"দ্য পাওয়ার অব পজিটিভ থিংকিং" এই গ্রন্থটি রচিত হয়েছে সেইসব পদ্ধতি ও উদাহরণ স্থাপনের জন্য যা আপনাকে পরামর্শ দেবে যে কোন কাজেই হারতে নেই আর মানসিক শান্তি, সুস্বাস্থ্য ও অদম্য শক্তি বজায় রাখুন। সংক্ষেপে বলা যায়, আপনার জীবন পরিপূর্ণ হতে পারে আনন্দ ও সন্তুষ্টি দ্বারা। এ বিষয়ে আমার কোন সন্দেহ নেই কারণ আমি অসংখ্য মানুষকে দেখেছি যারা খুব সহজ পদ্ধতি শিখে ও প্রয়োগ করে তাদের জীবনে এনেছে ব্যাপক সম্ভাবনা। এই দাবীগুলো দৃশ্যত : অযৌক্তিক মনে হলেও মূলত : এর মূলভিত্তি হল প্রকৃত অভিজ্ঞতার সরল আলোকপাত। প্রতিনিয়ত অসংখ্য মানুষ নিত্যদিনের সমস্যায় জর্জরিত থাকে। তারা কষ্ট পায়, এমনকি দিনের পর দিন এটাও ভাবতে থাকে যে কি ভেবেছে আর জীবন তাদের কি দিয়েছে। ওভাবে ভাবতে গেলে জীবনের কিছু ‘ব্যাঘাত’ আছে বৈকি, কিন্তু সেসব বিঘœকে নিয়ন্ত্রণের শক্তিও পদ্ধতিও রয়েছে। এটি কেবল করুণাই নয় যে মানুষ জীবনের নানারকম সমস্যা, উদ্বেগ আর সংঘাতের কাছে হার মানে, এটি সম্পূর্ণ অপ্রয়োজনীয়। এসব বক্তব্যের অর্থ এই নয় যে পৃথিবীর কষ্ট আর যন্ত্রণাকে আমি তাচ্ছিল্য করছি বা ছোট করে দেখছি, তবে সেসবকে আধিপত্য বিস্তারের সুযোগ দেই না আমি। সমস্যা যখন চূড়ান্ত হয়, তখন আপনি তাকে গুরুত্ব দিয়ে ভাবনার রূপরেখা তৈরি করতে পারেন। যে সকল বাধা আপনাকে হারাতে পারে। সেসব কিছুর ঊর্ধ্বে উঠে আপনি নিজেকে বাঁচাতে পারেন মন থেকে দুশ্চিন্তা তাড়ানোর পদ্ধতি শিখে, মানসিক দাসত্বকে অতিক্রম করে আর আত্মিক শক্তিকে বৃদ্ধি করে। ধাপে ধাপে আমি জানাতে চাই যে বাধা যেন আপনার সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যকে নষ্ট করতে না পারে। একমাত্র আপনি নিজে চাইলেই হারবেন। আর এই গ্রন্থ আপনাকে শেখাবে কিভাবে আপনি হারতে ‘চাইবেন’ না। এই গ্রন্থের উদ্দেশ্য খুব সহজ-সরল। কোন ধরনের সাহিত্যিক উৎকর্ষতা বা অস্বাভাবিক বিশিষ্টতার ভান এতে নেই। এটি খুব সাধারণ, সরল, আত্মোন্নয়নমূলক একটি সারগ্রন্থ। এটি রচিত হয়েছে পাঠকদের সাহায্য করার জন্য যাতে তারা অর্জন করতে পারেন সুখী, পরিতৃপ্ত ও সমৃদ্ধ একটি জীবন। আমি সম্পূর্ণরূপে আর প্রবল উৎসাহের সাথে বিশ্বাস করি যে, সোচ্চার আর কার্যকরী পদক্ষেপ স্থান আর সময়োপযোগী গ্রহণ করলে মানুষ জয়লাভ করতে পারে। আমার উদ্দেশ্য হল এই গ্রন্থে সেইসব পদক্ষেপকে যুক্তিসঙ্গত, সরল ও বোধগম্য করে উপস্থাপন করা যাতে পাঠক সেসবের ব্যবহারিক প্রয়োগের মাধ্যমে স্রষ্টার সাহায্যে নিজের পছন্দমতো জীবন গড়ে তুলতে পারে।
ড. নরম্যান ভিনসেন্ট পিল একজন আমেরিকান চিন্তাবিদ, লেখক এবং ধর্মযাজক, যিনি তাঁর লেখনী দ্বারা সারা জীবন দিশেহারা মানুষকে পথ দেখিয়ে এসেছেন। অনুপ্রেরণা ও প্রেষণার শিক্ষা পাওয়া যায় তাঁর লেখা আত্মকল্যাণমূলক বইগুলো পড়লে। নরম্যান ভিনসেন্ট পিল যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইও এর বোয়ার্সভিলে জন্মগ্রহণ করেন ৩১ মে ১৮৯৮ সালে। তাঁর বাবা ছিলেন একজন স্থানীয় ধর্মযাজক। তিনি বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ধর্মতত্ত্ব বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি লাভ করেন এবং মেথডিস্ট হিসেবে নিউ ইয়র্কের সাইয়াকুজ ইউনিভার্সিটি মেথডিস্ট চার্চে যোগ দেন। ১৯৩৩ সালে তিনি একই শহরের ৩০০ বছরের পুরনো মার্বেল কলেজিয়েট চার্চে চলে আসলে মেথডিস্ট থেকে ডাচ রিফর্মডে পরিবর্তিত হন। পিল এবং তাঁর সাথে স্মাইলি ব্লান্টন মিলে এক ধর্মীয়-আত্মোন্নয়নমূলক বই লেখা শুরু করেন। এভাবে এই জুটির দিকনির্দেশনায় আমেরিকায় ‘আমেরিকান ফাউন্ডেশন অব রিলিজিয়ন অ্যান্ড সাইকিয়াট্রি’ গড়ে ওঠে। ড. নরম্যান পিল পথভ্রষ্ট দিশেহারা মানুষকে নিজেদের সার্বিক গঠন, আত্মোন্নয়ন এবং অনুপ্রাণিত করতে রেডিও, টেলিভিশন প্রোগ্রাম এবং বইয়ের সাহায্য নেন। ১৯৩৫ সালে পিল ‘দ্য আর্ট অব লিভিং’ নামের রেডিও প্রোগ্রাম চালু করেন। এছাড়াও তাঁর প্রতিষ্ঠিত ‘গাইডপোস্ট’ ম্যাগাজিনটি ছিল আত্মোন্নয়ন ও উদ্দীপনা জোগাতে ইতিবাচক চিন্তার গুরুত্ব সম্পর্কে। খুবই সাধারণ জীবনযাত্রার ধারক ড. নরম্যান ভিনসেন্ট পিল এর বই সমূহ মানব হিতকর এবং ইতিবাচক চিন্তার বিষয়বস্তু নিয়ে তাঁর সুগভীর গবেষণা ও মননেরই প্রতিফলন। ৯৫ বছরের সুদীর্ঘ কর্মময় জীবনে তিনি আত্মোন্নয়নে নিজস্ব চিন্তার তাৎপর্য পথভ্রান্ত মানুষদের আলো দেখিয়ে গিয়েছেন। ড. নরম্যান ভিনসেন্ট পিল এর বই সমগ্র হলো ‘দ্য পাওয়ার অব পজিটিভ থিংকিং’, ‘এনথুজিয়াজম মেকস দ্য ডিফারেন্স’, ‘পজিটিভ ইমেজিং’, ‘ইউ ক্যান ইফ ইউ থিংক ইউ ক্যান’, ‘দ্য অ্যামেজিং রেজাল্টস অব পজিটিভ থিংকিং’ ইত্যাদি। ‘দ্য পাওয়ার অব পজিটিভ’ এর ইন্টারন্যাশনাল বেস্ট সেলার হিসেবে স্বীকৃতি লাভ পাঠক কর্তৃক এর সমাদরেরই জানান দেয়। বরেণ্য এই চিন্তাবিদ ও লেখক ১৯৯৩ সালের ২৪ ডিসেম্বর পরলোকগমন করেন।