"সেরা সাত গোয়েন্দা উপন্যাস" বইয়ের ভিতরের গল্প সংক্ষেপ: হীরার চোখ : জটিল এক রহস্যের সমাধান করতে ওয়েস্ট ইন্ডিজে এসেছে তিন গোয়েন্দা কিশোর মুসা রবিন। সূত্র খুঁজে খুঁজে পৌঁছে গেল অদ্ভুত এক প্রবাল দ্বীপে, যেখানকার স্থানীয় লোকের বিশ্বাস করে, এই দ্বীপে শয়তানের বাস। গভীর রাতে দেখা দেয় এই শয়তান। যারা তার পুজো করে না, তাদের ধ্বংস অনিবার্য। কিন্তু বিশ্বাস করল না কিশোর। আর তার খেসারত দিতে হলো ভীষণভাবে। প্রবাল প্রাচীরের বাইরে খোলা সাগরের পানিতে কিলবিল করা মানুষখেকো হাঙরের ঝাঁকের মাঝে ডুবিয়ে দেয়া হলো তাদের বোট। রহস্য সমাধান তো দূরের কথা, প্রাণ বাঁচানোই দায় হয়ে পড়ল।
শয়তানের পাহাড় : আফ্রিকার ‘মাউন্টেইনস অভ দা মুন বা চন্দ্র-পাহাড়ে’ সাদা হাতির খোঁজে চলল কিশোর ও মুসা। আদিবাসীরা বলে শয়তানের পাহাড়। ওখানে বাস করে বজ্রমানব। বট গাছের মত বড়। হেঁটে যাওয়ার সময় মাটি কাঁপে। কণ্ঠে হাজার সিংহের গর্জন। চোখে জ্বলে নরকের আগুন। কাজেই, হাতি ধরতে পর্বতে যাওয়া মোটেও বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। কিন্তু বিশ্বাস করল না কিশোর-মুসা। হাড়ে হাড়ে টের পেল, আদিবাসীদের কথা অগ্রাহ্য করে কি মারাত্মক ভুলটা করেছে।
ম্যাজিক গেইম: আজব দাদুর বাড়ি, এমনিতেই এক ঝামেলার জায়গা। ঝামেলাটা বিপদে পরিণত হলো, যখন পুরানো খেলনার দোকান থেকে অদ্ভুত এক ‘ম্যাজিক গেইম’ কিনে আনল রবিন। তবে রবিনের কুকুরটা যখন খেলতে গিয়ে খানিকটা জেলির মত জিনিস খেয়ে ফেলল, শুরু হলো বিপত্তি।
আবার ম্যাজিক গেইম : ফিরে এল আবার ম্যাজিক গেইম। লক্ষ করল রবিন, আবার বাড়তে আরম্ভ সবুজ রঙের জেলির মত জিনিসটা। বাড়ছে! বাড়ছে! বাড়ছে! সেই সঙ্গে বাড়িয়ে চলেছে একটা গিনিপিগকে। অবশেষে যখন দৈত্যাকার প্রাণীতে রূপ নিল ছোট্ট প্রাণীটা, দিশেহারা হয়ে পড়ল সবাই।
তিন বন্ধুর অভিযান : কিশোর বন্ধুরা, আমি ফারুক বলছি। ইয়েলোভিলে থাকি আমরা। আমি, অঞ্জন আর ওয়াসিম। আমাদের সঙ্গে আছে রাকা ও ডগি। এই নিয়ে আমরা হলাম পাঁচ গোয়েন্দা। প্রশ্ন উঠল, কে আমাদের নেতা হবে? একমত হলাম, একটা রহস্য সমাধানে যে বেশি ভূমিকা রাখতে পারবে, তাকেই নেতা বলে মেনে নেব।
হারানো নেকলেস : ‘যাক, রহস্য একটা পাওয়া গেল শেষ পর্যন্ত,’ অঞ্জন বলল। ফারুক বলল। ‘তবে এটা সাধারণ রহস্য নয়। কোনখান থেকে শুরু করব, তা-ই বুঝতে পারছি না।’
গুপ্তধনের খোঁজে: পুরানো একটা দুর্গ দেখতে গিয়ে নতুন রহস্যের খোঁজ পেয়ে গেল তিন বন্ধু অঞ্জন ওয়াসিম ফারুক। খুঁজতে শুরু করল ওরা। ভয়ঙ্কর শত্রু লাগল পেছনে, কোনো কিছুই যাদের ঠেকাতে পারে না। তিন বন্ধুর জন্য এ এক বিরাট চ্যালেঞ্জ।
রকিব হাসান বাংলাদেশের সবচাইতে জনপ্রিয় ‘তিন গোয়েন্দা’ সিরিজের স্রষ্টা ও কিশোর-কিশোরীদের সেরা পছন্দের লেখকদের শীর্ষ তালিকার একজন। তাঁর মাধ্যমেই বাংলাদেশের কিশোর-কিশোরীরা গোয়েন্দা কাহিনি ও তিন গোয়েন্দা সিরিজের সাথে পরিচিত হতে থাকে। শুধু তাই নয়, তিনি বহু ক্লাসিক ও কিশোর রোমহর্ষক সিরিজের অন্যতম জনপ্রিয় লেখক। লেখালেখির দীর্ঘ ৫০ বছরে চারটি প্রজন্ম অতিবাহিত হলেও আজও তাঁর জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বি। মূলত তিনি নিজেকে আড়ালে রাখতে পছন্দ করেন বিধায় মিডিয়ায় তাঁর উপস্থিতি নেই বললেই চলে। তবুও প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে দেশ বিদেশে তাঁর লক্ষ লক্ষ পাঠকশ্রেণি রয়েছে। যাদের ছেলে-মেয়ে-নাতি-নাতনী এবং পরবর্তী প্রজন্মের কিশোর-কিশোরীদের কাছেও রকিব হাসান অত্যন্ত জনপ্রিয় লেখক। বর্তমান প্রজন্মের পাঠক-ভক্তদের কাছেও ‘তিন গোয়েন্দা সিরিজটি’ এবং ‘কিশোর, মুসা, রবিন’ চরিত্রটি অসম্ভব জনপ্রিয়। দেশের অন্যতম জনপ্রিয় ও কিশোর-কিশোরীসের সেরা পছন্দের এই গুণী লেখকের জন্ম কুমিল্লায়, ১৯৫০ সালে। মূলত এক সময়ে পাঠকের হাতে স্বল্পমূল্যে বই তুলে দিতে এবং নিত্য নতুন পাঠক সৃষ্টি করতে ‘পেপারব্যাক সংস্করণে’ প্রকাশিত স্বনামে-বেনামে তাঁর লেখা বহু বই তিন দশক ধরে বেস্টসেলার ও জনপ্রিয়তার শীর্ষে ছিল। আজও তাঁর প্রকাশিত বইগুলো সমান জনপ্রিয়তার শীর্ষে। সকল কিছুকে ছাপিয়ে তাঁর ‘তিন গোয়েন্দা সিরিজটি’ এবং ‘কিশোর, মুসা, রবিন’ চরিত্র কালজয়ী জনপ্রিয়তা লাভ করতে সক্ষম হয়েছে। স্বনামে-বেনামে ও ছদ্মনামে এই তিন ক্যাটাগরিতেই তাঁর জনপ্রিয়তায় কোন ছেদ পড়েনি। তিনি সকল ধরনের মিডিয়া ও প্রচার প্রচারণাকে এড়িয়ে চলতে পছন্দ করতেন বলে অত্যন্ত জনপ্রিয় এই লেখকের ফেসটি তেমন পরিচিত নয়। কিন্তু আমরা বাস্তবতায় দেখেছি যে, যখন কোন পাঠক একটু জানতে পেরেছেন যে, রকিব হাসান বইমেলায় অমুক প্রকাশনীতে আছেন, তখন একে একে নিমিষেই প্রচÐ ভীড়ের সৃষ্টি হতো। এমনকি পাঠকের ভীড়ে তাঁকে খুঁজে পাওয়া দায় হয়ে যেতো। এই গুণী লেখকের প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা বর্তমানে প্রায় পাঁচ শতাধিক। তাঁর লেখা প্রথম বই প্রকাশিত হয় ১৯৭৭ সালে, ছদ্মনামে। স্বনামে প্রথম প্রকাশিত বইটি ছিল অনুবাদগ্রন্থ, ব্রাম স্টোকারের ‘ড্রাকুলা’। এরপর অনুবাদ করেছেন জুল ভার্ন, জিম করবেট, কেনেথ অ্যান্ডারসন, মার্ক টোয়েন, রবার্ট লুই স্টিভেনসন, হেনরি রাইডার হ্যাগার্ড, ফ্রেড জিপসন, রেনে জুঁইঅ, এরিক ফন দানিকেন, ফার্লে মোয়াট, জেরাল্ড ডুরেল-এর মত বিখ্যাত লেখকদের অনেক ক্লাসিক বই। অনুবাদ করেছেন মহাক্লাসিক ‘অ্যারাবিয়ান নাইটস’ ও এডগার রাইস বারোজ- এর ‘টারজান’ সিরিজ। তাঁর লেখা সবচেয়ে জনপ্রিয় হয়েছে ছোটদের নিয়ে রচিত ‘তিন গোয়েন্দা’ সিরিজটি। এই সিরিজের তিনটি মূল চরিত্র ‘কিশোর-মুসা-রবিন’কে নিয়ে লিখেছেন আরও তিনটি সিরিজ ‘তিন বন্ধু’, ‘তিন কিশোর গোয়েন্দা’ ও ‘গোয়েন্দা কিশোর মুসা রবিন’। লিখেছেন ‘কিশোর গোয়েন্দা’ সিরিজ ‘খুদে গোয়েন্দা’ সিরিজ, জাফর চৌধুরী ছদ্মনামে ‘রোমহর্ষক’ সিরিজ এবং আবু সাঈদ ছদ্মনামে ‘গোয়েন্দা রাজু’ সিরিজ। এ ছাড়া কিশোরদের জন্য বেশ কিছু ভূতের বই ও সাইন্স ফিকশনও লিখেছেন তিনি। তাঁর লেখা কিশোর-কিশোরীদের দারুণভাবে আকৃষ্ট করে এবং সেরা বিনোদন যোগায়। আমরা এই গুণী ও অত্যন্ত জনপ্রিয় লেখকের সুস্থ জীবন ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি। মহান আল্লাহপাক আমাদের প্রত্যাশা পূরণ করুন। আমীন।