দুপুরে কোনোরকমে নাকেমুখে দুটো গুঁজেই বেরিয়ে পড়ে নূরজালাল। গন্তব্য রূপগঞ্জের হাট। বাড়ি থেকে পাক্কা দুই মাইল পথ। দ্রুত হেঁটে গেলেও ত্রিশ- চল্লিশ মিনিট লেগে যায়। আর শীতকালে দুটো বাজতে না বাজতেই সূর্য হেলে পড়ে পশ্চিমে। বেলা পড়ার আগেই কাজটা সারা দরকার। কাঁচা রাস্তার ধুলো মাড়িয়ে লম্বা লম্বা পা ফেলে দ্রুত সে এগোতে থাকে। রাস্তার দু'পাশে আমন ধান পেকে সোনালি রং ধারণ করেছে। সোনালি ধানের সাথে সোনালি রোদের অপূর্ব এক মাখামাখি! দেখে মনটা এমনিই ভরে ওঠে। ধানের ডগায় রোদ- বাতাসের ঢেউয়ের নাচন দেখতে দেখতে সে এগিয়ে চলে। ভাবে, যাদের আসতে বলা হয়েছে তারা সব এল কি না কে জানে। ডাক্তার ভোলানাথের দোকানের সামনে জড়ো হতে বলা হয়েছে সবাইকে। হাটের দিনে ওর দোকানে বেশ ভীড় হয়। দূর-দুরান্ত থেকে বিভিন্নজনে নানারোগের দাওয়াই নিতে আসে। এদিনে খুবই ব্যস্ত সময় কাটায় সে। লোক নেই কোনো, একহাতেই সব করে। রোগের বিবরণ শোনে, পুরিয়া বানায়, ওষুধ খাওয়ার নিয়ম-কানুন বুঝিয়ে দেয়। 'একটা লোক রাখলেই তো পারো, ভোলা' বললে বলে, 'না রে ভাই, এই ফুটা বেচে যে কয় পয়সা হয়, তাতে নিজিরই চলে না, লোক রাখে তারে দেব কী? আর এটটু পড়াশুনো জানা লোক দরকার।