"সম্পত্তি হস্তান্তর আইন" বইটির ভুমিকা থেকে নেয়াঃ সম্পত্তি হস্তান্তর আইনটি ১৮৮২ সনের ৪নং আইন। উহাতে স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তর সম্পর্কে আইনগত বিধান বিধৃত রহিয়াছে। এ আইনটি তৎকালীন অবিভক্ত ভারতবর্ষে প্রয়ােগ করা হয়। ১৯২৯ সনে আইনটির বেশ কিছু সংশােধন করিয়া যুগােপযােগী করা হয়। উক্ত আইনে পক্ষবৃন্দের কার্য দ্বারা সম্পত্তি হস্তান্তর সম্পর্কে বিধান করা হইয়াছে। সেই কারণে আদালতের ডিক্রী জারিতে সম্পত্তি বিক্রয় কিংবা সরকারী দাবি আদায় আইন অনুযায়ী নিলাম বিক্রয় এই আইনের আওতা বহির্ভূত রহিয়াছে। সম্পত্তি হস্তান্তর আইনটি পদ্ধতিগত আইনের অংশ বিশেষ। উহাতে ৮টি অধ্যায় এবং মােট ১৩৭টি ধারা রহিয়াছে। দেওয়ানী আদালতে অধিকাংশ মামলাসমূহের বিষয়বস্তু থাকে ভূ-সম্পত্তি বা জমাজমি। এই জমাজমিকে ঘিরিয়াই সুখ, দুঃখ এবং বিবাদ-বিসংবাদের সূচনা হইতে দেখা যায়। এমনকি খুন জখমও ভূ-সম্পত্তির কারণেই হইয়া থাকে। পৃথিবীতে সর্বোৎকৃষ্ট সম্পদ হচ্ছে মানব সম্পদ, তার পরেই আসে প্রাকৃতিক সম্পদ। আর প্রাকৃতিক সম্পদের মধ্যে ভূ-সম্পত্তি তথা ভূমি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সম্পত্তি ক্রয়, বিক্রয়, দান, রেহেন প্রভৃতি পদ্ধতিতে হস্তান্তর সম্পর্কে এই আইনে বিস্তারিত বিধান রহিয়াছে। সেইদিক থেকে আইনটির গুরত্ব অপরিসীম। বাংলা ভাষায় আইনটিকে সহজবােধ্য করিয়া প্রকাশ করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করিয়াছি। কেবল আইনের মূল কথাসমূহ প্রকাশ করিলেই যথেষ্ট হইবে না বিধায় বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের উচ্চাদালতসমূহের দুই হাজারেরও বেশি নজীর প্রাসঙ্গিকভাবে ব্যক্ত হইয়াছে। ইহা ছাড়া বিভিন্ন দেশের উচ্চদালতসমূহের নজীরসমূহ সংযােজনে গ্রন্থটির উৎকর্ষতা বৃদ্ধি পাইয়াছে ইহাতে সন্দেহ নাই। বর্তমান আইনটির সাথে ভূমি আইন, চুক্তি আইন ও নিবন্ধন আইন অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। তাই প্রাসঙ্গিকভাবে উক্ত তিনটি আইনের বিধান ক্ষেত্র বিশেষে উল্লেখ করা হইয়াছে। বাংলাদেশে ভূমি আইনের ব্যাপক সংশােধন করা হইলেও সম্পত্তি হস্তান্তর আইনের তেমন কোন গুরুত্বপূর্ণ সংশােধনী আনা হয় নাই। আমাদের দেশের আদালতসমূহের দৈনন্দিন কার্যক্রমে গ্রন্থটি সহায়ক হইবে। বিচারক, আইনজীবী এবং সম্পত্তি হস্তান্তর সম্পর্কে বিশদভাবে জানিতে ইচ্ছুক আইনের ছাত্র ও সচেতন নাগরিকদের সম্পত্তি হস্তান্তর সম্পর্কে গ্রন্থটি তাঁহাদের প্রত্যাশিত প্রশ্নের উত্তর দিতে সক্ষম হইবে বলিয়া আমার দৃঢ় বিশ্বাস।