বর্তমান দুনিয়ার কাছে মধ্যযুগীয় খ্রিস্টান সভ্যতার সময়কার মানুষকে মনে হয় অতি দূরবর্তী ও একান্ত অবাস্তব বলে। তাদের নাম ও কার্যকলাপের কাহিনী লিপিবদ্ধ রয়েছে আমাদের ইতিহাসের পাতায়, তাদের গঠিত স্মৃতিসৌধ আজও আমাদের নগরসমূহ সুশোভিত করছে। তবু তাদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কসূত্র আজ এত ক্ষীণ যে কিছুটা কল্পনার সাহায্য ব্যতীত তাদেরকে বুঝবার উপায় নেই। সে তুলনায় বিরাট মুসলিম সভ্যতার প্রভাব সম্যক উপলব্ধি করতে হলে কল্পনার সহায়তা যে বহুগুণ বেশি প্রয়োজন তা বলাই বাহুল্য। যদিও সে যুগের মুসলিম সভ্যতা মধ্যযুগীয় ইউরোপের উপর প্রভাব বিস্তার করে তার অস্তিত্বকেই সঙ্কটাপন্ন করে তুলেছিল এবং শত বন্ধনে জড়িত থেকেও যুদ্ধ-বিগ্রহ ও ভয়-ভীতি অগ্রাহ্য করে শত রকমে তার সঙ্গে গ্রন্থিবদ্ধ ছিল, তবু তা আজ আমাদের কল্পনার বিষয়বস্তু। যে সকল ভাগ্যবান লোক দেশভ্রমণে সক্ষম তাঁরা আজও মুসলিম সভ্যতার স্মৃতিসৌধ সমূহ পরির্দশন করতে পারেন; কিন্তু সে যুগের মানুষ ও তাদের আচার-ব্যবহার আজ আমাদের কাছে হয়তো সম্পূর্ণ অজ্ঞাত অথবা মানসপটে ওঠা আরব্যরজনীর রহস্যময় দৃশ্যের মতই তা ক্ষীণ। এমনকি বিশেষজ্ঞদের পক্ষেও সে যুগের মানুষের জীবনযাত্রার প্রকৃত আলেখ্য উদ্ধার করা একটি সুকঠিন কাজ।