"বাউণ্ডুলে-১৭" বইটির প্রথম অংশের লেখাঃ ফরীদি ভাই মারা গেলেন। চার-পাঁচ রকমের ছােট মাছ দিয়ে ভাত খাওয়ার কথা ছিল তাঁর সঙ্গে। তিনি আর ফিরবেন না, ভাতও খাওয়া হবে না একসঙ্গে। ব্যাপারটা অপরাধী করে আমাকে। কিছুদিন আগে একটা স্বপ্ন দেখি আমি। সংশপ্তক নাটকের, রমজান হয়ে গেছি। ফরীদি ভাইয়ের জায়গায় আমি অভিনয় করছি। সবকিছুই ফরীদি ভাই করছেন, কিন্তু চেহারাটা আমার। এক আজিব স্বপ্ন। হুরমতি এক সময় কান কেটে দেয় আমার। চিৎকার দিয়ে উঠি। মাঝে মাঝে বােবায় ধরে আমাকে। স্বপ্নে আ আ করতে থাকি। পরম মমতায় গায়ে হাত দিয়ে বউ আঁকাতে আঁকাতে বলে, এই এই...।' বউ সেদিনও বলে, এই এই...। স্বপ্নটা অনেকক্ষণ রেশ লাগিয়ে রাখে মনে। ফরীদি ভাইকে নিয়ে আরাে একটা আফসােস আছে আমার। তিনটা কাহিনী বলেছিলাম তাকে। কিছুটা কুঁজো হয়ে বসে থাকা ফরীদি ভাই সােজা হয়ে বসে বললেন, ‘দ্রুত লিখে আনাে, প্রােডিউসার আমি জোগাড় করব।' নাটক তিনটি লেখা হয়নি। যার একটার কাহিনী ছিল—ফরীদি ভাই নাপিত। সকালে দোকান খুলে তার প্রথম কাজ হচ্ছে একটা বিশেষ জায়গা থেকে একটা ক্ষুর বের করে তিনি নিজেই নিজের মাথা ন্যাড়া করেন, তারপর ক্ষুরটা চামড়ার বেল্টে ধার করে রেখে দেন আবার। প্রতিদিন। শেষে পিলে চমকানাে চমক। গল্পটার কথা মনে হলেই ফরীদি ভাইয়ের যাবতীয় ম্যানারিজম ভেজে ওঠে চোখে। সম্ভবত এই নাটকটা কখনােই লেখা হবে না। কে অভিনয় করবে, কার সেই ক্ষমতা আছে! বরং তা নিয়ে উপন্যাস লিখে ফেলব একটা। আহ।
বর্তমান সময়ের তরুণ বাংলাদেশী লেখকদের তালিকা তৈরি করতে গেলে অনায়েসেই প্রথম সারিতে জায়গা করে নেবেন কথাসাহিত্যিক সুমন্ত আসলাম। তাঁর জন্ম সিরাজগঞ্জ জেলায়, মা রওশনারা পারুল ও বাবা মরহুম সোহরাব আলী তালুকদার। স্ত্রী ফারজানা ঊর্মি আর মেয়ে সুমর্মীকে নিয়ে গড়ে উঠেছে এই লেখকের সংসার। সিরাজগঞ্জে বাড়ির পারিবারিক লাইব্রেরিতেই বই পড়ার হাতেখড়ি তার। সেই সূত্রে ছোটবেলা থেকেই বই পড়ার অভ্যাস গড়ে উঠলেও লেখালেখির শুরু ঢাকায় আসার পরে। ছোটগল্পের বই ‘স্বপ্নবেড়ি’ তাঁর প্রকাশিত প্রথম বই, যা প্রকাশনায় ছিল ‘সময় প্রকাশন’। লেখালেখির পাশাপাশি বর্তমানে তিনি কাজ করছেন সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের শিক্ষিত করে তুলতে, চাইল্ড ড্রিম সোসাইটি নামের একটি সংগঠনে। এছাড়াও জড়িয়ে আছেন সাংবাদিকতা পেশার সাথে। পাঠক জনপ্রিয়তার দিক থেকে বিবেচনা করতে গেলে সুমন্ত আসলামের সেরা বই হিসেবে নাম উঠে আসবে ‘হয়তো কেউ এসেছিল’, ‘জানি না কখন’ বা ‘কে তুমি’ অথবা ‘যদি কখনো’ এর মতো জনপ্রিয় সব বই এর নাম । এছাড়াও ‘নীল এই যে আমি!’, ‘আমি আছি কাছাকাছি’, ‘অ্যালিয়ান’, ‘জানালার ওপাশে’, ‘রোল নাম্বার শূন্য’, ‘বীভৎস’, ‘কেউ একজন আসবে বলে’, ‘জিনিয়াস জিনিয়ান’, ‘কোনো কোনো একলা রাত এমন’, ‘তবুও তোমায় আমি’, ‘অনুভব’, ‘মিস্টার ৪২০’, ‘স্পর্শের বাইরে’, ‘ভালো থেকো ভালোবেসে’, ‘ডাঁটি ভাঙা চশমা রাফিদ’, ‘অযান্ত্রিক’, ‘জ্যোৎস্না নিমন্ত্রণ’, ‘প্রিয়ব্রতর ব্যক্তিগত পাপ’, ‘জ্যোৎস্না বিলাস’, ‘মহাকিপ্পন’, ‘তপুর চালাকি’, ‘আশ্চর্য তুমিও!’, ‘হাফ সার্কেল’, ‘কঞ্জুস’, ‘মাঝরাতে সে যখন একা’, ‘আই এম গুড ডু’, ‘আই সে দ্য সান’, ‘তুমি ছুঁয়ে যাও বৃষ্টি তবু’সহ আরো অনেক বই রয়েছে লেখক সুমন্ত আসলাম এর বই সমগ্র এর তালিকায়। এছাড়াও সিরিজ আকারে লিখেছেন ‘বাউন্ডুলে’ ও ‘পাঁচ গোয়েন্দা’র মতো জনপ্রিয় কিছু বই। বর্তমানে তরুণ প্রজন্মের কাছে, এমনকি একুশে বই মেলাতেও সুমন্ত আসলাম এর বই সমূহ এর ব্যাপক চাহিদা লক্ষ্য করা যায়। ভাষাগত সারল্য ও সাবলীলতা তাঁর জনপ্রিয়তার অন্যতম বড় কারণ। মানুষকে কেন্দ্র করে তাকে আবর্তিত করে যা যা আছে তা-ই মূলত তার লেখার বিষয়বস্তু।