‘ভালো মানুষ ভালো জীবন’ ভূমিকা: ডা: লুৎফর রহমান বাংলাভাষা্র বিশিষ্ট একজন প্রবন্ধ লেখক এবং সমা্জসেবী। তিনি যশোহর জেলার মানুষ ছিলেন, পেশায় ছিলেন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক। মাত্র চল্লিশ বৎসর বয়সে তাঁর মৃত্যু হয়। এত অল্প বয়সে মারা গেলেও, লুৎফর রহমান তাঁর কর্মজীবনে সবটাই ব্যয় করেছেন দেশের তরুণ সম্প্রদায় এবং নারী সচেতন করে তুলতে। এই উদ্দেশ্যে তিনি বহু প্রবন্ধ ও উপদেশেমূলক বই লেখেন। তিনি মনে করতেন, সন্তান ভালো হয় মায়ের ভালো গুনে। তাই নারীদের শিক্ষিত ও আত্ননির্ভর করে তুলতে তিনি দুটি প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেন। লূৎফর রহমান যখন জন্ম গ্রহণ করেনে তখন এ দেশ পরাধীন,এদেশে তখন ব্রিটিশ শাসন ব্যবস্থা চলছে। বাংলাদেশের মানুষ ,বিশেষ করে মুসলমানেরা, আধুনিক শিক্ষা দীক্ষায় আজকের তুলনায় তখন বেশ পিছিয়ে ছিল।তিনি লক্ষ্য করেন যে, জীবনে উন্নতি করতে হলে প্রতিটি মানুষকে বিদ্যা অর্জন করতে হবে, নৈতিক মূল্যবোধ গড়ে তুলতে হবে, কেবল চাকুরির পেছনে না ঘুরে স্বাধীন কাজ-যেমন ,কৃষি,ব্যবসায় বা কোন পেশা অবলম্বন করতে হবে। সবার ওপরে লুৎফর রহমান স্থান দিতেন মানুষের চরিত্রগুনকে।চরিত্রের বিকাশ ঘটাতে আমাদের কী করতে হবে, কোন পথে চলতে হবে, কেমন ব্যবহার করতে হবে, কোন আদর্শ অবলম্বন করতে হবে-এই সব তিনি খুব সহজ ভাষায় ছোট ছোট প্রবন্ধ লিখে গেছেন। আমাদের দেশে ও বর্তমান সমাজের দিকে তাকিয়ে মনে হয়, তাঁর এ সব প্রবন্ধের প্রয়োজন আজো ফুরিয়ে যায়নি। ‘উন্নত জীবন’ আর ‘মানব জীন’ নামে লুৎফর রহমানের দুটি বই থেকে বাছাই করে কিছু প্রবন্ধ নিয়ে ‘ভালো মানুষ ভালো জীবন’ এই নতুন নামে এই বই আমরা তৈরি করেছি।প্রবন্ধগুলো কিছুটা সংক্ষেপ ও সরল করা হয়েছে। আজকের দিনে আর প্রাসঙ্গিক নয় এমন কিছু অংশ বাদ দেয়া হয়েছে। আমরা জানি, সোনার দেশ গড়ে তুলতে হলে সোনার মানুষ চাই।আমরা মনে করি, লুৎফর রহমানের এ বই আজ স্বাধীন বাংলাদেশে সোনার মানুষ গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজে লাগবে। হারুণ উর রশীদ
সূচি * ব্যক্তিত্ব ও শক্তির সফলতা * অধ্যবসায় ,পরিশ্রম ,বিশ্বাস ও সহিষ্ণুতা * ব্যবসা, শিল্প, বানিজ্য * সাধনা ও পরিশ্রম * মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্বের আসন-নিজের শক্তি সাধনা * দৃঢ় ইচ্ছা * পয়সা -কড়ি * চাকরি, কাহ-কাম ও ব্যবসা; উদ্যম, চেষ্টা, পরিশ্রম * শারিরীক পরিশ্রম * উত্তপ্ত স্বভাব * আদর্শ- জীবন্ত আদর্শ * সংস্কার মানুষের অন্তরে * জীবনের মহত্ত্ব * স্বভাব গঠন * মিথ্যাচার
মোহাম্মদ লুৎফর রহমান তৎকালীন ব্রিটিশ ভারত যশোর জেলার মাগুরা মহাকুমার (বর্তমান মাগুরা জেলা) পরনান্দুয়ালী গ্রামে ১৮৮৯ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তার মাতা শামসুন নাহার এবং পিতা সরদার মইনউদ্দিন আহমদ, যিনি একজন স্টেশন মাস্টার ছিলেন। এই দম্পতীর চার পুত্র ও এক কন্যার মধ্যে মোহাম্মদ লুৎফর রহমান একজন। তার পৈত্রিক নিবাস ছিল তৎকালীন যশোর জেলার মাগুরা মহাকুমার হাজীপুর গ্রামে। লুত্ফর রহমানের পিতা ছিলেন এফ.এ পাস। ইংরেজি ভাষা ও ইংরেজি সাহিত্যের প্রতি তার পিতার অনুরাগ ছিল। সম্ভবত একারণেই পিতার অনুরাগ লুৎফর রহমানের মাঝে প্রতিভাস হয়েছিল। নারী সমাজের উন্নতির জন্য নারীতীর্থ নামে একটি সেবা প্রতিষ্ঠান গঠন এবং নারীশক্তি নামে একটি পত্রিকা প্রকাশ করেছিলেন তিনি এবং একজন চিন্তাশীল ও যুক্তিবাদী প্রাবন্ধিক হিসেবে পরিচিত হয়েছিলেন। তার প্রবন্ধ সহজবোধ্য এবং ভাবগম্ভীর। মহান জীবনের লক্ষ্য সাহিত্যের মাধ্যমে মহান চিন্তাচেতনার প্রতি আকৃষ্ট হতে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেছেন তিনি। গভীর জীবনবোধ, মানবিক মূল্যবোধ, উচ্চ জীবন, সত্য জীবন, মানব জীবন, সূহ্ম বিশ্লেষণী দৃষ্টিভঙ্গি তার রচনার প্রসাদগুণ। প্রবন্ধ ছাড়াও তিনি কবিতা, উপন্যাস ও শিশুতোষ সাহিত্য রচনা করেছেন। এফ.এ অধ্যয়নকালীন সময়ে লুৎফর রহমান তার নিজ গ্রাম হাজীপুরের 'আয়েশা খাতুন' নামে এক মহিলা সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। আয়শা খাতুনের পিতা মোহাম্মদ বদরউদ্দীন এ সময়ে মুন্সীগঞ্জ রেলওয়ের বুকিং ক্লার্ক ছিলেন। লুৎফর রহমানের সাহিত্য সাধনা শুরু হয়েছিল মূলত কবিতা রচনার মাধ্যমে। ১৯১৫ সালে চল্লিশটি কবিতা নিয়ে তার প্রথম এবং একমাত্র কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ প্রকাশিত হয়। পরে তিনি বিভিন্ন প্রবন্ধ, উপন্যাস, ছোটগল্প, কথিকা, শিশুতোষ সাহিত্য ইত্যাদি রচনা করেছেন। তার কিছু অনুবাদ কর্মও পাওয়া যায়। চরম দারিদ্রের মুখোমুখি যক্ষায় আক্রান্ত হয়ে মানবতাবাদী সাহিত্যিক ডাক্তার লুৎফর রহমান ১৯৩৬ সালের ৩১ মার্চ ৪৭ বৎসর বয়সে বিনা চিকিৎসায় নিজ গ্রাম মাগুরার হাজিপুর গ্রামে মৃত্যুবরন করেন