‘অসুখী দিন’ বইয়ের ফ্ল্যাপের কথাঃ একটা ছেঁড়া মলাটে হলুদের ছোপ লাগা জরাজীর্ণ বই। দুই ভূগোলের দুই সময়ের দুজন মানুষ সাবিনা আর অনিতা সেনের মধ্যে অভিনব এক সংযোগ ঘটায়। অনিতা সেন বিশ শতকের চল্লিশের দশকের কমিউনিস্ট। বরাক আর আসাম ভ্যালির। ব্রহ্মপুত্রের ভেজা পলি মাটিতে তাঁর কচি পায়ের চিহ্ন আঁকা রয়েছে—যুদ্ধে, আন্দোলনে, মন্বন্তরে। অনিতা সেনের স্মৃতিকথা পড়তে পড়তে সাবিনার মনে হয়, বইটা এর চেয়েও বেশি কিছু, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে তাঁর হারিয়ে যাওয়া ভাই নীরদচন্দ্র সেনের হদিস পাওয়ার উপায়। সুভাষ বসুর আজাদ হিন্দে যোগ দিতে সে রেঙ্গুন পাড়ি দিয়েছিল। যৌবনে একই কাজ করেছেন সাবিনার বাবা মোয়াজ্জেম হক। তিনি যে নিশান উড়িয়ে জাতীয় সংগীত গাইতে গাইতে মৃত্যু উপত্যকা ইম্ফলের দিকে মার্চ করে গিয়েছিলেন, তার উত্তরাধিকারী হননি। কুঁচকিতে বুলেটের দাগ নিয়ে দেশভাগের পরের বছর বাড়ি ফিরেছিলেন। তারপর ছিটকে পড়েন এই ইতিহাস থেকে। তাঁর জীবনে আজাদ হিন্দের বছরগুলো যেন জলের ওপর বুদ্বুদ, কোনো চিহ্ন না রেখেই মিলিয়ে গেছে। তাই জীবনের এপার-ওপার জুড়তে পারেননি। যার কাছে অতীত একটা বেড়াভাঙা বাড়ির ক্রমে বদলে যাওয়া, যে গ্রাম থেকে শহরে ফেরে জানালার শার্সির বুকের সবুজ আল্পনার পিছুটান নিয়ে, সে তার বাবার জীবনের এপার-ওপার টুকরো টুকরো গল্প গাঁথতে বসে। কেননা, ইতিহাস তামাদি হয়ে গেলেও সত্য যা, তা জেনে নিতে হয়। নীরদচন্দ্র সেনের মৃত্যুরহস্যের কিনারাও হয় সাবিনার হাত দিয়ে।
শাহীন আখতার জন্ম কুমিল্লা জেলার চান্দিনায় পড়াশােনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে, অর্থনীতিতে প্রায় দুই দশক ধরে গল্প-উপন্যাস লিখছেন। - দ্বিতীয় উপন্যাস তালাশ-এর জন্য। প্রথম আলাে বর্ষসেরা বই ১৪১০ পুরস্কার পান। বইটির ইংরেজি তরজমা দ্য সার্চ নামে দিল্লির প্রকাশনা হাউস জুবান প্রকাশ করেছে ২০১১ সালে। তালা-এর ৩ কোরিয়ান ভাষার সংস্করণ আর সখী রঙ্গমালা উপন্যাসের ইংরেজি সংস্করণ বিলাভেট রঙ্গমালা প্রকাশের কাজ চলছে। প্রথমা প্রকাশন থেকে প্রকাশিত ময়ুর সিংহাসন উপন্যাসের জন্য তিনি পেয়েছেন। বাংলার পাঠশালা আখতারুজ্জামান ইলিয়াস না কথাসাহিত্য পুরস্কার ২০১৫ এবং আইএফআইসি ব্যাংক পুরস্কার। তিনি ভারতের আনন্দবাজার গ্রুপের টিভি চ্যানেল। এবিপি আনন্দ কর্তৃক সাহিত্যে সেরা। - বাঙালি’ সম্মানে ভূষিত হয়েছেন ২০১৪ সালে। অতি সম্প্রতি তিনি বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেছেন।