"মজার অঙ্ক ও গণিত অলিম্পিয়ার্ড" বইটির ভূমিকা থেকে নেয়াঃ বেশির ভাগ লােকের কাছে অঙ্ক মানে মাথাধরা। কিছু কিছু লােক আছেন যাদের কাছে অঙ্ক বা গণিত হলাে মাথাধরার ওষুধ। অর্থাৎ, যা একের কাছে বিষ, অন্যের কাছে তাই আবার অমৃত। ডক্টর জেকিল আর মিস্টার হাইডের দ্বৈতরূপের জন্য অঙ্কের বিষয়টি মানুষের কাছে রহস্যরােমাঞ্চনার কুহেলি ঘেরা থেকে গেছে। অথচ, স্টিভেনসনের ডক্টর জেকিল চরিত্রটি অতি , সভ্য, ভদ্র; তিনি উদার, মানব-হিতৈষী এবং অন্বেষণের পথযাত্রী। কোনাে এক অজ্ঞাত রাসায়নিক বিক্রিয়ায় এই মানুষটি দানবের মতাে ভয় জাগিয়ে দেয়; যে দানবিক ভীতিটি প্রথম দিকে সাময়িক হলেও ধীরে ধীরে ভদ্র-সভ্য-নম অন্বেষণের যাত্রীটিকে হটিয়ে পুরােপুরি আসন পেতে বেশ বসতে পারে! অঙ্কের আনন্দ-মজাটি মানুষের কাছে প্রকাশিত না হয়ে, কোনাে এক প্রক্রিয়ায় ভয় হয়ে দেখা দেয়! ছােটবেলা থেকেই আমাদের অনেকের মনে অংক সম্পর্কে একটা ভীতি জন্মায়। তার প্রধান কারণ আমাদের বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থায় অংক সম্পর্কে আগ্রহ জাগানাের চেষ্টার অভাব। পাশ্চাত্য দেশগুলােতে স্কুলের ছেলেমেয়েদের প্রায় প্রথম থেকেই অক্ষর পরিচিতির পরে তাদের মানসিক গঠন এবং চিন্তার পূর্ণতা অনুযায়ী অঙ্ক শিক্ষার প্রাথমিক ভাগ শুরু হয়ে যায়। নীরস কঠিন শক্ত বিরক্তি উৎপাদক একঘেয়ে অঙ্কগুলাের বদলে সুন্দর সুন্দর খেলা ও আলােচনার মাধ্যমে অঙ্ক শেখানাে হয়। একবার শিক্ষার্থীর অঙ্ক সম্পর্কে যেমন আগ্রহ এসে গেলে সে নিজে থেকে অঙ্কের কঠিন বেড়াজাল ছিন্ন করে তার অন্তর্নিহিত রসটুকু সানন্দে গ্রহণ করে অন্যদিকে তেমন অঙ্ক সম্পর্কে ভীতি একবার জন্মে গেলে কোনােক্রমেই সেটাকে কমানাে সম্ভব হয়ে ওঠে না বরং পুরাে গণিত বিষয়টাই তার কাছে কঠিন ও একঘেয়ে হয়ে ওঠে। অনেক শিক্ষাবিদ ও ব্যক্তি এখনও মনে করেন যে অঙ্ক একটা নীরস বিষয়। সত্য কথা বলতে কি সেটা একদমই ঠিক নয়। অঙ্কের পরিধি এতই বিশাল যে যারা স্কুল কলেজের প্রাথমিক পাঠ শেষ করে উচ্চশিক্ষায় ব্রত কিংবা কর্মজীবনে রত তাঁদের অঙ্কের নানান মজা বা খেলা নিয়ে সুন্দর সময় কাটানাের সুযােগ আছে। আজ ঐ ধরনের কিছু অঙ্কের খেলা বা মজা নিয়ে আলােচনা করা হবে। তাছাড়া গণিত হলাে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ভাষা। এ ভাষা না জানলে কোনাে কিছুই জানা যায় না। সুতরাং, গণিত চর্চা অত্যাবশ্যকীয় একটি বিষয়। বর্তমানে সারাদেশে নিয়মিত গণিত অলিম্পিয়ার্ড অনুষ্ঠিত হবার জন্য শিক্ষার্থীদের মধ্যে গণিত সম্পর্কে বিশেষ আগ্রহ তৈরি হয়েছে যার প্রমাণ বই মেলাতে ইদানিং দেখা যাচ্ছে গণিত সম্পর্কে বই পত্র খোঁজার মাধ্যমে। গণিত অলিম্পিয়ার্ড লড়তে হলে গণিত চর্চা ও অনুশীলন করা অতীব জরুরী। মুখস্থ বিদ্যা এখানে কোনাে কাজে আসে না। তাই শিক্ষার্থীদের উচিত বিগত বছরগুলাের গণিত অলিম্পিয়ার্ডের প্রশ্ন উত্তরগুলাে অনুশীলন না করে গণিতের বিভিন্ন বিষয়ে দক্ষতা তৈরির চেষ্টা করা। আর সে জন্য প্রয়ােজন গণিত সম্পর্কে জানা ও বােঝা। আমাদের দেশে গণিত অলিম্পিয়ার্ডে সাধারণত যে ধরনের প্রশ্ন হয়ে থাকে তা খুবই সহজ সরল কিন্তু আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়ার্ডে যে ধরনের প্রশ্ন আসে তা রীতিমতাে কঠিন তবুও অনেকে সেগুলাে সম্পূর্ণটারই সঠিক সমাধান করে থাকে। এখানে দেশ বিদেশের বিভিন্ন স্থানে অনুষ্ঠিত গণিত অলিম্পিয়ার্ডের কিছু প্রশ্ন ও তার সমাধান তুলে ধরা হলাে শুধুমাত্র চর্চার জন্য বা জানার জন্য। সৌমেন সাহা বসিলা, মােহাম্মদপুর, ঢাকা জুন, ২০১৭ ইং
সৌমেন সাহা ১৯৮০ সালের ২২ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের খুলনা জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর শৈশব কেটেছে এই জেলাতেই। খুলনার স্বনামধন্য সেন্ট যোসেফ হায়ার সেকেন্ডারি স্কুল থেকে মাধ্যমিক ও সরকারি সুন্দরবন আদর্শ মহাবিদ্যালয় থেকে তিনি উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। এরপর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সরকারি পি.সি. কলেজ থেকে পদার্থবিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। বিজ্ঞান , প্রযুক্তি ও গণিতের প্রতি তাঁর প্রবল আগ্রহ ছিল শুরু থেকেই। সেই আগ্রহ থেকেই পাড়ি জমান সুদূর ইংল্যান্ডে। সেখানকার লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে লন্ডন কলেজ অব বিজনেস ম্যানেজমেন্ট এন্ড কম্পিউটিং বিভাগ থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে ডিপ্লোমাসহ বি.এস.সি. ডিগ্রি লাভ করেন। সৌমেন সাহা নিয়মিত বাংলাদেশের বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায়, বিশেষত বিজ্ঞান বিষয়ে লেখালেখি করেন। বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক, মাসিক ও সাপ্তাহিক পত্রিকায় তাঁর প্রকাশিত লেখার সংখ্যা প্রায় দুই শতাধিক। তাঁর পেশাগত জীবনেও তিনি বিজ্ঞান গবেষণার সাথে জড়িত। খুলনার ঐতিহ্যবাহী প্রাণিক বিজ্ঞানাগার খুলনার কেন্দ্রীয় শাখার সাধারণ সম্পাদক হিসেবে কাজ করছেন। জাতীয় বিভিন্ন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রকল্পের উদ্ভাবনের কারণে তিনি পুরস্কৃতও হয়েছেন। পাঠক সমাদৃত সৌমেন সাহা এর বই সমূহ হলো ‘প্রাচীন ভারতীয় গণিত ও জ্যোতির্বিদ’, ‘বৈদিক গণিতের পরিচয়’, ‘পাগল করা গণিত’, ‘যন্ত্ররা যেভাবে কাজ করে’, ‘বিজ্ঞানের জানা অজানা কথা’, ‘জ্যোতির্বিজ্ঞানের সহজ পাঠ’, ‘মাথায় কত প্রশ্ন আসে’ ইত্যাদি। তাঁর লেখার মূল বিষয়বস্তু হলো বিজ্ঞান, গণিত ও জ্যোতির্বিজ্ঞান। সাধারণ পাঠকদের কথা মাথায় রেখে রচিত সৌমেন সাহা এর বই সমগ্র খুব সহজ ও সাবলীলভাবে এই জটিল বিষয়গুলো উপস্থাপন করে। বিজ্ঞান বিষয়ক লেখালেখিতে আত্মমগ্ন এই লেখক বর্তমানে ঢাকার এক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন।