বইটির প্রথম ফ্ল্যাপ থেকে নেওয়া ঘন জঙ্গলে একটা মোটা গাছের গুড়ির নিচে তারা শখ করে আসে নি। নিয়তি তাদের টেনে নিয়ে এসেছে। রাজন গুনগুন করে গান ধরে। গানের সুরের মাঝে মিলেমিশে যায় কত নাম না জানা পাখির ডাক। যেন ওরাও শিল্পি। থেমে থেমে তারাও কণ্ঠ দিচ্ছে গানে। কখনও একটা দমকা বাতাস গাছের শরীর নাড়িয়ে দিয়ে যায়। তখন একটা দীর্ঘ খস খস শব্দ হয়। গাছেরাও দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে! ঝিঝিপোকা ডাকে। ডাকে দু একটা ব্যাঙ। কিন্তু কিছুক্ষণ যাবার পর সব পাখির ডাক থেমে যায়। ব্যাঙেরা লাফিয়ে রাজনের কাছাকাছি আসে। ঝিঝি পোকাগুলো ডাকাডাকি বাদ দিয়ে সম্ভবত কান পেতে থাকে সম্মহিত কোন সুরের দিকে। কনক রনি প্রেয়তী সবাই ওর গান শুনতে আরো এক পা এগিয়ে আসে। চারপাশে গোল হয়ে বসে। রনি দুটো কাঠি হাতে নিয়ে পাশে থাকা কচুর পাতায় টোকা দেয়। মৃদু ঠুং ঠাং থুং থাং তরঙ্গ ওঠে। মিটিমিটি আলোর ব্যবস্থাও যেন প্রকৃতিই করে দেয়। শত শত জোনাকি পোকা ওদের মাথার ওপর ভিনভিন করতে থাকে। সেই মিটিমিটি আলোর মধ্যে চলে মৃদু সুরে গান। কিছুক্ষণ আগে তারা একটি সাপ শিকার করেছে। কাঠের আগুনে ঝলসে সেই সাপের স্যুপ তৈরি করা হচ্ছে। মিনিট দশেক জাল করার পর সাপের স্যুপ থেকে দারুণ একটা ঝাঝালো গন্ধ ছড়ায়। সবার চোখে মুখে আনন্দ, খুশি। ছোট ছোট কচু পাতা হাতে নিয়ে একে একে এসে সেই স্যুপ নিয়ে যেতে শুরু করে। চুমুক দিতেই ওদের চোখটা বন্ধ হয়ে আসে। বন্ধ চোখের মধ্যে ভেসে ওঠে বাংলাদেশের ছবি, ঢাকার ছবি, ফার্মগেটের ছবি। আবার যেতে পারবো কি?
সহস্র সুমন। জন্ম সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর উপজেলার চিথুলিয়া গ্রামে। বাবা মো: শাহজাহান আলী, মা মোছা কোহিনূর খাতুন। পড়াশোনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। কর্মজীবন শুরু করেছিলেন দেশ টিভিতে সাংবাদিকতা দিয়ে। কিন্তু তা বেশি দিন ভালো লাগেনি। তারপর রূপালী ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার হিসেবে যোগ দেন। সেখানে কিছু দিন কাজ করার পর ৩৪ তম বিসিএস এ প্রশাসন ক্যাডারে যোগ দেন। বর্তমানে সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে কর্মরত আছেন। পেশাগত জীবনে বৈচিত্র তিনি চান, তেমনি লেখালেখিতেও চান এক ধরণের রোমাঞ্চ। তাই শত ব্যস্ততার মাঝেও নিজ আত্মার খোরাক হিসেবে লেখালেখিটা চলছেই।