মা। এই ক্ষুদ্রতম শব্দটাই দুনিয়ার বৃহত্তম আবেগ। কেবল আবেগ নয়, বরং মায়া মমতা আর ভরসার আধার। প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মগুলা স্রষ্টার পরেই মা-বাবার সম্মান নিশ্চিত করছে। ইসলামে মায়ের পায়ের নিচে বেহেস্ত। হিন্দু ধর্মেও জননীকে স্বর্গের চাইতে গরীয়সী বলা হইছে। ইসলামে এও বলা হইছে : আল্লাহ যদি তার পর কাউকে সেজদার অনুমতি দিতেন তবে সন্তানকে সেক্ষেত্রে তার মা-বাবাকেই দিতেন। এইখানেই শেষ নয়, মহানবী ‘মা মা মা'—এইভাবে তিনবার মা উচ্চারণের বাদে চতুর্থবার বাবা উচ্চারণের মাধ্যমে মায়ের উচ্চমর্যাদা ও মর্তবাকে আরাে পষ্ট করছেন। মায়ের সঙ্গে সন্তানের সরাসরি নাড়ির সংযােগ। এই সংযােগ কেবল জাগতিক নয়, বরং অপরূপ আধ্যাত্মের মহিমায় উদ্ভাসিত। মানব সমাজে মা এক অবিকল্প অভিধা। এই মাকে নিয়াই দুনিয়ায় তাবৎ ভাষায় রচিত হইছে নানা প্রকরণের মহৎ সাহিত্য। সম্ভবত সেই কথা মাথায় রাইখাই দুই বছর আগে ইনভেলাপ পাবলিকেশন্স-এর পক্ষে অনুজপ্রতিম কবি হাসনাইন ইকবাল মাকে নিয়া একটা সংকলন করার প্রস্তাব দেয়। সানন্দচিত্তে রাজি হই। কিছু দিন পরই বুঝতে পারি কী কঠিন এক কাজ হাতে নিছি। কিন্তু তত দিনে আর পিছে ফেরা সম্ভব ছিল না। ফেসবুক এবং অন্যান্য মাধ্যমে সংকলনের খবর প্রচারিত হয়। এই ঘােষণায় প্রচুর লেখা পাওয়া যায়। এর বেশির ভাগ তরুণদের লেখা। তারুণ্যে সমস্যা ছিল না। সমস্যা হইল অনেক লেখাই খুব আনাড়ি হাতের। শিল্পের মাপে যা উতরায় না। অতঃপর আবারাে ঘােষণা, আবারাে অনেক লেখা প্রাপ্তি। তবে বেশ কিছু ভালাে লেখাও পাই দুই যাত্রায়। নিজেরাও অনেক লেখা সংগ্রহ করি। ছড়াকার কাদের বাবু ও কবি রফিক লিটন এই সংগ্রহে সহায়তা করে। সংকলন পরিকল্পনা অনুযায়ী বাংলা ভাষাসহ প্রাপ্তি সাপেক্ষে বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় মাকে নিয়া রচিত লেখাও জোগাড় করতে থাকি। এই কাজে যখন যেভাবে চাইছি হাসনাইন ইকবাল সাধ্যমতাে সহায়তা দিছে। মা যেমন এক অনন্ত আবেগ, তেমনি এই সংকলনও আমগাে আবেগাপ্লুত করছে। মাকে নিয়া সংকলনে স্বাভাবিকভাবেই সাধ ছিল অনেক। তয় সাধ্যের সীমাবদ্ধতা সাধ পূরণে বাধ সাধছে। তারপরও ছড়া কবিতা গল্প উপন্যাস স্মৃতিগদ্য আর ফিচারে মায়ের এপিক অবয়ব যথাসম্ভব মূর্ত কইরা তুলতে চেষ্টা করছি। সংকলনের লেখক সূচির ক্ষেত্রে যথাসম্ভব বয়সকে প্রাধিকার দিছি। কিছু টেকনিক্যাল কারণ কিম্বা তথ্যের অপর্যাপ্ততায় হয় তাে সেই লক্ষ্য শতভাগ অর্জন করা সম্ভব হয় নাই। যাই হােক, বিশাল সংকলনের সীমাবদ্ধতাজনিত ত্রুটিগুলাকে সবাই ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। এই কাজ কতটা সুন্দর হইল জানি না, তবে এইটা জানি এর চাইতেও সুন্দর কাজ হইল যাপিত জীবনে মাকে যথার্থ সম্মানের সঙ্গে দেখভাল করা।
জগলুল হায়দার। জন্ম তারিখ ও স্থান : ৮ অক্টোবর ১৯৬৫, শুক্রবার। জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জে। বেড়ে উঠেছেন : ঢাকা, নরসিংদী, গাজীপুর ও সেকেন্ড হোম ভৈরব শহরে। মা : জাহানারা বেগম। বাবা : মুক্তিযোদ্ধা প্রকৌশলী জি. কে. এম. আব্দুল লতিফ। প্রথম স্কুল : দাদার প্রতিষ্ঠিত বড়খাল সরকারি প্রাইমারি স্কুল। পরিবার : স্ত্রী ও দুই ছেলেমেয়ে। প্রথম বই : চুম্বক (অণুকাব্য), ১৯৯৩। প্রথম ছড়ার বই : বাংলার মুখ বাংলার মিথ, ২০০৩। প্রকাশিত বই : ৬০টি। লেখালেখির অন্য ক্ষেত্র : কবিতা, রম্য, প্রবন্ধ, গল্প, নাটক ও গান। অন্য পরিচিতি : বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনের তালিকাভুক্ত গীতিকার। সংগঠন : পরিচালক, বাংলাদেশ ছড়া একাডেমি। সম্পাদক, ম্যাজিক লণ্ঠন। প্রধান সমন্বয়ক, শিল্পঘর। পরিচালক, ভিশন থিয়েটার। পুরস্কার : রেবতী বর্মণ সম্মাননা স্মারক, শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম স্মৃতি পদক, পদক্ষেপ সাহিত্য পুরস্কার, শ্রীপুর সাহিত্য পরিষদ পুরস্কার।