বইটির ভূমিকা থেকে নেয়াঃ 'রকস্টার' - আমার কাছে বাংলাদেশের সফটওয়্যার ইন্ডাস্ট্রিতে আ ন ম বজলুর রহমান রােকন হচ্ছে রকস্টার। নিজের ছাত্র হিসেবে বলছি না, এখন পর্যন্ত তার ক্ষুদ্র প্রফেশনাল ক্যারিয়ারের দিকে তাকিয়ে, সবাই আমার সঙ্গে একমত হবেন নিশ্চিত। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের প্রথম দিনগুলাে থেকেই দেখছি, রােকন কখনােই একসঙ্গে সবকিছু করতে চায়নি। বরং প্রথাগত ভালাে ছাত্র হওয়ার দিকে নজর না দিয়ে, তার যেটা ভালাে লেগেছে সেটা সবচেয়ে ভালােভাবে করার চেষ্টা করেছে। ক্লাসরুমে সবসময়ই বলি, তুমি যদি ঝাড়দারও হতে চাও তবে দেশের শ্রেষ্ঠ ঝাড়ুদার হয়ে দেখাও। রােকন হচ্ছে আমার এই কথাটির শ্রেষ্ঠ উদাহরণ। সে সফটওয়্যার শিল্পের একজন শিল্পী হতে চেয়েছে এবং দেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ শিল্পী হয়েই দেখিয়েছে। যে কোনাে স্টারের কাছে সবাই শিখতে চায়, তার মতাে হতে চায়, সবাই তাকে অনুসরণ করতে চায়। যার ফলশ্রুতিতে স্টার-এর ওপর বর্তায় অনেক দায়িত্ব। সব রােল মডেল সেই দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে পারে না। কখনাে কখনাে অতিরিক্ত দায়িতৃভারে ভেঙ্গে পড়ে। রােকন কিন্তু তার দায়িত্ব থেকে সরে যায়নি, দায়িত্বকে অবহেলায় ভুলেও থাকেনি। বরং তার চওড়া কাঁধে সমস্ত দায় নিয়ে, বাংলা ভাষাতেই জাভার মতাে প্রােগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ চর্চা এবং শেখানাের মহান ব্রতে রত হয়েছে। কেউ বলতে পারে, টেকনােলজির মত বিষয় আবার বাংলা ভাষাতে বােঝানাে কেন? এতে বিষয়ের মূলসুর কেটে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়। শিক্ষক হিসেবেই বলছি, ক্লাসরুমে যখন ইংরেজিতে লেকচার দেই, বইয়ের বিষয়াবলী সত্যিই মেকানিকাল রােবটের মতাে সহজে বলে দেয়া যায়। কিন্তু তাতে কি নিজে যা বলতে চাইলাম তা কি ঠিকঠাকমতাে বলা হলাে? ছাত্রছাত্রীরাই কি তাদের মনের আশ মেটাতে পারল? বরং ছাত্রছাত্রীরা যখন সত্যিই আরও বুঝতে চায়, আরও গহীণে ঢুকতে চায়, তখন কিন্তু উদাহরণ হিসেবে ঠাকুরমার ঝুলিতে-ও আশ্রয় খুঁজি। পাশের বাড়ির রহিমের সমস্যা এবং ভিনগাঁয়ের করিমের সমাধান দিয়েই গল্প সাজাই। তবে কেন সেই কথাগুলাে টেকননালজির বইয়ে আসতে পারে না? রােকনের প্রথম প্রচেষ্টা "জাভা প্রােগ্রামিং" বইটির সঙ্গেও আমি যুক্ত ছিলাম। ওর প্রথম বইটির মােড়ক উন্মােচন আমিই করেছি। সেদিনই রােকনের কাছে শুনি, জাভার অ্যাডভান্সড বিষয়াবলী নিয়েও বাংলায় বই লেখার আকাঙ্ক্ষার কথা। তার আরও বড় স্বপ্নটার কথা। কিন্তু সে যে এত দ্রুত, এত জটিল একটি বিষয় অর্থাৎ "গ্রেডিং" নিয়ে এত সহজ ও সাবলীলভাবে লিখে ফেলবে, আমি তা ভাবিনি। এই ছােট্ট সহজ ভূমিকা লিখতে গিয়েই বুঝতে পারছি কি অসাধারণ কিন্তু অমানুষিক পরিশ্রম রােকন-কে করতে হয়েছে। যারা আগেই থ্রেড নিয়ে কাজ করেছেন, যারা অপারেটিং সিস্টেম সম্পর্কে ভালাে জ্ঞান রাখেন, তারা বইটি পড়ামাত্রই বুঝতে পারবেন, কতখানি জ্ঞানের গভীরতা থাকলে, এতখানি সাবলীলভাবে এরকম একটি বই লেখা যায়। যারা নতুন, থ্রেড সত্যিই বুঝতে চাচ্ছেন, আমি বলব তারা সৌভাগ্যবান, যে এমন একটি বই মাতৃভাষাতেই পাচ্ছেন। সবসময় নব্য বা হবু প্রােগ্রামারদের বলে এসেছি- খুব ভাল প্রােগ্রামার হতে চাইলে- অপারেটিং সিস্টেম, অথবা আরও সােজাসাপ্টা মেমােরি ম্যানেজমেন্ট সম্পর্কে খুব স্বচ্ছ ধারণা থাকতে হবে। রােকন মােমােরির কাছাকাছি থেকে থ্রেড বােঝানাের চেষ্টা করেছে। খুব সহজ হতাে যদি রােকন সরাসরি বলতাে, থ্রেড ব্যবহার করতে চাও- এই এই কমান্ডগুলাে মুখস্থ করে নাও। রােকন তা করেনি। সে সম্ভবত নিজের কাছেও সৎ থাকতে চেয়েছে। প্রতিটি বিষয়কে প্রথমে সিস্টেমের কাছে নিয়ে গিয়ে বুঝিয়েছে, তারপর উদাহরণ বা ইমপ্লিমেন্টেশনে ঢুকেছে। পাঠকের জন্য যা বিশাল প্রাপ্তি। বাংলা ভাষায় একটি জটিল টেকনিক্যাল বিষয়ের গভীরে পৌঁছে সহজেই পাঠকের সাথে যােগাযােগ (কমিউনিকেট) করা যায় - এটা রােকন করে দেখিয়েছে।
লেখালেখির শুরুটা কবিতা দিয়ে, সেই ছোট্টবেলায়। একটা সময় কবিতার খাতাটি হারিয়ে প্রোগ্রামিংয়ের এডিটরটাই হয়ে যায় লেখালেখির নতুন ক্যানভাস। ছাত্রাবস্থা থেকে প্রোগ্রামিং-ই ছিল তাঁর ধ্যান-জ্ঞান। প্রোগ্রামিংয়ের জন্য পছন্দের ভাষা হলো জাভা। জাভার প্রতি ভালোবাসা থেকেই জাভা ইউজার গ্রুপ বাংলাদেশ (http://www.jugbd.org/) প্রতিষ্ঠা করেছেন। মাতৃভাষায় প্রোগ্রামিং শেখার আনন্দ দিতেই প্রিয় প্রোগ্রামিং ভাষা জাভা নিয়ে লিখে চলেছেন একের পর এক বই। তাঁর লেখার প্রধান বৈশিষ্ট্য – তিনি জাভার যে বিষয়েই লেখেন, সেটি গভীরভাবে ব্যাখ্যা করেন। তাঁর বই পড়লে কী এবং কীভাবের পাশাপাশি ‘কেন’-এর উত্তরও পাওয়া যায়। আ ন ম বজলুর রহমানের প্রথম বই জাভা প্রোগ্রামিং নতুন শিক্ষার্থীদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয়। জাভা থ্রেড প্রোগ্রামিং, অ্যাডভান্সড জাভা প্রোগ্রামিং, জাভা ওয়েব প্রোগ্রামিং-ও সমানভাবেই পাঠক সমাদৃত হয়েছে। জাভা প্রোগ্রামিং বইটির প্রথম সংস্করণ প্রকাশের চার বছর পর এবার বেশ কিছু পরিবর্তন নিয়ে এর দ্বিতীয় সংস্করণটি প্রকাশিত হচ্ছে। লেখা এবং চাকরির পাশাপাশি তিনি নিয়মিত জাভা বিষয়ক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সেমিনার এবং কনফারেন্সে বক্তব্য দিয়ে থাকেন। শেরপুর জেলার ভারেরা গ্রামে জন্ম আ ন ম বজলুর রহমানের, শৈশবটাও কেটেছে সেখানেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সফটওয়্যার প্রকৌশলে স্নাতক সম্পন্ন করে থেরাপ, ভ্যানটেজ ল্যাবসের মতো যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কোম্পানিতে চাকরি করেছেন। এর মধ্যেই গেস্ট ফ্যাকাল্টি হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যপ্রযুক্তি ইনস্টিটিউটে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের শিক্ষার্থীদের জাভা শিখিয়েছেন দুই বছর। এরপর বিকাশ লিমিটেডে কর্মরত ছিলেন সিনিয়র লিড ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে। বর্তমানে তিনি সিনিয়র সফটওয়্যার ডেভেলপার হিসেবে কর্মরত আছেন কানাডার লবলো ডিজিটালে, এবং সস্ত্রীক বসবাস করছেন টরন্টো শহরে।