‘আলো-আঁধারের যাত্রী’ বইয়ের ফ্ল্যাপের কথাঃ শেখ মুজিবুর রহমান মিছিলের নেতৃত্ব দেন। ভুখা মিছিল। সরকারের পতন ঘটে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে, পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানে। শেখ মুজিব মন্ত্রী হন। কিন্তু ক্ষমতায় কে থাকবে, না থাকবে, তা আসলে কে নির্ধারণ করে? ওয়াশিংটন নাকি পিকিং? আমেরিকার স্বার্থে দাবার চাল বদলে যায়। কাল মন্ত্রী, আজ আক্ষরিক অর্থেই পথে বসে শেখ সাহেবের পরিবার। বাসাভাড়া কে দেবে তাঁদের? তাজউদ্দীনের। বিয়ে হয় লিলির সঙ্গে, বেলি ফুলের মালা বিনিময় করে। ছয় দফা ঘোষণা করেন মুজিব। মুজিব আর তাজউদ্দীনকে জেলে পোরা হয়। রাজপথে জীবন বাজি রেখে লড়াইয়ে নামে জনতা।
যে কথা বলে রাখা দরকারঃ এই উপন্যাসের কাহিনি ১৯৫৬ থেকে ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত বিস্তৃত। এটা উপন্যাস। ইতিহাস নয়। প্রথমা প্রকাশনের আরও দুটো উপন্যাস- যারা ভোর এনেছিল (২০১২) এবং উষার দুয়ারের (২০১৩) আগ্রহী পাঠকেরা পড়ে নিতে পারেন। এই কাহিনি রচনার সময় বিভিন্ন বই থেকে উদার হতে গ্রহণ করা হয়েছে। কোথাও কোথাও তা সরাসরি উদ্ধতির পর্যায়েই চলে গেছে। কোথাও-বা পুনর্লিখন করা হয়েছে মাত্র। বইটা উপন্যাস বলে তথ্যসূত্র দেওয়া হয়নি। আশা করি বিজ্ঞ ও বিবেচক পাঠক এই ব্যাপারটিকে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যে এক দিনে আসেনি, এক বছরেও নয়, এই কাহিনি তা মনে করিয়ে দেবে আবারও। আমাদের স্বাধীনতার মহান যাত্রী, অভিযাত্রী ও অধিনায়কদের জানাই সালাম বিনীত আনিসুল হক
বইয়ের শেষের কথাঃ শেখ মুজিব বললেন, ‘এই যে আমি গাড়ি চালাচ্ছি, তুমি আমার পাশে, এইটার একটা মানে আছে। আমি গাড়ি চালাব, তুমি আমার পাশে থাকবা। কী বুঝলা?’ তাজউদ্দীনের শরীর কাঁটা দিয়ে উঠল। তিনি বোধ হয় একটা কিছু বুঝতে পারলেন। তিনি বোধ হয় জিনিসটা ঠিক বুঝতেও পারলেন না। শেখ মুজিব বললেন, ‘আইয়ুব খানের মার্শাল ল কেন? তোমার কী মনে হয়?’ তাজউদ্দীন বললেন, ‘সাম্রাজ্যবাদীদের স্বার্থরক্ষার জন্য।’ শেখ মুজিব বললেন, ‘সোজা বাংলায় বলি। বাংলার মানুষকে চিরদিন পাঞ্জাবিদের গোলাম করে রাখবার জন্য। এটা আমরা হতে দিব না।’
আনিসুল হক, বাংলাদেশে গত শতাব্দীর আশির দশকে আবির্ভূত হওয়া একজন প্রখ্যাত কবি, কথাসাহিত্যিক, নাট্যকার ও সাংবাদিক। কবিতা, গল্প, উপন্যাস, গদ্যকার্টুন, রম্যরচনা, ভ্রমণকাহিনী, শিশুসাহিত্যসহ সাহিত্যের নানা ক্ষেত্রে রয়েছে তার সাবলীল বিচরণ। বর্তমানে বাংলাদেশের জনপ্রিয় দৈনিক প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক এবং কিশোর আলোর সম্পাদক হিসেবে কর্মরত আছেন। আনিসুল হকের জন্ম ১৯৬৫ সালের ৪ মার্চ নীলফামারীতে। শিশু মনোবিজ্ঞানের শিক্ষক বাবার অনুপ্রেরণায় ছোটবেলা থেকেই আগ্রহ জন্মেছিলো লেখালেখি আর ছবি আঁকায়। ১৯৮৯ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালীন সাহিত্যজগতে প্রবেশ করেন প্রথম কবিতার বই ‘খোলা চিঠি সুন্দরের কাছে’ প্রকাশের মধ্য দিয়ে। আনিসুল হক এর বই প্রকাশের কালটি ছিলো উত্তাল স্বৈরশাসনবিরোধী আন্দোলনের সময়। আনিসুল হক এর বই সমূহ প্রেমের প্রতি পক্ষপাত করলেও একইসাথে সেসময়ের রাজনৈতিক অস্থিরতার চিত্রও ফুটিয়ে তুলেছে। তাঁর অন্যান্য কাব্যগ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ‘আমি আছি আমার অনলে’, ‘আসলে আয়ুর চেয়ে বড় সাধ তার আকাশ দেখার’, এবং ‘জলরংপদ্য’। মুক্তিযুদ্ধের সত্য ঘটনা নিয়ে লেখা উপন্যাস ‘মা’, আনিসুল হক এর বই সমগ্র এর মধ্যে পাঠকের মনে সবচেয়ে বেশি দাগ কেটেছিল। এছাড়াও ‘বীর প্রতীকের খোঁজে’, ‘নিধুয়া পাথার’, ‘আয়েশামঙ্গল, খেয়া’, ‘ফাঁদ’, ‘বেকারত্বের দিনগুলিতে প্রেম’, ‘ভালোবাসা আমি তোমার জন্য কাঁদছি’, ‘ফাল্গুন রাতের আঁধারে’ তার উল্লেখযোগ্য উপন্যাস। বিভিন্ন স্বনামধন্য পত্রিকার সম্পাদকের ভূমিকা পালন করেছেন দীর্ঘদিন, এখনও লিখে যাচ্ছেন পত্রিকার কলাম। লিখেছেন বেশ কিছু টেলিভিশন নাটক ও সিনেমার চিত্রনাট্যও। কথাসাহিত্যে অবদানের জন্য বাংলা একাডেমি পুরস্কারসহ বেশ কিছু পুরস্কার পেয়েছেন বাংলা সাহিত্যের আধুনিক এই লেখক।