"দুমুখো আগুন" বইয়ের ফ্ল্যাপের লেখা: মানবীয় সম্পর্কের মাঝে শুভ বা অশুভ কোনাে দেয়াল কি স্থায়ী বাধা হতে পারে? কেন তা স্থায়ী হয়? কীভাবেই-বা কেউ কেউ সেই শক্ত দেয়াল টপকে যায়? ধর্ম আর সমাজের দৃশ্যমান অনড়ত্ব কী বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে মানুষের চলমান জীবনে? ধর্মসূত্রে শুভ্র হিন্দু, চাঁদনি মুসলমান। দুজন সমবয়সী, তরুণ-তরুণী। দুজনের সম্পর্কের যাত্রাপথের অলিগলিতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা বিষকাঁটা, প্রতিবন্ধকতা কি থামিয়ে দিতে পেরেছে লক্ষ্যমুখী তাদের অভিযাত্রা? ঘুরিয়ে দিতে পেরেছে কি তাদের চলার পথ? গােপনে দুজনের বিয়ের খবর শুনে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে আকস্মিক মারা যান শুভ্র’র বাবা। বাবার লাশ সামনে রেখে কী প্রতিক্রিয়া ঘটে শুভ্র’র, শুভ্র’র মা ও তার ছােটবােন মুক্তা বা তাদের সমাজেই-বা কী ছায়া পড়ে? বন্ধুরাই-বা কীভাবে দাঁড়াল পাশে? আসন্ন অবসর জীবন ঘনিয়ে আসার সময়ে হতাশাগ্রস্ত চাদনির বাবা, এ-উপন্যাসের অন্যতম প্রধান চরিত্র, সায়মন চৌধুরীর মনস্তত্ত্বে কী ঝড় বয়ে গেছে? নিজের জীবন, সন্তানদের জীবন আর অফিস-পরিবেশ মিলিয়ে সময়স্রোতের টানে ভেসে জীবনসাগরের মােহনায় চলে আসা একজন বাবা কি খুঁজে পাবেন গােপনে বিয়ে করা মেয়ের জামাতা শুভ্রকে? বারবার অদৃশ্য হয়ে যায় তার চেয়ারের প্রিয় হাতলটি। কেন? কীভাবে আবার তিনি ফিরে পান নির্ভরতার সে-হাতল? অফিসের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বা পিতা হিসেবে বা সমাজ-সদস্য হিসেবে একজন স্থিতধী মানুষ সায়মন চৌধুরী যখনই সমাজের সংকীর্ণমনা মানুষের কুটিল। প্রশ্নের মুখে পড়ছেন তখনই তাঁর বােধ এবং পঞ্চেন্দ্রিয় বিহ্বল হয়ে পড়ে। তখন তিনি চেয়ারের হাতল দেখতে পান না- এই প্রতীকী বিভ্রম কিংবা যাদুবাস্তবতা ফুটে উঠেছে মােহিত কামালের উপন্যাসে। কী বিহ্বলতায় খড়কুটোর মতাে ভেসে যেতে থাকে জীবন? কুশীলবদের জীবনে কীভাবে জ্বলতে থাকে দুমুখাে আগুন? সহজ ভাষাশৈলীর মধ্য দিয়ে শিল্পের দায় মেটানাে শিল্পকর্ম এ উপন্যাস ‘দুমুখাে আগুন’। এর মাঝে নতুন এক দ্বান্দ্বিক সংঘাতের মনস্তত্ত্ব দেখার সুযােগ পাবেন পাঠক।
তিনি একদিকে কথাসাহিত্যিক, অন্যদিকে মনোশিক্ষাবিদ। ২০১৮ সালে কথাসাহিত্যে পেয়েছেন বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার। জাপানের ১২তম ওয়ার্ল্ড কংগ্রেস অব সাইকিয়াট্রির ফেলোশিপ প্রোগ্রামে নির্বাচিত হন বিশ্বের প্রথম সেরা ফেলো। জন্ম ১৯৬০ সালের ২ জানুয়ারি সাগরকন্যা সন্দ্বীপে। এমবিবিএস করেছেন সিলেট এম.এ.জি. ওসমানী মেডিকেল কলেজ থেকে। তিনি সাহিত্য-সংস্কৃতির মাসিক ’শব্দঘর’র সম্পাদক এবং জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট (এনআইএমএইচ)-এর একাডেমিক পরিচালক। ২০১২ সালে তাঁর মনস্তত্ত্ব বিষয়ক গ্রন্থ ‘মানব মনের উদ্বেগ ও বিষন্নতা’ কলকাতার রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্য করা হয়।