ভূমিকা ভিক্টর হুগো ঊনিশ শতকের ফরাসি সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি ও ঔপন্যাসিক ভিক্টর হুগোর জন্ম হয় ১৮০২ খ্রিস্টাব্দে। তাঁর বাবা লিওপোল্ড সিগিবার্ট ছিলেন একজন পদস্থ রাজকর্মচারী। প্রথম যৌবনে হুগো সৈন্যবাহিনীতে কাজ করেন। কাজের সূত্রেই তাঁকে যেতে হয় ইটালি ও স্পেনে এবং তিনি সুযোগ পান সাধারণ মানুষের জীবনের কাছাকাছি আসার। জীবন সম্পর্কে তাঁর বিচিত্র অভিজ্ঞতা লাভ হয়। বিশ বছর বয়সেই সাহিত্য পত্রিকা প্রকাশ করে সাহিত্য চর্চা শুরু করেন। প্রথমে কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হলেও পরবর্তীকালে তিনি গদ্য ও পদ্যসাহিত্যে সমানভাবে লেখনী চালনা করেন। বিষয়বস্তু ও রচনাশৈলীর বিচারে তিনি ফরাসি সাহিত্যে আধুনিকতার রূপকার । সাহিত্য জগতে বিপুল প্রতিষ্ঠার সঙ্গে তাঁর ভাগ্যে জুটেছিল রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ও রাজরোষ। তাঁর উপন্যাসের প্রধান উপজীব্য জুটেছিল মূল্যবোধে বিশ্বাস। ব্যাপক পটভূমিতে কাহিনীর বিস্তার ঘটিয়ে ঘটনা পরস্পরার পরিণতিতে হুগো একটি মহান আদর্শ ব্যক্ত করেছেন। এই দৃষ্টিভঙ্গির অন্যতম প্রধান নজির বর্তমান উপন্যাসটি। গ্রন্থটির প্রথম প্রকাশকাল ১৮৬২ খ্রিস্টব্দ। বিভিন্ন ভাষায় বইটি অনূদিত হয়েছে। ১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দে হুগো শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন। --ড. অনিমেষ সরকার
ভিক্টর মারি হুগো ২৬ ফেব্রুয়ারি ১৮০২ সালে ফ্রান্সে জন্মগ্রহন করেন। নেপোলিয়ন বোনাপার্টের বিশাল সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ একজন কর্মকর্তার সন্তান ছিলেন তিনি। একাধারে সাহিত্য এবং রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন। ফ্রান্সে সা¤্রাজ্য আইন থেকে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় পরিবর্তিত হওয়া এবং সেই প্রক্রিয়ার নানান উত্থান-পতনে তিনি সরাসরি অংশগ্রহণ করেছিলেন। প্যারিসে বসবাসরত ভিক্টর হুগো তরুণ বয়সেই তার কবিতা, কল্পকাহিনি এবং নাটকের জন্য বিখ্যাত এবং কখনো কুখ্যাতও হয়েছিলেন। ১৮৪৫ সালে, তার বিখ্যাত গ্রন্থ লা মিজারেবল লেখার সময়, রাজা তাকে ফ্রান্সের উচ্চকক্ষের সদস্য হিসেবে গ্রহণ করেন। আইনসভার সর্বোচ্চ দলের সঙ্গে তাকে সম্পৃক্ত করা হয়। তিনি সেখানে সবার জন্য বিনা খরচে লেখাপড়া, সার্বজনীন ভোটাধিকার এবং মৃত্যুদণ্ডের বিলুপ্তির ব্যাপারে কাজ করা শুরু করেন। ১৮৪৮ সালে যখন রাজ্যে উন্নতির জোয়ার স্পষ্টভাবে কড়া নাড়ছিল, তিনি লা মিজারেবল লেখা বন্ধ করে রাজনীতিতে মনোনিবেশ করেন। কিন্তু ১৮৫১ সালে যখন দেশের প্রেসিডেন্ট নিজেকে সম্রাট হিসেবে ঘোষণা করেন, হুগোর রাজনৈতিক চেতনার বিরোধিরা তাকে বৃটিশ চ্যানেলের একটি দ্বীপে নির্বাসনে বাধ্য করে। নির্বাসনে থেকেই ১৮৬০ সালে তিনি আবার লা মিজারেবল লেখার কাজে হাত দেন এবং পরের বছর উপন্যাসটি শেষ করেন। ১৮৭০ সালে সম্রাটের পতন হলে হুগো ফ্রান্সে ফেরত আসেন, যেখানে তাকে গণতন্ত্রের মানসপূত্র হিসেবে বিপুলভাবে সম্মানিত করা হয়। ২২ মে ১৮৮৫ সালে ভিক্টর হুগোর মৃত্যুর পরে ফ্রান্সের রাস্তায় তার কফিন বয়ে নেবার সময়ে বিশ লাখ মানুষের ঢল নামে। সেদিন ফ্রান্সের জনগণ যতভাবে সম্মান জানানো সম্ভব, জানিয়ে তার শেষকৃত্যানুষ্ঠান সম্পন্ন করেন।