"বাংলাদেশে মাদ্রাসা শিক্ষার রাজনৈতিক অর্থনীতি" ফ্ল্যাপে লেখা কথা: বাংলাদেশে মাদ্রাসা শিক্ষার রাজনৈতিক-অর্থনীতি গবেষণা অতীতে হয়নি। আমরা মাদ্রাসা বিষয়ে যেসব নীতি-নির্দেশনা পেয়েছি তা খুবই যৎসামান্য, যদিও মানবসম্পদ তৈরির ক্ষেত্রে এসব যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। এই গ্রন্থে বিস্তৃত পরিসরে মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থার রাজনৈতিক-অর্থনীতির চালচিত্র তুলে ধরা হয়েছে। এখানে।ৎ বাংলাদেশে মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলাের মর্মকথা উপস্থাপন জরুরি যেসব বিষয় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে সেগুলাে হলাে: ছাত্র ও শিক্ষকসহ বিভিন্ন মাদ্রাসার ধরন অনুযায়ী মাদ্রাসার বৃদ্ধি এবং সময় পরিক্রমা; পাঠ্যক্রম; মাদ্রাসার ব্যবস্থাপনা কমিটির রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা; অর্থায়ন; মেয়েদের শিক্ষার মর্যাদা ও সংকীর্ণতা; ছেলেমেয়েদের মাদ্রাসায় পাঠানাে; কর্মসংস্থানের সুযােগসুবিধা; আধুনিক যুগে মাদ্রাসা শিক্ষা; মৌলবাদের বর্তমান উদ্বিগ্নতা এবং এরকম আরাে অনেক কিছু। মাদ্রাসা শিক্ষার চাহিদা, সরবরাহ, উপযােগ প্রভাব-অভিঘাত সম্পর্কে নির্মোহ এবং নিরপেক্ষ রাজনৈতিক অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ উপস্থাপন করা হয়েছে। মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থায় মুসলিম মনীষীদের উত্থান এবং বিকাশ বিশ্লেষণে স্পষ্ট বােঝা যায়মাদ্রাসা শিক্ষা উদ্ভবসূত্রে পশ্চাদমুখী ছিল না। রাজতন্ত্রসহ শােষকদের রাষ্ট্রতন্ত্র ও সরকার ব্যবস্থা জিইয়ে রাখার প্রয়ােজনে তা পশ্চাদমুখী হতে বাধ্য হয়। এই গবেষণাগ্রন্থটি মূলত অনুসন্ধানমূলক বিশ্লেষণের ওপর ভিত্তি করে অনেক চিন্তাউদ্রেককারী বিষয়ে ফলাফল প্রকাশ করে। উল্লেখযােগ্য কয়েকটি যেমন: বাংলাদেশে প্রতি ৩ জনের ১ জন মাদ্রাসা ছাত্র- এর ফলে এই শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষকদের নিয়ােগে বড় ধরনের ভারসাম্যহীনতা দেখা যায়। রাষ্ট্রের ব্যর্থতার কারণে দরিদ্র পরিবারের ছেলেমেয়েরা সাধারণ শিক্ষার পরিবর্তে মাদ্রাসায় ভর্তি হয়; মাদ্রাসার শিক্ষার (উভয় সংখ্যা এবং ছাত্র) বৃদ্ধি ইতিবাচকভাবে সেনা-স্বৈরাচার শাসনামলের সাথে সম্পর্কিত যা এটাই নির্দেশ করে যে, গণতন্ত্রের অভাব শিক্ষাব্যবস্থাকে বিকৃত করে। মাদ্রাসা শিক্ষায় বেকার ডিগ্রিধারীর সংখ্যা অনেক বেশি যা জাতীয় সম্পদের অপচয়, ধর্মভিত্তিক রাজনীতির উত্থান এবং জঙ্গিবাদের উর্বর ভূমি সৃষ্টির সহায়ক। বাংলাদেশে মাদ্রাসা শিক্ষার ব্যয় অত্যুচ্চ। পরিশেষে এটি বলা যায়, রাষ্ট্রের সংবিধানের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে দরিদ্র জনগােষ্ঠীকে সাধারণ শিক্ষা পাওয়ার সুযােগ করে দেয়া উচিত; সরকারের উচিত বর্তমান মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কার করা বিশেষ করে কওমি মাদ্রাসার ওপর, অধিক গুরুত্ব দিয়ে মানবসম্পদ গঠন বিষয়ে গভীর চিন্তা করা। শিক্ষাকে শেষবিচারে হতে হবে ধর্মনিরপেক্ষ, প্রগতিশীল এবং উদার গণতান্ত্রিক কল্যাণকামী রাষ্ট্রগঠন সহায়ক অন্যতম মাধ্যম।