প্রত্যেক বাবা-মায়ের কাছেই তার সন্তান একেকটা রাজপুত্র। এ জন্য রাজার ছেলে হতে হবে আর রাজ্য থাকতে হবে এমন কোনো কথা নেই। ভালো পড়াশোনা করে বাবা-মায়ের মুখ উজ্জ্বল করতে পারলেই সে রাজপুত্র। তবে জুবাইর জসীমের লেখা ‘রাজপুত্র’ গল্পের বইয়ের রাজপুত্রের কাহিনি একটু আলাদা। রাজপুত্রের জন্মের পরে রাজা তো মহাখুশি। রাজ্যজুড়ে ঢেরা পিটিয়ে দিয়েছে সাত দিনব্যাপী আনন্দ উৎসবের জন্য। রাজপুত্র ধীরে ধীরে বড় হয় আর তার সেবার যাতে কোনো ত্রæটি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখে রাজকর্মচারীরা। কিন্তু রাজপুত্রের তো এই ইট-পাথরের রাজবাড়িতে মন টেকে না। তার ভালো লাগে না এই কৃত্রিমতা। একদিন সে কাউকে কিছু না জানিয়ে বেরিয়ে পড়ে রাজ্যে। মুক্ত আকাশ, পাখির ডাক আর বন-বনানী দেখে তার মন ভরে ওঠে। কিন্তু তার দুঃখ লাগে রাজ্যের শিশুদের দেখে। কেউ তারা পড়াশোনা করে না। সবাই নানা রকম কাজ করে সময় কাটায়। এদিকে রাজা তো ভীষণ চিন্তায় পড়ে গেছে যে তার রাজপুত্র কোথায় হারিয়ে গেছে! অবশেষে রাজপুত্র ফিরে আসে আর তার পিতাকে জানায়, রাজ্যের উন্নতির জন্য দরকার স্কুল। ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা স্কুলে গিয়ে পড়াশোনা করলে তারা মানুষের মতো মানুষ হলে তাতে রাজ্যেরই উন্নতি হবে। থাকবে না কোনো দারিদ্র্য। রাজা এ কথা শুনে অবাক হলো। আর রাজপুত্রের কথামতো সব গ্রামে স্কুল খুলে দিল। শিক্ষার গুরুত্বকে বোঝাতেই আসলে এই গল্পটি। এ ছাড়াও এ বইয়ে রয়েছে আরো আটটি গল্প। গল্পগুলো হলো―একদিন আমের বনে, বৈশাখী মেলা, ধূর্ত শেয়াল ও মোরগ, বাঘ, নুসাইবার স্কুল, কম্পিউটারে ভূত, জিন ভূতের লড়াই এবং বোতলে বন্দী ভূত। মোটামুটি শিশু-কিশোরদের আগ্রহের বিষয়গুলোকে নিয়েই এই গল্পসূচি সাজানো হয়েছে। বইয়ের ভূতের গল্পগুলো তো অসাধারণ। ৪০ পৃষ্ঠার এ বইটির প্রতিটি গল্পের সাথেই রয়েছে গল্পের কাহিনি অনুযায়ী ছবি। এসব গল্পের কোনোটাতে আছে দুঃখবোধ, কোনোটাতে মানুষের প্রতি সমবেদনা, কৈশোরের দুরন্তপনা আর ভৌতিক ভূতের অদ্ভুত সব কর্মকাণ্ড। শিক্ষণীয় এসব নানা স্বাদের গল্পগুলো শিশুদের মানস গঠনের পাশাপাশি দেবে নির্মল আনন্দ। গল্পের কাহিনি নির্মাণ ও বিষয়-বৈচিত্র্যে সহজ-সরল ভাষার ব্যবহার করছেন গল্পকার। বইটি সংগ্রহ করে পড়লেই বোঝা যাবে গল্পের শৈল্পিক আবেদন।