লেখকের কথা ইসলাম চিরসত্য ও অনিঃশেষ বাস্তবতার ধর্ম। মানবতা রক্ষণের এক সূতিকাগার। মানুষের ইহকালীন ও পরকালীন সার্বিক কল্যাণের কেন্দ্রবিন্দু। ইসলাম এসে সমাজের নােংরামি দূর করে সমাজকে দিয়েছে সঠিক দিশা। কুফর-শিরকের অন্ধকার থেকে বের করে মানুষকে তাওহীদ ও রিসালাতের শ্বেত-শুভ্র পােশাক পরিয়েছে। সমাজের যাবতীয় অনাচারের মূলােৎপাটন করে শান্তি ও সাম্যের নিষ্কলুষ পরিবেশ কায়েম করেছে। নির্লজ্জ ও গােমরা সমাজকে শালিনতা দান করেছে। খুন-খারাবী, জুলুম-নির্যাতন ও হিংসা-বিদ্বেষ দূর করে ভ্রাতৃত্ব ও মমতাবােধ, পরস্পর সহানুভূতি ও সমবােধ এবং ন্যায়ইনসাফের এক শান্তিময় সমাজ উপহার দিয়েছে। মানব সমাজের ছােট-খাট স্বভাবজাত বিষয়গুলােও সঠিকভাবে। পরিচালনার শিক্ষা ইসলাম দিয়েছে। যা অন্য কোনাে ধর্ম দেয়নি। এটাই স্পষ্ট প্রমাণ বহন করে যে, একমাত্র ইসলামই শান্তিপূর্ণ সফল সমাজ নির্মাণের চাবিকাঠি। ইসলামে নারীর বিষয়টি এত গুরুত্বপূর্ণ যে, নারীর অধিকারগুলাে সর্বক্ষেত্রে আলাদা করে বলেছে। তাদের জীবনের প্রত্যেকটা পর্বের আলাদা ইজ্জত দান করেছে। মা হিসাবে আলাদা মর্যাদা। বােন হিসাবে আলাদা সম্মান। মেয়ে হিসাবে আলাদা অধিকার। স্ত্রী হিসাবে ভিন্ন অধিকার ও সম্মান। যা অন্য কোনাে ধর্ম দেয়নি। ইসলাম নারীকে দুনিয়া-আখেরাত উভয় জগতেই মর্যাদার আসনে সমাসিন করেছে। পক্ষান্তরে অন্য ধর্মগুলাে নারীকে দুনিয়া-আখেরাত দু’জাহানেই বঞ্চিত করেছে। সব ইজ্জত-সম্মানের সাথে সাথে মুসলিম নারীদের আরেকটি গৌরবের বিষয় হলাে, তাদের কয়েকজন সদস্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রী হওয়ার সুবাদে পুরা মুসলিম জাতির রুহানী মা হয়ে গেলেন। কুরআনে কারীমে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-(তাঁর স্ত্রীগণ হযরত আয়শা রা.-এর ১০০ ঘটনা উম্মতের মা) কুরআন-হাদিসে বহু জায়গায় নবীপত্নী উম্মুল মুমিনীনদের ফাযায়েল-মানাকিব-এর আলােচনা হয়েছে। কিন্তু তাদের মধ্যে আম্মাজান আয়শা রাযিয়াল্লাহু তায়ালা আনহার বর্ণনা এসেছে বেশি। যার কারণে তাদের মধ্যে হযরত আয়শা রাযিয়াল্লাহু তায়ালা আনহার মর্যাদা সবার উর্ধ্বে। সবার উর্ধ্বে তার স্থান হওয়ার পিছনে কয়েকটি কারণও রয়েছে। প্রথমত তিনি নবীপত্নী। দ্বিতীয়ত তার যিন্দিগিটা মুসলিম নারীদের জীবনের জন্য পরিপূর্ণ একটি মডেল। একজন মুসলিম রমণী কীভাবে জীবন যাপন করবে? কোন্ কোন্ গুণাবলি অর্জন করবে? দাম্পত্যজীবন কেমন হবে? স্বামীর সাথে কেমন সম্পর্ক রাখবে? জীবনের সুখ-দুঃখ মিশ্রিত দিনগুলাে কীভাবে কাটাবে? স্বামীর বাড়ির লােকদের সাথে কোন ধরনের আচার-ব্যবহার করবে? তা'লীমি ও আমলী ময়দানে নারীর দীনি খেদমতে কেমন চেষ্টা-সাধনা থাকা চাই? এ সকল বিষয়ের জন্য আয়শা রাযি.-এর জীবন একটি উত্তম আদর্শ। মুসলিম নারীরা তার অনুসরণ করে তারাও সফল জীবন লাভ করতে পারবে। কিন্তু শত আফসােস, আজ কোনাে নারী আয়শা রাযিয়াল্লাহু তায়ালা আনহার জীবনকে আদর্শরূপে গ্রহণ করছে না। বরং মুসলিম সমাজে, ঘরে, সর্বত্র আজ পশ্চিমা অপসংস্কৃতির চর্চা চলছে। ভয়াবহ এ অপসংস্কৃতির পিছনে আজ পুরা মুসলিম জাতি দৌড়াচ্ছে। বিষাক্ত এ নীতি গােগ্রাসে গিলছে এবং নিজের অজান্তেই জীবনকে দু’জাহানের ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। তাই মুসলিম জাতির এ ভয়ানক পরিস্থিতিতে প্রয়ােজন হলাে, সমাজের সর্বস্তরে ইসলামি জীবন-ব্যবস্থার উদাহরণ পেশ করা। এ উদ্দেশ্যেই আমাদের এ ক্ষুদ্র প্রয়াস। মুসলিম রমণীদের সামনে পূর্বসূরী মুসলিম রমণীদের পবিত্র জীবনাচার এবং তাদের কাজ-কর্মের বিবরণ তুলে ধরা। যেন তাদের জীবনী পাঠ করে নিজেদের জীবনকে ইসলামি ধারায় পরিচালনা করতে সক্ষম হয়। “ আয়শা রাযিয়াল্লাহু তায়ালা আনহার একশত ঘটনা” বইটি এই ধারাবাহিকতারই অংশ বিশেষ। এর মধ্যে হযরত আয়শা রা.-এর ১০০ ঘটনা আয়শা রাযিয়াল্লাহু তায়ালা আনহার পবিত্র জীবন ও কর্মের বিবরণ এমনভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে, যা পাঠ করলে সুন্দর জীবন লাভের সাথে ঈমানী শক্তিও বৃদ্ধি হবে ইনশাআল্লাহ। অবশেষে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি সেই মেহেরবান উস্তাদ; হযরত মাওলানা নাজিম আশরাফ সাহেবের। যার নির্দেশে এ কাজ শুরু করা হয়েছে। তার দিক-নির্দেশনা এ ক্ষেত্রে বিরাট ভূমিকা রেখেছে। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তার দোয়া বান্দার শামেলে হাল হয়েছে। আল্লাহ তা'য়ালা তাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন। একই সাথে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি প্রিয় ভাই মাওলানা মুহাম্মাদ ওয়াইস সাহেবের। যিনি আমাকে এ কাজে সৎ পরামর্শ দিয়ে সহযােগিতা করেছেন। আল্লাহ তা'য়ালা তার ইলম ও আমলে বরকত দান করুন, আমীন। পরিশেষে পাঠকবর্গের কাছে নিবেদন এই যে, আমি আমার অযােগ্যতা ও পুঁজিহীনতার কথা স্বীকার করছি। সে হিসাবে আমার এ কাজটি নগণ্য। বিষয়-বস্তুর পূর্ণতা দানে কমতি হয়েছে। যদি এতে ভালাে কিছু পাওয়া যায় তবে তা আল্লাহ তায়ালার মেহেরবানি এবং মুরুব্বিদের দোয়ার ফলাফল। আর। কোনাে ভুল-ভ্রান্তি পাওয়া গেলে শয়তানের ধোকা হিসাবে আমার দুর্বলতা মনে করবেন। আল্লাহ তা'য়ালা এ অসম্পূর্ণ। চেষ্টাকে কবুল করেন এবং তার ফায়দা ব্যাপক করেন। আমার এবং আমার পিতা-মাতা ও ওস্তাদদের নাজাতের অসিলা বানান, আমীন।