বইয়ের কিছু লেখা পঁচিশ বছর আগে শ্রাবণের টিপ টিপ বৃষ্টি ঝরা এক সকালে পাগল হয়ে যায় সেকান্দার। সেদিন থেকে গোসল করে না সে। বলে কোথাও পানি নাই। সব দেখি রক্ত। রক্ত দিয়ে গোসল করতে পারব না আমি। সেকান্দারের সাথে থাকে একটা পুঁটুলি। সেই পুঁটুলির মধ্যে থাকে একটা ছবি। ছবিটা লুকিয়ে লুকিয়ে দেখে। ছবিটা দেখলে তার কান্না আসে। হাউমাউ করে কাঁদে। তবুও দেখে। কাউকে দেখতে দেয় না ছবিটা। ভয় হয়, যদি কেউ নিয়ে যায়। রুহুল আমিন ভুসির স্বপ্ন একবার ঢাকায় আসবেন। যাবেন ৩২ নম্বন সড়কে। তার মুজিব ভাইয়ের বাড়িটা দেখবেন। কাজল ঢাকায় নিয়ে আসে তাকে। ৩২ নম্বর সড়কে এসে তিনি দেখা পান সেকান্দারের। এই সময় একদল পুলিশ এসে সেকান্দারকে ৬৭৭ নম্বর বাড়ির সামনে থেকে তুলে দিতে চায়। বলে এখানে পাগল বসতে পারবে না। সেকান্দার বলে এই বাড়িতে আমার ভাগ আছে। আমি এখানে বসব। বাড়ি ভাগ করব। আমিন আনতে যায় সেকান্দার। রুহুল আমিন তাকিয়ে থাকেন সেকান্দারের দিকে। তিনি খোঁজেন এই রকম পাগল। কোথাও পাগল খুঁজে পান না। এই সময় তাঁর সামনে এসে দাঁড়ায় মুহিতুল। বলে আপনি এখানে! আমি এসেছি এই বাড়িটা দেখতে। বাড়ি দেখতে এসেছেন! তা এই বাড়ির ইতিহাস জানেন আপনি? অবাক হন রুহুল আমিন। এই বাড়ির আবার ইতিহাস কিসের। এটা তার মুজিব ভাইয়ের বাড়ি। না এই বাড়ির ইতিহাস আছে। এটা ইতিহাসের একটা সমুদ্র। ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কের ৬৭৭ নম্বর বাড়িতে বাস করতেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ৩২ নম্বর সড়কের বাড়িটি বাকিংহাম প্যালেস, হোয়াইট হাউস, ১০ নং ডাউনিং স্ট্রিট, রাইসিনা হিল কিংবা ক্রেমলিনের মতো সরকারি মর্যদা ছিল না। বা নাই। ছিল না কোন নামও। তবে এই বাড়িটি বাঙালি জাতির ভালোবাসার রাজ্যে এক অন্যান্য মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত। এই বাড়িটির আলাদা একটা ইতিহাস আছে। যা পৃথিবীর অন্যকোন বাড়ির নেই। ১৯৬২ সালে আইয়ুব খানের সামরিক শাসন শুরু হয়। বাঙালির মনের মধ্যে দানা বাঁধতে থাকা অসন্তোষ। বাড়তে থাকে অপশাসনের হাত থেকে মুক্তির আকাঙ্খা। শেখ মুজিবুর রহমান দিন দিন আরো বেশি গণমানুষের নেতা হয়ে উঠতে থাকেন। আর ৩২ নম্বরের এই বাড়িও হয়ে উঠতে থাকে মুক্তির প্রতীক। গণমানুষের ভরসা ও আশ্রয়স্থল। ১৯৬২ সালের আইয়ুববিরোধী আন্দোলন, ’৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলন, ’৭০ সালের সাধারণ নির্বাচন, ’৭১ সালের শুরুতে অসহযোগ আন্দোলন- এসব গুরুত্বপূর্ণ সময়ে বঙ্গবন্ধু পরিকল্পনা করা, নেতা-কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় সবই করেছেন এই ৩২ নম্বর বাড়িতে। ’৭১-এর উত্তাল দিনগুলোয় দেশি-বিদেশি সাংবাদিকরাও জাতির পিতার সঙ্গে দেখা করার জন্য এখানে ভিড় করেছিলেন। এ ছাড়া ৭ মার্চের সেই ঐতিহাসিক ভাষণের রূপরেখাও এ বাড়িতেই তৈরি করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। ২৩ মার্চ এই বাড়িতেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাসভবনে স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করা হয়। ১৯৭১ সালের ১ মার্চ থেকে এই বাড়িতে বসে বঙ্গবন্ধু যে নির্দেশ দিতেন সে অনুসারেই চলত দেশ ও বাঙালি জাতি। দৈনিক আজাদ পত্রিকা লিখেছিল ‘বিশ^বাসীর কাছে আজ দিবালোকের মত স্পষ্ট যে বাংলার শাসন ক্ষমতা এখন আর সামরিক কর্তৃপক্ষের এখতিয়ারে নাই বরং তা সাতকোটি মানুষের ভালোবাসার শক্তিতে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর এখন বাংলার শাসন ক্ষমতার একমাত্র উৎস হইয়া পড়িয়াছে।’ বঙ্গবন্ধুর বাসভবন তখন অঘোষিত সরকারি সদর দপ্তরে পরিণত হয়েছিল। বাঙালির আশা আকাঙ্খার ঠিকানা হয়েছিল। হয়ে উঠেছিল নিরাপদ আশ্রয়। আবার শত্রুদের চক্ষুশূল। দেশের প্রেসিডেন্ট হয়ে এই বাড়ি ছাড়েননি বঙ্গবন্ধু। ওঠেননি সরকারি আলিশান বাসভবনে। স্বাধীনতার আগে পরে আওয়ামী লীগের অনেক গুরুত্বপূর্ণ মিটিংও হয়েছে এই বাড়িতে। যদিও কংগ্রেসের অনেক মিটিং নেতাজির বাড়িতে হয়েছে। তবে ৩২ নম্বরের মতো সংগ্রামের সদর দপ্তরে পরিণত হয়নি। পরিণত হয়নি একটি জাতির ঠিকানায়। ৩২ নম্বর একটি জাতির ঠিকানায় পরিণত হয়েছিল। এই ইতিহাসের হাত ধরে কল্পনার পথে হেঁটে গেছে ধানমন্ডি ৩২ নম্বর উপন্যাসটি।
আমি শামস সাইদ। আশির দশকের মাঝামাঝি কোনাে এক বসন্তে পিরােজপুর জেলার, ভাণ্ডারিয়ায় আমার জন্ম হয়েছে । One bright book of life, এমন একটি উপন্যাস লেখার স্বপ্ন আমার । ২০১৭ সালে প্রকাশিত হয়েছে ক্রুশবিদ্ধ কলম। ২০১৮ সালে ‘ধানমন্ডি ৩২ নম্বর’ । জানি না কবে One bright book of life, এমন একটি উপন্যাস লিখতে পারব। তবে সারাজীবন চেষ্টা করে যাব। যেদিন এমন একটি উপন্যাস লিখতে পারব সেদিনের পর আর উপন্যাস লিখব না।