লোক-প্রশাসন কি? এর দার্শনিক ভিত্তি কি? লোক-প্রশাসন চর্চায় বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশের প্রবাহ কোন দিকে অগ্রসর হচ্ছে? বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশে লোক-প্রশাসন জাতির প্রত্যাশা পূরণে কতটা সফলকাম হচ্ছে? বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে লোক-প্রশাসন চর্চা কি শুধু পশ্চিমা পন্ডিতদের চিন্তা নির্ভর হয়ে থাকবে? লোক-প্রশাসনের বিকাশে প্রাচ্য তথা এশিয়ার কি কোন অবদান নেই? পাশ্চাত্য ও প্রাচ্যের ঐতিহ্যগত ও সাংস্কৃতিক প্রার্থক্য কি আমাদেরকে দেশোপযোগী লোক-প্রশাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলার তাগিত দেয় না? মূলত: উপরিউক্ত প্রশ্নাবলীর উত্তর অনুসন্ধানের প্রচেষ্টা রয়েছে আলোচ্য গ্রন্থে সংকলিত বিভিন্ন নিবন্ধে। লেখক প্রফেসর আবদুন নূর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে লোক-প্রশাসন বিষয়ের বরিষ্ঠ শিক্ষক। পল্লী উন্নয়ন ও স্থানীয় সরকার বিষয়ে মাঠ পর্যায়ের গবেষণা এবং বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে তিন দশকেরও অধিককাল ধরে লোক-প্রশাসন চর্চার অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে গ্রন্থটি সংকলিত। বিভিন্ন সময়ে প্রশাসন বিষয়ের উপর রচিত লেখকের বিশ্লেষণধর্মী নিবন্ধাবলীকে : ক. প্রশাসনিক চিন্তাধারা; খ. লোক-প্রশাসনে মূল্যবোধ; গ. লোক-প্রশাসনে জবাবদিহিতা; ঘ. শিক্ষা ও মানব সম্পদ উন্নয়ন; এবং ঙ. পুস্তক পর্যালোচনা-এই পাঁচটি শিরোনামে সংগঠিত করা হয়েছে। গ্রন্থটি বিশ্ববিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানসমূহে রাজনীতি, অর্থনীতি, লোক-প্রশাসন ও উন্নয়ন বিষয়ক শিক্ষার্থী, গবেষক ও প্রশিক্ষণার্থীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ রেফারেন্স হিসাবে সমাদৃত হবে বলে বিশ্বাস। এছাড়াও স্বদেশ এবং উম্মার ভবিষ্যৎ নিয়ে যারা ভাবেন, জাতীয়তাবাদী চিন্তাবিদ ও আগ্রহী পাঠক বইটি পাঠ করে প্রশাসনিক জ্ঞান ও তার ইসলামী রূপায়ন সম্পর্কে পরিচ্ছন্ন ধারণা লাভ করতে সক্ষম হবেন।
প্রফেসর আবদুন নূর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে লোক-প্রশাসন বিভাগের বরিষ্ঠ শিক্ষক। তিনি আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় স্টাডি ফোরাম IASC (Islamic Administration Study Center)-এর প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক। তাঁর সম্পাদনায় Journal of Islamic Administration নামে একটি বার্ষিক জার্নালও প্রকাশিত হয়ে আসছে। প্রফেসর নূর ১৯৫০ সালে চট্টগ্রামের রাউজান থানায় এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি ১৯৬৬ সনে কর্ণফুলী (প্রজেক্ট) হাই স্কুল হতে এস.এস.সি., ১৯৬৮ সনে চট্টগ্রাম সরকারী কলেজ হতে এইচ.এস.সি., ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে ১৯৭২ সালে রাষ্ট্র বিজ্ঞানে বি.এ. অনার্স এবং ১৯৭৪ সনে লোক-প্রশাসনে মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করেন। ১৯৭৫ হতে ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত লেখক বগুড়া পল্লী উন্নয়ন একাডেমীতে সহযোগী অনুদেষ্ঠা হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৭ সালের অক্টোবর মাসে তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগে প্রভাষক পদে যোগদান করেন এবং ১৯৯২ সালে লোক-প্রশাসনের প্রফেসর ও ২০০০ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে সিলেকশন গ্রেড প্রফেসর পদে পদোন্নতি লাভ করেন। ইতোমধ্যে লেখক A/D/C (New York) ফেলো হিসাবে University of Malaya হতে MPA ডিগ্রি অর্জন (১৯৮৪) করেন। তাঁর MPA থিসিসের বিষয়বস্তু ছিল: ‘Rural Local Government Finance in Bangladesh’। এছাড়াও তিনি British Council Fellow হিসাবে ১৯৮৭ সালে London School of Economics (LSE)-তে গমন করেন এবং “Local Government in Britain” বিষয়ে গবেষণাকর্ম পরিচালনা করেন। শিক্ষকতা ও গবেষণা ছাড়াও প্রফেসর নূর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে লোক-প্রশাসন বিভাগের চেয়ারম্যান, শাসসুন্নাহার হলের প্রভোস্ট, World University Servie (WUS)-এর সেক্রেটারী, সাভারস্থ বাংলাদেশ লোক-প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের বোর্ড অব গভর্ণরস- এর সদস্য এবং বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট ও ফাইন্যান্স কমিটির সদস্য হিসাবে বহুমুখী প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেন। একজন নিষ্ঠাবান গবেষক হিসাবে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক জার্নালে তাঁর বহু গবেষণাধর্মী নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। তিনি আন্তর্জাতিক স্থানীয় সরকার কর্তৃপক্ষ (IULA), আন্তর্জাতিক ইসলামী দর্শন সমিতি, বাংলাদেশ সমাজ বিজ্ঞান পরিষদ এবং বাংলাদেশ রাষ্ট্রবিজ্ঞান সমিতিসহ দেশের ও বিদেশের বহু পেশাজীবী সংগঠনের একাডেমিক ও প্রকাশনা কার্যক্রমের সাথে জড়িত। ভারতের আলীগঢ় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা, রাজশাহী ও চট্টগ্রামসহ বহু বিশ্ববিদ্যালয়ের এম.ফিল ও পি.এইচ.ডি গবেষণাকর্মের তত্ত্বাবধায়ক ও পরীক্ষকের দায়িত্বও তিনি পালন করে আসছেন। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থসমূহের মধ্যে রয়েছে : স্বাধীনতার ঘোষণা ও বাংলাদেশ (১৯৯২); Social Justice in Bangladesh (১৯৯১); মুক্তিযুদ্ধের চেতনা (১৯৯৩); প্রশাসনিক স্বেচ্ছাচারিতা প্রতিরোধে অম্বুডস্ম্যান (২০০১); ঘুম অপেক্ষা প্রার্থনা শ্রেয় (১৯৯৪); এবং Social Justice and Human Development (২০০৭)।