"বাঙালি জাতির কলষ্কিত অধ্যায়: রক্তাক্ত ১৫ আগস্ট" বইটির প্রথম ফ্ল্যাপ-এর লেখাঃ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট হত্যা করা হয়। হত্যাকারীরা এদেশেই জন্মগ্রহণকারী মীর জাফরের অনুসারী বিপথগামী কয়েকজন সেনা কর্মকর্তা। তাদের সহযােগিতা করেছেন আরও কয়েকজন। এটা প্রমাণিত যে, বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পেছনে শুধু ক্ষমতা গ্রহণের উদ্দেশ্যেই কাজ করেনি, এর পিছনে কাজ করেছে ত্রিশ লাখ শহীদের রক্তদানের পর তাদের আদর্শকে ধ্বংস করারও। বঙ্গবন্ধুর ক্রমাগত সাফল্যে এই গণশত্রুদের মাথায় রক্ত চড়ে যায়। তাদের সামনে তখন একটাই পথ খােলা থাকে যে, বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করতে পারলেই মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হবে। সে কারণেই তারা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করতে পেরেছিল। বঙ্গবন্ধু তাঁর সমগ্র জীবন সাধারণ মানুষের মুক্তির জন্য লড়াই করেছেন। সাধারণ মানুষের প্রতিপক্ষ এই লড়াইয়ে বঙ্গবন্ধুর বিরােধী শিবিরে অবস্থান করেছে। সাধারণ মানুষের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা সৃষ্টি হলে সাম্রাজ্যবাদের ক্রীড়নক হিসেবে রাজ্য শাসন করা সম্ভব হবে না। ক্ষমতালােভী এই গণশত্রুরা তাই ১৯৫৪ সালে হক-ভাসানী-মুজিবের বিজয়কে স্তব্ধ করে দিয়েছে। '৫৬, '৬৯ ও '৭০-এর আন্দোলনের বিজয়ের টুটি চেপে ধরার চেষ্টা করেছে। কিন্তু ১৯৭১-এ গােটা বাঙালি রক্তের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে ঐক্যবদ্ধ হয় শত্রুদের বিরুদ্ধে। ত্রিশ লাখ মানুষের রক্তের বিনিময়ে পরাভূত হয় খানসেনা, তথা এদেশের দালালরা। অর্জিত হয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা। অর্থাৎ সাধারণ মানুষের রাজনৈতিক সচেতনতার কারণে বিশাল ক্ষমতাধর পাকিস্তানি বাহিনী পরাজয় বরণ করে। এই অপমানের প্রতিশােধ গ্রহণের স্পৃহা দেখে তারা তাদের আখের সম্পর্কে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। শােষণকে স্থায়ী করার জন্য বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা ছাড়া ঐ হত্যাকারীদের সামনে বিকল্প কোনাে পথ ছিল না। তারা তাই করেছিল।
আনু মাহমুদ তরুণ অর্থনীতিবিদ, প্ৰবন্ধকার, কলাম লেখক ও গ্রন্থকার হিসেবে ইতোমধ্যে বেশ পরিচিতি অর্জন করে সুধী পাঠক সমাজে একটি স্থান আয়ত্ত করতে সক্ষম হয়েছেন। যদিও তিনি তার কর্মপরিসরে সরকারি কর্মকর্তা ও এ্যাডমিনেস্ট্রেটিভ সার্ভিসের সদস্য হিসেবে মোঃ মাহমুদুর রহমান নামেই সমধিক পরিচিত। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ সরকারের উপসচিব এবং জাতীয় গ্ৰন্থকেন্দ্রের পরিচালক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। আনু মাহমুদ বেশ সময় ধরে লেখা-লেখির সাথে জড়িত রয়েছেন এবং অনেক চড়াই উৎরাই করে দীর্ঘ পথ পরিক্রমার মাধ্যমে পরিস্ফুটিত হয়েছেন গ্রন্থকারের বর্তমান অবস্থানে এবং সংগ্রহের ঝুলিতে অর্জন করেছেন আর্থ-সামাজিক সমস্যা সম্পর্কিতসহ বহু বিষয় ভিত্তিক গ্রন্থের সফলতা, যা ইতোমধ্যে পাঠক সমাজে বেশ সমাদৃতও হয়েছে। তাঁর লেখালেখির শুরু হয়েছে সেই ছাত্র অবস্থা থেকে, আর তা ক্ৰমান্বয়ে শিকড় গেড়ে পত্র পল্লবে শোভিত হয়ে শাখা বিস্তার করে বর্তমানে রূপ নিয়েছে কাণ্ডে, বৃক্ষে। কিন্তু তার প্রত্যাশা রয়েছে একে ব্যাপক প্রসার ঘটিয়ে এক বিরাট বটবৃক্ষের রূপ দেয়ার। লেখালেখির জগতে যেমন জড়িযে আছেন তেমনি আর্থ-সামাজিক সংগঠনের সাথে। তাঁর স্ত্রী আনোয়ারা মাহমুদ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। তাদের দুই সন্তান চাঁদনি ও ইযু। তিনি বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ এবং সাবেক সংসদ সদস্য, জনাব মজিবর রহমান তালুকদারের দ্বিতীয় সন্তান।