"রাজতন্ত্র" বইয়ের ফ্ল্যাপের লেখা: মেয়ে গাছটার মন খারাপ। অনেক বড় একটা জানালা। ছুটির দিনের সকাল বেলার আহ্লাদী রােদ কেমন প্রেয়সীর মতন শরীরে আলতাে করে হাত বুলায়। একটু বাতাস জানালা লাগােয়া দুটো ছােট্ট টবে দুটো গাছের পাতাগুলাে নড়ে। হাওয়ার সাথে দারুণ একটা রিদম । ডুব দিয়ে সাঁতার কাটে যেন। সামির এখনও বিছানায়। রাতে ঘুম হয়নি। ঘুমটা এসেছে ফজরের আযানের সময়ে। ভাঙা ভাঙা ঘুম অস্থির। তার মধ্যে বারবার প্রস্রাবের বেগ। কিডনির সমস্যা মনে হয়! ‘গাছ তুই কেমন আছিস? মন খারাপ?’ বলে সামির। কথা হয় গাছের সাথে । ‘তুমি আমাকে একটুও আর ভালােবাসাে না? একটুও আর আদর করােনা?' বলে দুটো গাছের মধ্যে মেয়ে গাছটা। ‘কই বাসিতাে। অনেক বাসি। কাজে ব্যস্ত থাকি যে তাই সময় দিতে পারিনা। তােমার ছেলে বন্ধু গাছটা কেমন আছে? ভালাে?' বলে সামির। জানালার পাশে থাকা গাছ দুটোর সাথে চলে তার কাল্পনিক কথােপকথন । ছুটির দিনে এমন হয়। কাজ না থাকলে গাছের সাথে কথা হয় অনেক। সামিরের মনে হয় দুটো গাছের একটা ছেলে আরেকটা মেয়ে। ছেলেটার নাম সে রেখেছে নিহন আর মেয়েটার নাম ইরা। জানিনা ও জানে। ওকে নিয়ে আমার কি? ও আচ্ছা। ঝগড়া হয়েছে বুঝলাম।' বলে সামির। মুখে তার হাসি। ঝগড়া করতে আমার বয়েই গেছে। আমার অত সময় নেই। ‘এত রাগ করে কি লাভ? কষ্ট শুধু। ঝগড়া মিটিয়ে ফ্যালাে।' বলে সামির। এমন সময়ে কাজের লােক আফতাব ঢােকে ঘরে। তার হাতে সকালের খাবার। বেকন, ব্রাউন ব্রেড ভাজা, সিদ্ধ ডিম আর জুস। কথা থামিয়ে দেয় সামির। কাজের লােকের সামনে কথা বললে পাগল ঠাউরাবে! অতএব চুপ!
কিঙ্কর আহ্সান এর জন্ম ১৯৮৯ সালের ৬ জুলাই কুষ্টিয়া জেলায়। ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজ থেকে মাধ্যমিক পাশ করে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য বিভাগে। সেখান থেকেই স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সুবাদে সক্রিয় ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় লেখক সংঘ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদ, কন্ঠশীলন, মুক্তআসর, বিল্ড বেটার বাংলাদেশসহ আরও অনেকগুলো সংগঠনের সাথে। লেখালেখির শুরু তার দেশের একটি জনপ্রিয় দৈনিক পত্রিকার মাধ্যমে। টানা পাঁচ বছর বাংলাদেশ প্রতিদিন, কালের কন্ঠ, বাংলানিউজ, পরিবর্তনসহ দেশের প্রায় সব শীর্ষ দৈনিক পত্রিকা ও অনলাইন পোর্টালে লেখালেখি করেছেন। ছোটগল্প লেখার পাশাপাশি কালের কন্ঠের 'বাতিঘর' পাতায় শিক্ষানবিস সাব এডিটর হিসেবে কাজ করেছেন। সহকারী স্ক্রিপ্ট রাইটার হিসেবে কাজ করেছেন 'কে হতে চায় কোটিপতি' টিভি শো'তে। পাশাপাশি 'মার্কস অলরাউন্ডার', 'হাসতে মানা', 'হ্যান্ডসাম দি আলটিমেট ম্যান পাওয়ার্ড বাই বাংলাদেশ নেভী' ও 'বাংলাদেশ সুপার লীগ-গ্রান্ড লোগো আনভেইলিং' এর প্রধান স্ক্রিপ্ট রাইটার ছিলেন। এই স্বল্প সময়ের সৃজনশীল ক্যারিয়ারেও বেশ সাড়া ফেলেছে কিঙ্কর আহ্সান এর বই সমগ্র। লেখালেখির পাশাপাশি ফিল্মের কাজেও জড়িয়েছেন এই লেখক। 'পাতার নৌকা', 'ক্রিং ক্রিং' ও 'জলপরানি' টেলিফিল্মের কাজ করে প্রশংসা কুড়িয়েছেন অনেকের। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর সাথে ডকুমেন্টারি নির্মাণের কাজ করেছেন। কাজ করেছেন বেসরকারি টিভি চ্যানেল ও বিজ্ঞাপন সংস্থায়। সবকিছুর পরও যেন লেখালেখিই কিঙ্কর আহ্সান এর আসল জায়গা। বইমেলায় প্রকাশিত 'আঙ্গারধানি', 'কাঠের শরীর', 'রঙিলা কিতাব', 'স্বর্ণভূমি', 'মকবরা', 'আলাদিন জিন্দাবাদ' ইত্যাদি কিঙ্কর আহ্সান এর বই সমূহ, যা বেশ পাঠকপ্রিয়তা লাভ করেছে।