"আমাদের আল্লাহ" বইটির লেখকের- 'দুটি কথা' অংশ থেকে নেয়াঃ আল্লাহ তাআলার বে-ইনতিহা শােকর, আমার প্রিয় ছােট্টমণিদের জন্য 'আমাদের আল্লাহ’ বইটি লেখার তাওফীক হলাে। ইচ্ছে ছিলাে অনেক দিন থেকে ছােট্টমণিদের জন্য তাদের বয়স, চিন্তা ও রুচি অনুসরণ করে কিছু লেখার, কিছু কাজ করার যা তাদের কোমল হৃদয়কে স্পর্শ করবে এবং হৃদয়ের গভীরে দয়াময় আল্লাহর প্রতি ভালােবাসার স্নিগ্ধ পবিত্র অনুভূতি সৃষ্টি করবে; যে ভালােবাসা শৈশব, কৈশাের, যৌবন ও বার্ধক্যের প্রতিটি স্তরে গভীর থেকে গভীরতর হতে থাকবে। সৃষ্টিজগতের পরতে পরতে আল্লাহ তা'আলা যে অপার বিস্ময় সাজিয়ে রেখেছেন কেউ যদি গভীর মনােযােগের সঙ্গে তা দেখে এবং অবলােকন করে তাহলে তার অন্তরে হাকীম, আলীম স্রষ্টা রাব্দুল আলামীন আল্লাহর প্রতি ভালােবাসা, কৃতজ্ঞতা ও কৃতার্থতা সৃষ্টি না হয়ে পারে না। এজন্যই রাব্বে কারীম তাঁর পাক কালামে বারবার বান্দাকে ডাক দিয়েছেন তাঁর সৃষ্টির অপার রহস্য সম্পর্কে চিন্তা করার জন্য। আল্লাহর সৃষ্টি সম্পর্কে বড়রা চিন্তা করবে বড়দের মত, ছােটরা চিন্তা করবে ছােটদের মত, আর একেবারে ছােট্টমণিরা, যাদের চিন্তার দিগন্তে মাত্র সূর্যোদয় হতে শুরু করেছে, তারা চিন্তা করবে তাদের মত করে; যেন পূর্বদিগন্তে উঁকি দেয়া শিশুসূর্যের কাঁচাকোমল আলাে, কিংবা বৃষ্টিভেজা মাটির আবরণ ভেদ করে বের হয়ে আসা নরম নাযুক অঙ্কুর। তবে শিশুহৃদয় থেকেই শুরু হওয়া উচিত সৃষ্টি সম্পর্কে চিন্তা করার এবং স্রষ্টাকে জানার চেনার ও ভালােবাসার অভিযাত্রা। আর শিশুদের চিন্তা শিশুদের মতই নিস্পাপ, স্নিগ্ধ, কোমল ও পবিত্র। কিন্তু সবসময় যে কথা বলে আসছি, সেটাই আবার বলতে হবে, অপরাধ আমাদের। ছােট্টমণিদের জন্য এপর্যন্ত বলতে গেলে আমরা কিছুই করিনি। সৃষ্টিজগতের রহস্য ও বিস্ময়ের কাছে তাদের ডেকে এনে বলিনি, এই দেখ গাছের পাতা! এই দেখাে ফুল ও ফল!! এই দেখাে ভােরের রাঙা সূর্যের মিষ্টি আলাে, পূর্ণিমার দুধে ধােয়া স্নিগ্ধ জোসনা!! তাদের সামনে কখনাে তুলে ধরিনি মেঘের কথা, রিমঝিম বৃষ্টির কথা, সবুজ বনের কথা, সাগর-নদী ও পাহাড়-পর্বতের কথা!! যদি বলতাম, বলতে পারতাম, তাদের কোমল হৃদয় আরাে কোমল হয়ে বড় হতাে। তারা অবাক হয়ে সব দেখতে এবং 'ফিতরত’ তাদের অজান্তেই কোন প্রশ্নের সুযােগ না দিয়েই তাদের নিয়ে যেতাে সৃষ্টিকে দেখার মাধ্যমে স্রষ্টার সান্নিধ্যে। বড়দের তাে অনেক প্রশ্ন! সােজা প্রশ্ন, বাঁকা প্রশ্ন; সরল প্রশ্ন, জটিল প্রশ্ন; শিশুরা প্রশ্ন জাগার আগেই সমাধান পেয়ে যেতাে, একটু বুঝেই অনেক উচ্ছ্বাস নিয়ে বলে উঠতাে, আল্লাহ কত ভালাে! আল্লাহর কত দয়া, কত মায়া!! শিশুর ভিতরে ঘুমিয়ে থাকা সেই ফিতরতকে একটু জাগ্রত করার, একটু পুষ্টি দান করার কথা কখনাে আমরা ভাবিনি। সময়ের ঝড় ঝাপটায় সেই ফিতরত একসময় শুকিয়ে যায়। ফলে চিন্তার জগতে দেখা দেয় বিচিত্র সব জটিলতা ও পঙ্কিলতা। আরাে বড় সমস্যা হলাে, শিশুদের জন্য যখনই আমরা কিছু লিখি, বুঝতেই চাই না, ওরা শিশু; শুধু শরীরেই নয়, হৃদয় ও মস্তিষ্কেও! ওদের চিন্তা-ভাবনা, অনুভব-অনুভূতি সম্পূর্ণ ওদের মত!! সুতরাং আমাদের কাছে ওদের আনা সম্ভব নয়, বরং কলম হাতে আমাদেরই যেতে হবে ওদের কাছে, ওদের মত শিশু হয়ে। বিষয়টি আমি বুঝি, কিন্তু আমারও দুর্বলতা, ঠিক শিশু হয়ে উঠতে পারি না। লিখতে বসে কলমের কালিতে ঠিক ওদের মত হাত-মুখ জামা-কাপড় মাখিয়ে ফেলতে পারি না, যেমন পারে আমার নাতি ও নাতিন। তবে চেষ্টা করছি সেই চেষ্টারই সামান্য ফসল কয়েক পৃষ্ঠার এই বইটি। যদি এতে শিশুহৃদয়ে ঈমান ও বিশ্বাসের এবং ভালােবাসা ও মুহব্বতের সামান্য কিছু ছোঁয়া লাগে, আর আল্লাহ মেহেরবান আখেরাতের নাজাতের জন্য কবুল করে নেন তাহলেই সবকিছু সার্থক। কোন মা, কোন বাবা, তার শিশুটির জন্য একটু ভেবেছি বলে যদি জন্য দু'আ করেন, কৃতার্থ হবাে। ছােট্টমণিরাও যদি বড় হয়ে ভাবে, বুড়াে মানুষটা আমাদের জন্য কলম ধরেছিলাে; এই ভেবে যদি দু'আ করে তাহলেই আমি ধন্য!! আল্লাহ সবাইকে উত্তম বিনিময় দান করুন, আমীন। বইটির যা কিছু সাজসজ্জা, তা আমার পুত্র মুহম্মদের। আজকের শিশুদের মতই একসময় সে শিশু ছিলাে। এরকম কিছু লেখা দিয়ে তার শিশুহৃদয়কে, তার শৈশবের চিন্তাকে পুষ্টি যােগাতে পারিনি, সে আফসােস থেকেই যাবে। তবে আল্লাহ যদি দয়া করেন, সব অপূর্ণতা দূর করে দিতে পারেন, অন্তরের অন্তস্তল থেকে সে প্রার্থনাই করছি তার জন্য এবং সবার জন্য। ভাই শামসুল আরেফীন, আমার কাছে তার পাওনা আছে ছােট্ট একটি ধন্যবাদ এবং বড় একটা জাযাকাল্লাহ! বেশ আগে তিনি, একমাত্র তিনি আমাকে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন এধরনের বই লিখতে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে কবুল করুন, আমীন। ওয়া মা যালিকা আলাল্লাহি বি আযীয ।