বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাসে এক জহির রায়হানের পর যে নামটি সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত হয় তা আলমগীর কবির। (১৯৩৭-১৯৮৯)। আলমগীর কবিরের সাধনা শুধুমাত্র চলচ্চিত্র পরিচালনা কি সংসদ আন্দোলন সংগঠনে সীমাবদ্ধ ছিল না; সাংবাদিক, ইতিহাসকার ও চিত্রসমালােচক হিশেবেও তার কীর্তি অপূর্ব। ১৯৬০ দশক থেকে শুরু করে ১৯৮৯ সালে মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি যে অবিচল কর্মযজ্ঞে দিনাতিপাত করেছেন তারই আমলনামা ‘আলমগীর কবির রচনা সংগ্রহ'। 'চলচ্চিত্র ও জাতীয় মুক্তি’ এই গ্রন্থমালার প্রথম খণ্ড মাত্র। অপরাপর রচনা একে একে পরের খণ্ডে স্থান পাবে। 'চলচ্চিত্র ও জাতীয় মুক্তি' গ্রন্থে সংকলিত রচনাবলির অন্যতম প্রধান ব্রত পরাধীন দেশের জাতীয় মুক্তি এবং তার সমান্তরালে নিপীড়িত জাতির আত্মপরিচয় তথা সাংস্কৃতিক বিকাশের স্বপ্ন। আলমগীর কবির একদিকে যেমন জাতীয় মুক্তিসংগ্রামের ভেতর দিয়ে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রকে দেখেছেন, তেমনি চলচ্চিত্রের মধ্য দিয়ে বাঙ্গালি জাতির একাংশের মুক্তিসংগ্রামও প্রত্যক্ষ করতে চেয়েছেন। বর্তমান খণ্ডে সংকলিত প্রবন্ধ-নিবন্ধ, বক্তৃতা-বিবৃতি আর সাক্ষাৎকার মিলিয়ে মােট ৪৫টি রচনার স্তবকে স্তবকে তারই স্বাক্ষর।
সাংবাদিক ও চলচ্চিত্রকার আলমগীর কবির (১৯৩৭-১৯৮৯) নাতিদীর্ঘ জীবনে বিপ্লবী, সমালোচক, সংগঠক প্রভৃতি পরিচয় ধারণ করেছিলেন। প্রথম যৌবনে বিলাত গিয়ে তিনি পাকিস্তান রাষ্ট্রের অন্দরে বাংলাদেশের জাতীয় মুক্তির প্রশ্নটি বুঝতে পেরেছিলেন। ষাটের দশকের মধ্যভাগে দেশে ফিরে যুগপদ চলচ্চিত্র সাংবাদিকতা আর রাজনীতিতে নিয়োজিত হন তিনি। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের ইংরেজি বিভাগের দায়িত্ব গ্রহণ করেন, অনেক কথিকাও পাঠ করেন। শিল্পী, বুদ্ধিজীবীদের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে সংগঠিত করতে এবং সিনেমায় মুক্তিযুদ্ধ তুলে ধরতে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেন জহির রায়হানের সঙ্গে। স্বাধীনতা লাভের পর আলমগীর কবিরের চিন্তা ও কাজের মূল বিষয় দাঁড়ায় চলচ্চিত্র শিল্প গড়ে তোলা। চলচ্চিত্র নির্মাণ, সংগঠন ও সমালোচনার মতন বহুমুখী তৎপরতার দ্বারা যে কর্মপ্রবাহ তিনি রচনা করেন, তার অভিঘাত আজও জীবন্ত। আলমগীর কবির রচিত বই: The Cinema in Pakistan, Film in Bangladesh, This Was Radio Bangladesh 1971, চিত্রনাট্য: ধীরে বহে মেঘনা, সূর্যকন্যা, সীমানা পেরিয়ে এবং মোহনা: চিত্রনাট্য। সম্পাদিত পত্রিকা: Sequence, The Express এবং চলচ্চিত্রকার। পরিচালিত চলচ্চিত্রের মধ্যে: লিবারেশন ফাইটার্স, জহির রায়হান, ধীরে বহে মেঘনা, সূর্যকন্যা, সীমানা পেরিয়ে, রূপালি সৈকতে, মোহনা এবং মণিকাঞ্চন।