"দেশসেরা দশ গোয়েন্দা" বই সম্পর্কে কিছুকথা: বাংলাদেশের সমকালীন কিশােরসাহিত্যের সেরা নয়জন লেখককে কিশােরদের সামনে হাজির করাতে পারা নিশ্চয়ই গৌরবের কাজ।এখন দেখা যাক, কার কাহিনিতে কী আছে-
মুহম্মদ জাফর ইকবালের দলের নাম 'ব্ল্যাক ড্রাগন’ ভয়ঙ্কর দুষ্টু টিটন, ধীর-স্থির বৈজ্ঞানিক চঞ্চল আর মােটকা সাহিত্যিক অণুকে মিলে রাতুলদের দল। ছুটির দিনগুলাে আনন্দে আর অ্যাডভেঞ্চারে কাটানাের জন্য তারা একটা ক্লাব বানাল, নাম ব্ল্যাক ড্রাগন। চার ছেলের সঙ্গে এসে জুটল দুটো মেয়ে, রাতুলের বােন মিথিলা (সারাক্ষণ নাকি সুরে আম্মুকে ভাইয়ের নামে নালিশ করে) আর পাড়ায় নতুন আসা টুনি (যার চোখের দৃষ্টি বরফের মত ঠাণ্ডা)। ব্লাক ড্রাগন ক্লাবের আস্তানার জন্যে তারা হাজির হল পােড়াে বাড়ি মিশকাত মঞ্জিলে। সেখানে শুরু হল এক ভয়ংকর এডভেঞ্চার, সাপখােপ, ভূত-প্রেতের ভয় তার সাথে আছে ভয়াবহ ক্রিমিনাল। বিপদের ওপরে বিপদ। ওরা যখন ভিতরে তখন বাইরে কাজ চলছে ভবনটা ভেঙে ফেলার, বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বের হয়ে আসার সকল পথ। এখন উপায়? মুহম্মদ জাফর ইকবালের এই রহস্য-রােমাঞ্চ গল্পের আরেকটা মজা কিন্তু হাস্যরসে। পাতায় পাতায় পাঠককে খিলখিল করে হেসে উঠতে হবেই। আর ভয়ে গায়ের রােম খাড়াও হয়ে যাবে কখনও কখনও।
আলী ইমামের ‘পাথারিয়ার লাল মাকড়শা' দক্ষ বার্ড ওয়াচার শামিনকে দেখতে ভাবুক বলে মনে হয়। কিন্তু তার অনেক কাজেই তার দুরন্ত সাহসীপনার পরিচয় পাওয়া যায়। অ্যাডভেঞ্চারের বই পড়তে তার যেমন ভাল লাগে, তেমনি রহস্য কাহিনি পড়ে গােয়েন্দাদের রহস্য জট খােলার পদ্ধতিগুলােকে সে গভীরভাবে বিশ্লেষণও করে। জৈন্তাবনে হঠাত করেই একটা খুন হয়ে গেল টুকালি ওঝা। সেইসাথে তার ঝুলি থেকে হারিয়ে গেল মূল্যবান এক লাল মাকড়শা। রহস্যের জালে জড়িয়ে পড়ল সামিন। তারপর ক্ষুরধার বুদ্ধি দিয়ে তার সমাধানও করে সে। যারা প্রকৃতি ও পাখিপ্রেমী তাদের কাছে উপন্যাসটি ভাল লাগবে।
ইমদাদুল হক মিলনের ‘কে’ ঢাকার ছেলে রবিন। ছুটি কাটাতে এসেছে মেজোফুপুর গ্রামের খামারবাড়িতে। ভেবেছিল, সবুজ প্রকৃতির কোলে কদিন হাঁফ ছেড়ে বাঁচবে। সময় কাটাবে ছবি এঁকে আর গল্পের বই পড়ে। কিন্তু দুদিন যেতে না যেতেই অদ্ভুত আর ভুতুড়ে এক রহস্যের মুখে পড়ল রবিন। প্রচলিত অর্থে এই উপন্যাসটিকে গােয়েন্দা কাহিনি না বলেই রহস্য উপন্যাস বলাই ভাল। তবে লেখনির গুনে পাঠককে পুরােটা শেষ না হওয়া পর্যন্ত আটকে রাখবে।
রকিব হাসানের ‘জলদানব রহস্য' এবার ছুটিতে মনস্টার উড়ে বেড়াতে এসেছে তিন গােয়েন্দা। কিশাের, মুসা আর রবিনের সঙ্গে আছে মুসার খালাতাে বােন ফারিহা। ইচ্ছা ছিল স্রেফ ছুটিতে মজা করবে। কিন্তু তিন গােয়েন্দা থাকবে, রহস্য থাকবে না- তাতাে হতে পারে না। সে কারণেই বােধহয় মনস্টার উডের এক অজানা দানব রহস্যের মুখােমুখি হতে হল তিন গােয়েন্দাকে।
আনিসুল হক, বাংলাদেশে গত শতাব্দীর আশির দশকে আবির্ভূত হওয়া একজন প্রখ্যাত কবি, কথাসাহিত্যিক, নাট্যকার ও সাংবাদিক। কবিতা, গল্প, উপন্যাস, গদ্যকার্টুন, রম্যরচনা, ভ্রমণকাহিনী, শিশুসাহিত্যসহ সাহিত্যের নানা ক্ষেত্রে রয়েছে তার সাবলীল বিচরণ। বর্তমানে বাংলাদেশের জনপ্রিয় দৈনিক প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক এবং কিশোর আলোর সম্পাদক হিসেবে কর্মরত আছেন। আনিসুল হকের জন্ম ১৯৬৫ সালের ৪ মার্চ নীলফামারীতে। শিশু মনোবিজ্ঞানের শিক্ষক বাবার অনুপ্রেরণায় ছোটবেলা থেকেই আগ্রহ জন্মেছিলো লেখালেখি আর ছবি আঁকায়। ১৯৮৯ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালীন সাহিত্যজগতে প্রবেশ করেন প্রথম কবিতার বই ‘খোলা চিঠি সুন্দরের কাছে’ প্রকাশের মধ্য দিয়ে। আনিসুল হক এর বই প্রকাশের কালটি ছিলো উত্তাল স্বৈরশাসনবিরোধী আন্দোলনের সময়। আনিসুল হক এর বই সমূহ প্রেমের প্রতি পক্ষপাত করলেও একইসাথে সেসময়ের রাজনৈতিক অস্থিরতার চিত্রও ফুটিয়ে তুলেছে। তাঁর অন্যান্য কাব্যগ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ‘আমি আছি আমার অনলে’, ‘আসলে আয়ুর চেয়ে বড় সাধ তার আকাশ দেখার’, এবং ‘জলরংপদ্য’। মুক্তিযুদ্ধের সত্য ঘটনা নিয়ে লেখা উপন্যাস ‘মা’, আনিসুল হক এর বই সমগ্র এর মধ্যে পাঠকের মনে সবচেয়ে বেশি দাগ কেটেছিল। এছাড়াও ‘বীর প্রতীকের খোঁজে’, ‘নিধুয়া পাথার’, ‘আয়েশামঙ্গল, খেয়া’, ‘ফাঁদ’, ‘বেকারত্বের দিনগুলিতে প্রেম’, ‘ভালোবাসা আমি তোমার জন্য কাঁদছি’, ‘ফাল্গুন রাতের আঁধারে’ তার উল্লেখযোগ্য উপন্যাস। বিভিন্ন স্বনামধন্য পত্রিকার সম্পাদকের ভূমিকা পালন করেছেন দীর্ঘদিন, এখনও লিখে যাচ্ছেন পত্রিকার কলাম। লিখেছেন বেশ কিছু টেলিভিশন নাটক ও সিনেমার চিত্রনাট্যও। কথাসাহিত্যে অবদানের জন্য বাংলা একাডেমি পুরস্কারসহ বেশ কিছু পুরস্কার পেয়েছেন বাংলা সাহিত্যের আধুনিক এই লেখক।