সাদা দিন কালো রাত হোটেল দি রিট্রিট। মিঃ সিনহা অস্থিরভাবে পায়চারি করছিলের তাঁর নিজস্ব কক্ষে ৷ এতগুলি কর্মঠ, চতুর লোক থাকতেও কেউ ওদের মধ্যে আজ পর্যন্ত নিরদিষ্টা শিপ্রার একটা সন্ধানই আনতে পারলে না। এতগুলো টাকা এতদিন ধরে মেয়েটার পিছনে ঢালা হয়েছে, সবই কি তা হলে ন দেবায়ঃ ন ধর্মায়ঃ যাবে ! অসম্ভব। এ হতে পারে না । যেমন করে যে উপায়ে হোক শিপ্রাকে খাঁজে আনতে হবেই । কিন্তু তাঁর নিযুক্ত অনচরেরা একে একে সকলেই অননুসন্ধানের ব্যাপারে ব্যর্থ হয়েছে। এখন কাকে শিপ্রার অনসন্ধানের ব্যাপারে নিযুক্ত করা যায়? চিন্তান্বিত সিনহা অস্থিরভাবে ঘরের মধ্যে পায়চারি করতে থাকেন। কাকে ? কাকে নিযুক্ত করা যায় এবারে ? চকিতে সিনহার চিন্তাজাল ছিন্ন করে একখানা মুখচ্ছবি মনোমধ্যে ভেসে ওঠে । লম্বা ঘোড়ার মত মুখখানা, চোয়ালের হাড় দুটো উৎকট ভাবে সজাগ ৷ পর, ওষ্ঠ একট, উল্টানো, ছাঁটা গোঁফ, নরদাড়ি মেহেদিতে ঈষৎ রাঙানো। সমস্ত মুখখানা দুর্দান্ত বসন্তের দাগে ক্ষতবিক্ষত। টানা টানা বড় বড় চক্ষ রেশমের মত ঈষৎ তামাটে অবিন্যস্ত ঝাঁকড়া ঝাঁকড়া মাথার চুল । লম্বায় লোকটা ছয় ফন্টের নিচে নয়। পেশল বলিষ্ঠ আহমেদ দূরাণী !
বিখ্যাত গোয়েন্দা চরিত্র কিরীটি রায় এর স্রষ্টা এবং জনপ্রিয় রহস্য কাহিনী লেখক ডাঃ নীহাররঞ্জন গুপ্ত শুধু একজন সাহিত্যিকই ছিলেন না, একইসাথে ছিলেন একজন চিকিৎসকও। একজন ভারতীয় বাঙালি সাহিত্যিক হিসেবে দুই বাংলাতেই লাভ করেছেন বিশেষ পাঠকপ্রিয়তা। ওপার বাংলায় বেড়ে ওঠা ও জীবন কাটালেও তিনি জন্মেছিলেন এপার বাংলায়। নড়াইল জেলার লোহাগড়া উপজেলার ইটনায় ১৯১১ সালের ৬ জুন বিখ্যাত কবিরাজ বংশীয় পরিবারের সন্তান হিসেবে জন্মগ্রহণ করেন এই প্রখ্যাত কাহিনীকার। পিতার বদলির চাকরির সূত্রে বিভিন্ন জায়গায় পড়াশোনা করতে হয়েছে । শেষ পর্যন্ত কোন্নগর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিকুলেশন ও কৃষ্ণনগর সরকারি কলেজ থেকে আইএসসি পাশ করার পর তিনি কলকাতার কারমাইকেল মেডিকেল কলেজ থেকে ডাক্তারি পাশ করেন ও চর্মরোগ বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি লাভ করেন লন্ডন থেকে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে তিনি ডাক্তার হিসেবে ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগ দেন এবং বিভিন্ন দেশের রণাঙ্গনে ঘুরে ঘুরে সেবাদানের পাশাপাশি বিচিত্র অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেন, যার ছাপ পরবর্তীতে পড়েছে নীহাররঞ্জন গুপ্ত এর বই সমূহতে। নীহাররঞ্জন গুপ্তের বই লেখার ইচ্ছা ছোটবেলা থেকেই এবং সেই সূত্রে তিনি অনেক কম বয়সেই তাঁর প্রথম উপন্যাস 'রাজকুমার' রচনা করেন। তবে নীহাররঞ্জন গুপ্তের উপন্যাস এর মধ্যে তাঁকে আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা এনে দিয়েছে তাঁর লেখা গোয়েন্দা উপন্যাস সমূহ, যা রচনা করার আগ্রহ থেকে তিনি ব্রিটেনে অবস্থানকালে সাক্ষাৎ করেন আরেক বিখ্যাত গোয়েন্দাকাহিনী রচয়িতা আগাথা ক্রিস্টির সাথে। নীহাররঞ্জন গুপ্তের গোয়েন্দা গল্প এর মধ্যে প্রথমটি হলো 'কালোভ্রমর', যেখানে তিনি সকলকে পরিচয় করিয়ে দেন তাঁর সেরা সৃষ্টি গোয়েন্দা কিরীটি রায়ের সঙ্গে। এছাড়াও নীহাররঞ্জন গুপ্তের রচনাবলী এর মধ্যে 'মৃত্যুবাণ', 'কালনাগ', 'উল্কা', 'হাসপাতাল', অপারেশন', 'কিরীটি অমনিবাস' ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। নীহাররঞ্জন গুপ্তের বই এর সংখ্যা প্রায় দুই শতাধিক। আর নীহাররঞ্জন গুপ্ত এর বই সমগ্র এর মধ্যে প্রায় ৪৫টি নিয়ে বাংলা ও হিন্দি ভাষায় নির্মিত হয়েছে চলচ্চিত্র। এছাড়াও তিনি 'সবুজ সাহিত্য' নামে শিশু-কিশোর উপযোগী সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। এই বিখ্যাত সাহিত্যিক ৭৪ বছর বয়সে ১৯৮৬ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।