"যদিও হাওয়া উল্টোপাল্টা" বইয়ের ফ্ল্যাপের লেখা: রণেশ দাশগুপ্ত ১৯৬৩ সালে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বেরিয়ে আসার পর তার সঙ্গে এ বইয়ের সম্পাদক মতিউর রহমানের প্রত্যক্ষ পরিচয় ঘটে সে সময়ের ছাত্ররাজনীতির সক্রিয় কর্মী বা সমমনা তরুণদের ওপর রণেশ দাশগুপ্তের। বুদ্ধিবৃত্তিক প্রভাব ছিল ব্যাপক। তাদের সব ধরনের উদ্যোগ ও কাজে ছিল তার পরামর্শ-অনুপ্রেরণা। তার জ্ঞানচর্চার প্রবণতা ছিল বহুমুখী। দেশ-বিদেশের শিল্প-সাহিত্য, চলচ্চিত্র, রাজনীতি—সবই ছিল তাঁর। পঠনপাঠনের অন্তর্ভুক্ত কবিতা, গল্প, উপন্যাস, চলচ্চিত্র প্রভৃতি নিয়ে সমালােচনমূলক লেখাতে ছিল তার সমান দক্ষতা। অনুবাদেও ছিলেন পারদর্শী। ফলে রণেশ দাশগুপ্তের রচনা পাঠককে সমৃদ্ধ করত। ১৯৭৫ সালে তিনি কলকাতায় চলে যান। আশি ও নব্বইয়ের দশকে মতিউর রহমান চিকিৎসাসহ নানা প্রয়ােজনে কলকাতায় গেলে প্রতিবারই তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন। ফেরার সময় বলে আসতেন, কলকাতায় আপনার যেখানে যে লেখা বেরােবে, সেগুলাের একটি করে কপি রেখে দেবেন। আমি পরে এলে আপনার কাছ থেকে নিয়ে যাব।' কখনাে কখনাে বাংলাদেশ থেকে যাওয়া পরিচিত কারও সঙ্গে কলকাতায় দেখা হলে তিনি তাদের হাত দিয়েও মতিউর রহমানের কাছে লেখা পাঠাতেন। এভাবে ১৯৮৬ সাল থেকে ১৯৯২ পর্যন্ত তিনি যেসব লেখা এ বইয়ের সম্পাদককে দিয়েছেন, সেসব নিয়েই এই সংকলন। বরাবরের মতাে এই সংকলনেও পাঠক বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী চিন্তাশীল ও প্রাজ্ঞ রণেশ দাশগুপ্তকেই খুঁজে পাবেন।
রণেশ দাশগুপ্ত জন্ম ১৯১২ সালের ১৫ জানুয়ারি ভারতের ' আসামে। পৈতৃক নিবাস বাংলাদেশের মুন্সিগঞ্জ। ভারতের বাঁকুড়া জিলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিক ও কলকাতার সিটি কলেজ থেকে আইএসসি পাস করেন। ব্রজমােহন কলেজে অধ্যয়নকালে কমিউনিস্ট রাজনীতিতে যুক্ত হন। ১৯৩৮ সালে গড়ে তােলেন প্রগতি লেখক সংঘ ঢাকা পৌরসভার নির্বাচনে ' রণেশ দাশগুপ্ত কমিশনার নির্বাচিত হন। ১৯৫৮ সালে বামপন্থী রাজনীতির কারণে প্রায় নয় বছর জেলে কাটান। দৈনিক সংবাহ দেশের প্রগতিশীল পত্রপত্রিকায় কাজ করেছেন। ১৯৭৫-এ কলকাতায় গিয়ে আর ফেরেননি। সাংবাদিকতার পাশাপাশি তিনি নিয়মিত সাহিত্যচর্চা করেছেন। উল্লেখযােগ্য বই উপন্যাসের শিল্পরূপ, শিল্পীর স্বাধীনতার প্রশ্নে আয়ত দৃষ্টিতে আয়ত রূপ, আলাে দিয়ে আলাে জ্বালা, রহমানের মা ও অন্যান্য। অনুবাদ : ফয়েজ আহমেদ ফয়েজের কবিতা। মৃত্যু ৪ নভেম্বর '১৯৯৭, কলকাতায়। ১৯৯৮ সালে তাকে মরণােত্তর একুশে পদক দেওয়া হয়।