১৮১৫ সালে মঁসিয়ে শার্লস ফ্রাঁসোয়া বিয়েনভেনু মিরিয়েল যখন দিগনের বিশপ হন তখন তাঁর বয়স প্রায় পঁচাত্তর। ১৮০৬ সাল থেকে এই বিশপের পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন তিনি। যে কাহিনী আমি বলতে যাচ্ছি তার সঙ্গে এই ঘটনার কোনও প্রত্যক্ষ সম্পর্ক না থাকলেও তাঁর বিশপ পদ লাভের সময় তাঁকে কেন্দ্র করে যেসব গুজব রটে, তার কিছু বিবরণ আমাকে অবশ্যই দিতে হবে। কোনও মানুষ সম্বন্ধে লোকমুখে যেসব গুজব শোনা যায়, তার কীর্তিকলাপের মতো এইসব গুজব বা জনশ্রুতিরও একটা বড় রকমের প্রভাব দেখা যায় তার জীবন ও ভাগ্যে। মঁসিয়ে মিরিয়েল ছিলেন আইকস পার্লামেন্টের কাউন্সেলার ও নোবলেসি দ্য রোব-এর সদস্যের পুত্র। শোনা যায় তাঁর বাবা তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর পদে যাতে অধিষ্ঠিত হতে পারে তার জন্য ছেলের অল্প বয়সে অর্থাৎ আঠারো থেকে কুড়ি বছরের মধ্যে বিয়ের ব্যবস্থা করেন তাঁর। পার্লামেন্টের সদস্যদের পরিবারে এই ধরনের প্রথাই প্রচলিত ছিল সেকালে। কথিত আছে এই বিয়ে সত্ত্বেও শার্লস মিরিয়েলকে কেন্দ্র করে অনেক গুজবের সৃষ্টি হয়। তাঁর চেহারাটা বেঁটেখাটো হলেও তিনি বেশ সুদর্শন ছিলেন। প্রথম যৌবনে তিনি বিয়ে করে সংসারী হন এবং যুদ্ধবিদ্যায় পারদর্শিতা লাভ করেন।
ভিক্টর মারি হুগো ২৬ ফেব্রুয়ারি ১৮০২ সালে ফ্রান্সে জন্মগ্রহন করেন। নেপোলিয়ন বোনাপার্টের বিশাল সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ একজন কর্মকর্তার সন্তান ছিলেন তিনি। একাধারে সাহিত্য এবং রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন। ফ্রান্সে সা¤্রাজ্য আইন থেকে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় পরিবর্তিত হওয়া এবং সেই প্রক্রিয়ার নানান উত্থান-পতনে তিনি সরাসরি অংশগ্রহণ করেছিলেন। প্যারিসে বসবাসরত ভিক্টর হুগো তরুণ বয়সেই তার কবিতা, কল্পকাহিনি এবং নাটকের জন্য বিখ্যাত এবং কখনো কুখ্যাতও হয়েছিলেন। ১৮৪৫ সালে, তার বিখ্যাত গ্রন্থ লা মিজারেবল লেখার সময়, রাজা তাকে ফ্রান্সের উচ্চকক্ষের সদস্য হিসেবে গ্রহণ করেন। আইনসভার সর্বোচ্চ দলের সঙ্গে তাকে সম্পৃক্ত করা হয়। তিনি সেখানে সবার জন্য বিনা খরচে লেখাপড়া, সার্বজনীন ভোটাধিকার এবং মৃত্যুদণ্ডের বিলুপ্তির ব্যাপারে কাজ করা শুরু করেন। ১৮৪৮ সালে যখন রাজ্যে উন্নতির জোয়ার স্পষ্টভাবে কড়া নাড়ছিল, তিনি লা মিজারেবল লেখা বন্ধ করে রাজনীতিতে মনোনিবেশ করেন। কিন্তু ১৮৫১ সালে যখন দেশের প্রেসিডেন্ট নিজেকে সম্রাট হিসেবে ঘোষণা করেন, হুগোর রাজনৈতিক চেতনার বিরোধিরা তাকে বৃটিশ চ্যানেলের একটি দ্বীপে নির্বাসনে বাধ্য করে। নির্বাসনে থেকেই ১৮৬০ সালে তিনি আবার লা মিজারেবল লেখার কাজে হাত দেন এবং পরের বছর উপন্যাসটি শেষ করেন। ১৮৭০ সালে সম্রাটের পতন হলে হুগো ফ্রান্সে ফেরত আসেন, যেখানে তাকে গণতন্ত্রের মানসপূত্র হিসেবে বিপুলভাবে সম্মানিত করা হয়। ২২ মে ১৮৮৫ সালে ভিক্টর হুগোর মৃত্যুর পরে ফ্রান্সের রাস্তায় তার কফিন বয়ে নেবার সময়ে বিশ লাখ মানুষের ঢল নামে। সেদিন ফ্রান্সের জনগণ যতভাবে সম্মান জানানো সম্ভব, জানিয়ে তার শেষকৃত্যানুষ্ঠান সম্পন্ন করেন।