তৃতীয় সর্গ— 'সমাগমো নাম তৃতীয় সর্গঃ । কাব্যিক গুরুত্ব বিচারে মেঘনাদবধ কাব্যের তৃতীয় সর্গের চারটি বৈশিষ্ট্য দেখা যায়। ক. প্রমীলা চরিত্রের উপস্থাপনা, খ. প্রতিপক্ষের নায়ক রামচন্দ্রের চরিত্রদীপ্তি প্রকাশের একমাত্র ক্ষেত্র, গ মেঘনাদ-প্রমীলার দাম্পত্যের অচ্ছেদ্য মিলন সংক্রান্ত ভাবমূর্তি রচনা করা, এবং ঘ. যুদ্ধ জীবনের সর্বৈব সুখ ও স্বপ্নকে কীভাবে চুরমার করে দেয় তার নির্দেশিকাকে আগাম প্রতিস্থাপিত করে রাখা। প্রমীলা যথার্থই এক রমণীরত্ব। স্বামীসংলগ্নতায় তার কোমলে-কঠোরে মিশ্রিত অন্তরঙ্গ রূপটিকে ফুটিয়ে তোলাই মধুসুদনের প্রধান লক্ষ্য। প্রকট আত্মমর্যাদা জ্ঞান ও তেজস্বিতায় তাকে সম্পূর্ণ ভিন্ন আদলে গড়ে তোলা হয়েছে। এজন্য প্রয়োজনমত বৈদেশিক দৃষ্টান্তের প্রেরণাকে মধুসূদন স্বাচ্ছন্দে স্বীকার করেছেন। কিন্তু তাই বলে প্রমীলা কখনোই ভারতীয়ত্বের শিকড় থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েনি। মাধুর্য ও রোমান্টিকতায় তাকে তিলোত্তমার সমাদরেই মধুসুদন গড়েছেন। তীব্র বিরহের বিবশ দশা এবং প্রতিকূলতাকে অতিক্রম করার অমিততেজ দুই-ই তাঁর মধ্যে বর্তমান। যৌবন ঐশ্বর্যে, মিলনোলেতা ও স্ফুরিত আবেগছটায় এক ঝকঝকে রমণী হিসাবেই তাকে আমরা লাভ করেছি। প্রমীলাকে মধুসুদনের নারীকল্পনার প্রেরণাগত উৎসস্থল বলে মনে করা যায়। কেকয়ী, দ্রৌপদী, জনা ইত্যাদির চরিত্র প্রমীলারই উত্তরসূরী।