"দীনেশের কালোরাত" বইয়ের সংক্ষিপ্ত কথা: স্কুল ছুটি হতে এখনও অনেক বাকি। হঠাৎ করেই আলীম স্যার ক্লাসরুমের দরজায় এসে দাঁড়ালেন। তিনি এ স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক। ক্লাস নিচ্ছিলেন আরিফ স্যার। তিনি এ স্কুলের নবাগত জুনিয়র শিক্ষক। আলীম স্যারকে ক্লাসরুমের দরজায় দেখেই আরিফ স্যার একটু বিব্রত হয়ে পড়লেন। - আসসালামু আলাইকুম স্যার, আসুন স্যার আসুন, কোনো সমস্যা স্যার? আলীম স্যার খুব নিচু গলায় আরিফ স্যারের সালামের জবাব দিয়ে বললেন - না, কোনো সমস্যা না। আপনি ক্লাস নিতে থাকেন। শুধু কে একটু ছুটি দিতে হবে।” এভাবেই শুরু করেছেন কবি আবৃত্তিশিল্পী ও ঔপন্যাসিক আহমদ বাসির তার কিশোর উপন্যাস "দীনেশের কালোরাত। আহমদ বাসির ঝরঝরে শব্দের বুননে এগিয়ে নিচ্ছেন উপন্যাসের কাহিনীকে।
এই উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র। তাকে ঘিরেই কাহিনীর বিস্তার। কে স্কুল থেকে বাড়ীতে পাঠান হয় স্কুলের পিয়ন খলিলুর রহমানকে দিয়ে। রিকসা কে নিয়ে বাড়ির দিকে চলছে। বাড়িতে পৌঁছার আগেই হৃদয় চৌচির হওয়া সংবাদটি কর্ণে আসে। ঔপন্যাসিকের বয়ানে আমরা শুনে নেই “রিকশাটি মানুষের জটলা হয়ে যাওয়ার সময় জটলার ভেতরে থেকে একজনের কণ্ঠ যেন তীরের ফলার মতো দীনেশের হৃদপিন্ডটাকে এফোঁড় ওফোঁড় করে দিয়ে যায়। লোকটা বলছিল-আহারে, অনিমেষের মতো মানুষটাকে এভাবে মেরে ফেললো!” অনিমেষ দীনেশের বাবা। দীনেশের আর বুঝতে বাকি রইলো না কেন স্যার থাকে স্কুল থেকে ছুটি দিয়েছেন। আমরা তখন শিল্পীর অংকিত শব্দচিত্রে দীনেশের মানসিক অবস্থা অনুভব করতে পারি “তার কচি বুক এত বড় ঢেউয়ের আঘাত সহ্য করতে পারছে না। বুকটা তার ভেঙে ভেঙে চুরমার হয়ে যাচ্ছে যেন।” কিন্তু কেন অনিমেষ খুন হলেন? জনমনে এই জিজ্ঞাসা ঘুরপাক খাচ্ছে। কৌতুহলি হয়ে ওঠছেন লেখক। সত্যটা বের করে আনতে লেখক তার কৌতুহল চিত্রায়ন করেছেন আবির আর আসলকে দিয়ে। তারা দুইজন দীনেশের বন্ধু। তার শরণাপন্ন হলেন মসজিদের ইমাম মাওলানা হাসান সাহেবের। অনিমেষ আর ইমাম সাহেব পরস্পর পরস্পরে ঘনিষ্টতা নিবিড়। এখানে লেখক খুব সুন্দরভাবে আমাদের দেশের একটি সুসম্পর্কের স্পষ্ট জবাব দিয়েছেন। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নিয়ে যারা প্রশ্ন উত্থাপন করেন তাদের জন্য লেখকের সৃষ্ট মাওলানা চরিত্রের জবানের বয়ান "অনিমেষ আমার সমবয়সী। আমার সঙ্গে ওর ঘনিষ্ঠতা সেই ছোটবেলা থেকে।.... ও আমাকে এতটাই সম্মান করত যে,ওর বিয়েতেও আমাকে দাওয়াত করেছিল। ওর আবদার রক্ষা করতে গিয়ে ওর বিয়ের সেই ছোট্ট অনুষ্ঠানটিতেও আমার থাকতে হয়েছিল। “হিন্দু মুসলমানের এটিই আমাদের দেশের ঐতিহ্যিক চিত্র,এটিই বাস্তব। আমাদের গ্রামাঞ্চলের চিরায়ত চিত্র এমনই। লেখক "দীনেশের কালোরাত” গ্রন্থে কাহিনী বর্ণনাচ্ছলে এমনভাবেই ফুটিয়ে তুলেছেন অনেক ধ্রুবসত্যের সরল চিত্র। এগিয়ে চলছে কাহিনী বিভিন্ন মোড় ঘুরে রহস্য উন্মোচনের দিকে। মাওলানা হাসান, আবির, আসল যখন অনিমেষ খুনের রহস্য উন্মোচনে তৎপর হয় তখনই কাহিনী মোড় নেয় অন্য দিকে। অনিমেষকে খুন করায় গ্রামের মাদক ব্যাবসায়ী স্বপন সাধু। খুনি মজিদ তা স্বীকার করলে তাকেও হত্যা করানো হয় ক্রশ ফায়ারে। মাওলানা গ্রেফতার হন অনিমেষ হত্যার মিথ্যা অভিযোগে। কাহিনীর বিভিন্ন বাঁক ঘুরে সমাপ্তির দিকে যেতে থাকে। সবশেষে কে নিয়ে আইনি সুরাহার জন্য রওয়ানা দেন ঢাকার উদ্দেশ্যে। পথিমধ্যে অপহৃত হন এড. ফজলুর রহমান, আবির, আসল আর। এখানেই উপন্যাসের সমাপ্তি। উপন্যাসের বৈশিষ্ট অনুসারে সমাপ্তিটি সন্তোষজনক নয়। সমাপ্তিতে মনে হয় যেন এটি একটি সিরিজ লেখা। যদি তা হয় তাহলে ভিন্ন কথা। নতুবা উপন্যাসের এ পর্যায়ের ইতিটানা পাঠক মনে অসন্তোষ থাকাই স্বাভাবিক।