলে আমরা সবার পেছনে পড়ে থাকবো। নতুনকে বরণ করার জন্য দু’বাহু বাড়ায়ে রাখতে হবে। জীবনদর্শন ও জীবনচর্চাকে এক মোহনায় মেলাতে হবে। সংকীর্ণতার উর্ধ্বে ওঠার ব্রত থাকতে হবে। এই বিশ্বাস ছাড়া ব্যক্তি ও সমাজের এগিয়ে যাওয়ার কোনও সহজ পথ নেই। গ্রন্থভুক্ত রচনাগুলি এ-ভাবনা থেকেই রচিত।
জন্ম : ২৯ মার্চ ১৯৩৩ কায়সুল হক পঞ্চাশের দশকের কবি এবং কবিতায় বিশেষ অবদানের জন্য ২০০১ সালে বাংলা একাডেমী তাকে সাহিত্য পুরস্কারে ভূষিত করে। তিনি ২০০০ সালে ‘ড, আসাদুজ্জামান সাহিত্য পুরস্কার’ লাভ করেন। তাঁর প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ : শব্দের সাঁকো ও ‘রবীন্দ্রনাতের নিরুপম বাগান। এবং প্রবন্ধ গ্রন্থ ‘স্বদেশ, সংস্কৃতি ও রবীন্দ্রনাথ’ ও ‘আলাের দিকে যাত্রা'। তাঁর সঙ্গে জীবনানন্দ দাশ, বুদ্ধদেব বসু, অন্নদাশঙ্কর রায়, নরেশ গুহ, আশরাফ সিদ্দিকী, আবদুর রশীদ খান, শামসুর রাহমান ও সুরজিৎ দাশ গুপ্তর পত্র বিনিময় হত। ইতিমধ্যে অনেকের পত্র বিভিন্ন পত্রিকায় মুদ্রিত হয়েছে। “তাঁরই কথা দিয়ে বলতে হয়, যেহেতু মানুষকে ভালবাসি, ভালবাসি এই পৃথিবী আর ভালবাসি নিজেকে। এই বিশ্বাসবােধের উপর কায়সুল হক কবিতা লিখতে শুরু করেছেন। সমস্ত মানুষের সুখ-দুঃখ থেকে নিজের সুখদুঃখকে আলাদা করে নয় একসঙ্গে বেদনার কথা সহজাত জীবন দিয়ে উপলব্ধি করেছেন এবং এই চেতনার মধ্য দিয়েই মানুষ মানুষের হৃদয়ের দরজায় গিয়ে কড়া নাড়ে। যেখানে অনুভব ধ্বনি হয়ে ওঠে সেখানেই কায়সুল হকের কবিতা।” -এই কথাগুলাে বলা হয়েছে ১৯৭০ সালে কলকাতা থেকে প্রকাশিত “স্বনির্বাচিত কবিতা সংগ্রহে। উক্ত কাব্যসংগ্রহে সাংস্কৃতিক অগ্রগতিতে কবির ভূমিকা সম্পর্কে তিনি বলেছেন : “যেহেতু কবিতা হৃদয় ও মননের যুগ্ম শিল্পধ্যান; অর্থাৎ বুদ্ধির সঙ্গে বােধির সমন্বয় সাধনই কবিতার কাজ। আর তাই কবিতাকে আমি মানববসনের শ্রেষ্ঠ ফসল হিসেবে চিহ্নিত করতে চাই। কবিতা পাঠকের মূল্যচেতনা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে এবং সংস্কৃতি' যদি হয় মানবমনের উৎকর্ষের পরিচায়ক তাহলে কবির ভূমিকা। সেখানে মুখ্য। মানবমনের উৎকর্ষের কথা বলেছেন কায়সুল হক। আর তাই প্রবন্ধ রচনার সময় তিনি সজাগ মনের পরিচয় বিধৃত রাকার কথা বিস্মৃত হন না। প্রবন্ধ পাঠকের মনের জাগরণ ঘটাবে-এটাই তিনি মনে রাখেন। তাঁর প্রবন্ধ পাঠককে পড়তে প্রলুব্ধ করে। যুক্তিনিষ্ঠ মন তৈরি করার প্রণােদন।।