"সংকট ও সুযোগ" ফ্ল্যাপে লেখা কথা: ১৯৯৪ সাল থেকে সুদীর্ঘ ১৫ বছর পর্যন্ত অর্থাৎ ২০০৮ সাল পর্যন্ত লেখা চুয়াল্লিশটি প্রবন্ধের সংকলন এই গ্রন্থটি। লেখকের বিষয়বস্তু কোনাে একটি বিষয়ে নির্দিষ্ট নয়। জীবনের প্রথম পঁচিশ বছর সরকারি চাকরি করেছেন লেখক এবং চাকরি সবই ছিল উচ্চমর্যাদা ও গুরুত্বের চাকরি। দেশি-বিদেশি বিখ্যাত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসেন সেই সূত্রে। ছেলেবেলা থেকেই ভালাে ছাত্র হিসেবে পরিচিতি ছিল এবং পড়াশােনার রেকর্ডও সর্বোত্তম। ১৯৮৪ সাল থেকে পরবর্তী উনিশ বছর নানা দেশে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার হয়ে অর্থনীতি, উন্নয়ন, পরিবেশ ও প্রশাসন নিয়ে উপদেষ্টার কাজ করেছেন এবং এতে একটি আন্তর্জাতিক দৃষ্টিভঙ্গী তার গড়ে ওঠে। চুয়াল্লিশটি প্রবন্ধে তার নানা বিষয়ে চিন্তাধারা দেশের নানা সমস্যা নিয়ে বিশ্লেষণ ও সুপারিশ সমসাময়িক রাজনীতি নিয়ে স্পষ্টবাদী মন্তব্য ইত্যাদি এই বইয়ে সুস্পষ্ট। প্রয়ােগবাদী সমাধান লেখক উপস্থাপন করেছেন এবং নির্দ্বিধায় তা বলেছেন। আওয়ামী ঘরানার চিন্তাধারা সহজেই ধরা পড়ে কিন্তু এই পনেরাে বছরের অর্ধেক সময় তিনি ছিলেন নির্দলীয় লেখক ও সমালােচক। ২০০৯ সালে শেখ হাসিনার কোয়ালিশন সরকারে জ্যেষ্ঠতম মন্ত্রী হিসেবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকায় লেখালেখি এখন সরকারি বক্তৃতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ সাধারণ নাগরিকের জন্য আকর্ষণীয় এমন কোনাে বিষয় নেই যার সম্বন্ধে লেখক চুপ থেকেছেন। তাই পড়ুয়াদের এই গ্রন্থটি ব্যাপকভাবে দোলা দেবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।
আবুল মাল আবদুল মুহিত লেখক, গবেষক, উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ, প্রশাসক, পরিবেশবিদ ও অর্থনীতিবিদ আবুল মাল আবদুল মুহিত সিলেটের এক সম্ভান্ত পরিবারে ২৫ জানুয়ারি, ১৯৩৪ সালে জন্মগ্রহণ করেন। কৈশোরে ছাত্র সংগঠন এবং ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন এবং ১৯৫৫ সালে সলিমুল্লাহ হল ছাত্র সংসদের সহ-সভাপতি ও সর্বদলীয় কর্মপরিষদের আহবায়ক থাকাকালে কিছুদিন জেলেও ছিলেন। কর্মজীবনে পূর্ব পাকিস্তান এবং কেন্দ্রীয় পাকিস্তান সরকারের প্রায় ১৩ বছর চাকরি করে ওয়াশিংটনে পাকিস্তান দূতাবাসে অর্থনৈতিক কাউন্সিলর হিসেবে নিযুক্তি পান ১৯৬৯ সালে। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ৩০ জুনে তিনি আনুগত্য পরিবর্তন করেন এবং মার্কিন কূটনৈতিক, শিক্ষামহল ও সংবাদমাধ্যমে প্রচারণায় ও জনমত গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ২৫ বছরের সরকারি চাকরির পর বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব হিসেবে স্বেচ্ছা অবসরে যান ১৯৮১ সালে । ১৯৮২ এবং ১৯৮৩ সালে বাংলাদেশ সরকারের অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রী ছিলেন এবং ESCAP-এর চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তার নেতৃত্বে ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশে পরিবেশ আন্দোলন গড়ে উঠে। প্রথমে ‘পরশ এবং পরে বাপা'-এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এ্যালামনাই এসোসিয়েশনেরও পরপর দুই মেয়াদে সভাপতি ছিলেন। ২০০১ সালে আওয়ামী লীগে যোগ দেন এবং উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হন। ২০০৮ সালে জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হয়ে বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৪ সালের নির্বাচনে পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে পেয়েছেন অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব।