"পক্ষিরাজের ডানা" বইয়ের ফ্ল্যাপের লেখা: আগেই বলে নিচ্ছি গল্প জিনিসটা কিন্তু মােটে দুরকমভাবে বলতে শুনি। এরকম হচ্ছে বিশেষজ্ঞের ভঙ্গিতে বলা। এক্ষেত্রে চালটা হয় একটু ভারিক্কি গােছের, মনে হবে যেন অঙ্কের টিচার ক্লাসে মানসাঙ্ক পড়াচ্ছেন। আরেক ধরনের গল্প বলাও আছে, যেখানে আমরা ছাপার অক্ষরেই গল্পকথকের জাদুকরী কণ্ঠস্বর শুনতে পাই। এ যেন অনেকটা মহাভারতের কথক সৌতি- একের পর এক কাহিনির সরস বিস্তারের মােহনীয় বর্ণনা দিয়ে যাচ্ছেন। রীতিমত রবীন্দ্রনাথের শেষ হইয়াও হইল শেষের দুর্দমনীয় অনুবর্তন। সাইফুর রহমান এক্ষেত্রে যেন সৌতির দেখানাে পথকেই অনুসরণ অক্ষরবন্দি করতে চেয়েছেন ইতিহাসবিখ্যাত সব মানুষের জীবনের অনন্য সাধারণ কিছু ‘ক্ষণ’। তার গল্পগুলােতে তাই কখনাে দেখতে পাই আব্রাহাম লিংকনকে বিশেষ এক মুহুর্তে তার অনুরাগ জন্মে নিলামে তােলা বর্ণশংকর এক যুবতীর প্রতি। অতঃপর তিনি অলৌকিকভাবে জড়িয়ে পড়েন দাসপ্রথা নির্মূলে। তাঁর গল্পে কখনাে আবার হাজির হন বাংলা সাহিত্যের জনপ্রিয়তম লেখক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। বই চুরি করতে গিয়ে নিজেকে সম্পৃক্ত করে ফেলেন ভিন্নরকম একটি ঘটনার সঙ্গে। ইতিহাসের পাতা থেকে ধুলাে ময়লা ঝেড়ে লেখক তুলে এনেছেন কতগুলাে চমকপ্রদ ইতিহাসের অধ্যায়। সেই সঙ্গে আছে তার জাদুকরী কল্পনা। ইতিহাস ও কল্পনা মিলেমিশে তাঁর গল্পে তৈরি হয়েছে এক অপূর্ব শৈল্পিক ইন্দ্রজাল। কয়েকটি গল্পে আবার আছে আমাদের পারিপার্শ্বিকের বৃত্তে ঘটে যাওয়া অদ্ভুত সব ঘটনার দুর্দান্ত কথন। নৃশংস পক্ষপাত, দুলজান বিবির মস্তকাধান, কোটি টাকার পুট, কিংবা পক্ষিরাজের ডানা গল্পগুলােতে রহস্যময়তা, বৈপরীত্য কিংবা অ দ্রুতুড়ে পরিস্থিতির গল্পই যেন শুনতে পাই আমরা। পক্ষিরাজের ডানা গল্পটি লেখকের ভিন্ন আঙ্গিকে লেখা একটি গল্প। নির্মোহ ও চমকপ্রদ শৈলীতে এ ধরনের গল্প বাংলা সাহিত্যে খুব কমই লেখা হয়েছে।
সাইফুর রহমান মূলত গল্পকার। মানবজীবনের বৈপরীত্য ও মনস্তাত্ত্বিক বহুমুখিতা তাঁর লেখার প্রধান উপজীব্য। ছাপার অক্ষরে প্রথম লেখা প্রকাশ 'শিশু' পত্রিকায়। তখন তিনি দশম শ্রেণীর ছাত্র। অল্প বয়সেই ছোটগল্প লেখার অনুপ্রেরণা খুঁজে পান রবি ঠাকুরের গল্পগুচ্ছে। গোড়ার দিকে লেখালেখি ট্রাঙ্কবন্দি থাকলেও বলিষ্ঠ আত্মপ্রকাশ কালি ও কলম পত্রিকায়। প্রথম গল্প “অচেনা মানুষ একটি বৃক্ষ দুটি শালিক'। তবে পাঠকসমাজে বিশেষ স্বীকৃতি পান বাংলাদেশ প্রতিদিনে উপসম্পাদকীয় লিখে। এখনও লিখছেন নিয়মিত, গল্প ও কলাম। কলামের মাধ্যমেই মানুষের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ নিরন্তর। শিক্ষাজীবন প্রাচ্য ও প্রতীচ্যের দুই গুরুত্বপূর্ণ দেশ ভারত ও যুক্তরাজ্য ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক শেষ করে আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক। দ্বিতীয় দফায় স্নাতক যুক্তরাজ্যের কার্ডিফ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে। লিংকন স্-ইন থেকে ব্যারিস্টারি ডিগ্রি। সবশেষে লন্ডন সিটি বিশ্ববিদ্যা লয়ে স্নাতকোত্তর। ইতিহাসের অলিগলি চষে বেড়াবার মূলমন্ত্রটা শিখেছেন আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন বিশ্বখ্যাত ঐতিহ সিক ইরফান হাবিবের কাছে। কিংবদন্তিতুলা আইনজ্ঞ প্রফেসর ফিলিপ থমাস মাঝেমধ্যেই উপদেশ দিয়ে তাঁর জ্ঞানপিপাসার অনেকটাই নিবৃত্ত করেছেন। দেশে ফিরে সাহিত্যসাধনায় সম্পূর্ণ আত্মনিয়োগ। জানা বিষয় অজানা কথা, যুক্তি তর্ক ও গল্প এবং ভিঞ্চির কালো জুতো লেখকের তিনটি নিবন্ধ সংকলন। ২০১৬ সালে প্রকাশিত হয় গল্প সংকলন শরৎচন্দ্রের শরৎ উপাখ্যান ও অন্যান্য গল্প। ২০১৮ সালে প্রকাশিত হয় আরেকটি গল্প পক্ষিরাজের ডানা। ভালোবাসেন মানুষ ও জীবন নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ আর চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বই পড়তে। ছুটির অবকাশে দেশে-বিদেশে ঘুরে বেড়ান। ইউরোপ, আমেরিকা, এশিয়ার নানা দেশ ও গুরুত্বপূর্ণ শহর ভ্রমণ করেছেন।