'বিজ্ঞানীদের কাণ্ডকারখানা' বইয়ের সামারি বিজ্ঞানীদের জীবনী বা কাহিনী মানেই তাদের জন্মসাল, মৃত্যু, কি কি করেছেন কোথায় পড়েছে এমন গৎবাদা সব তথ্য। সেখানে এই বইটি সত্যি খুবই আলাদা। বইটিতে ১৮ জন বিজ্ঞানীর মজার মজার ঘটনা উঠে এসেছে। যে সকল শিশু কিশোরদের মধ্যে আবিষ্কারের তীব্র নেশা আছে তা হাউমাউ করে গিলতে পারে বইটি। কিছু চেনা গল্প কিন্তু কিছু গল্প সত্যি একদম নতুন। বোস স্যারের ভুল, আপেল বালকের মন্দ ভাগ্য, খাদ্যরসিক প্রকৌশলীর আগুনহীন চুলা এমন সব মজার নামকরণে লেখা বইটি। খুব ছোট ছোট তথ্য থেকে না চিন্তা থেকে যে কি বড় আবিষ্কার হইতে পারে সেটা এই বই না পড়লেই আপনি বুঝতে পারবেন। বইটিতে আরো একটু বইয়ের রেফারেন্স নেয়া হয়েছে আমাদের সবার প্রিয় আবদুল্লাহ আল মুতীর "আবিষ্কারের নেশায়" বইটিকে। সত্যি আপনি এই বইটি পড়লে আবিষ্কারের নেশায় ডুবে যাবেন।
'বিজ্ঞানীদের কাণ্ডকারখানা' বইয়ের পরিচিতি বিজ্ঞানীদের জীবনীর কথা শুনলেই মনে হয় খটোমটো কিছু একটা, চোখে মোটা চশমাওয়ালা খুব প্রচণ্ড পড়ুয়া কারও কাহিনি, সারা জীবন ধরে যে বইয়ে নাক গুঁজে কাটিয়েছে। কিন্তু বিজ্ঞানীদের জীবনটা আসলে মোটেও সে রকম নয়, বরং বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানীদের জীবনে অসাধারণ, মজার, অভাবনীয় সব ঘটনা ঘটেছে। এই ব্যাপারটা লেখক শৈশবেই জানতে পারেন। এই ঘটনাগুলোর কথা লেখক ভুলতেই বসেছিলেন প্রায়, কিন্তু ভুলতে দিল না তার ছেলে যায়ান। যায়ানের বয়স মাত্র সাত, কিন্তু এখনই ঘুমাতে যাওয়ার আগে বিজ্ঞানীদের গল্প শোনার জন্য প্রচণ্ড আগ্রহ, প্রতিদিন অন্তত দুজন বিজ্ঞানীর ওপরে কোনো মজার গল্প না শুনলে ঘুমাতে চায় না সে। ওকে প্রতিদিন বিজ্ঞানীদের আর গণিতবিদদের গল্প বলতে গিয়ে লেখক স্মৃতির তথ্যভান্ডারের সিন্দুকটা খুলে আবার ফিরে যান সেই বিজ্ঞানীদের নানা গল্পের জগতে। লেখক যায়ানকে বলেন, আইনস্টাইন, নিউটন, আর্কিমিডিস, মারি কুরি, এডিসনের গল্প, লেখকের সেই ছোটবেলার এবং এখনকারও সব স্বপ্নের নায়কদের কথা, যাদের প্রতিভা, আবিষ্কারের নেশা আর জ্ঞানের পিপাসা বিশ্বকে পাল্টে দিয়েছে চিরদিনের জন্য। এই গল্পগুলো বলতে বলতেই তার মনে হলো, আগামী প্রজন্মের জন্য এগুলো লিখে রাখা বড়ই দরকার। টিভি, ফেসবুক, সোশ্যাল মিডিয়ার এই যুগে আমাদের শিশুরা কাদের নিয়ে ভাববে, কাদের কাহিনি শুনে অনুপ্রাণিত হবে? বিজ্ঞান মজার, বিজ্ঞান আনন্দের, বিজ্ঞানীরাও মজার মানুষ...
রাগিব হাসানের পৈতৃক বাড়ি জামালপুরে, তবে সরকারি কর্মকর্তা ও স্কুলশিক্ষিকা মায়ের এই মেধাবী সন্তানটির জন্ম ও বেড়ে ওঠা চট্টগ্রামে। মেধার স্বাক্ষর রেখেছিলেন মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে। পরবর্তীতে ভর্তি হন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার প্রকৌশল বিভাগে, এবং সর্বোচ্চ মার্কস নিয়ে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। এছাড়া প্রতিটি বিভাগে ভালো ফলাফলের কারণে পেয়েছিলেন গোল্ড মেডেলও। বুয়েটে কিছুদিন শিক্ষকতা করে আমেরিকার ইউনিভার্সিটি অব ইলিনয়ে ছুটে গিয়েছিলেন স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করতে, এবং এখান থেকেই তিনি পিএইচডি সম্পন্ন করেন। তিনি একাধারে শিক্ষক এবং বিজ্ঞানী, তবে তার আগ্রহের মূল বিষয় কম্পিউটার কৌশল। এর তাড়নায় কম্পিউটার নিরাপত্তা ও ক্লাউড কম্পিউটিং নিয়ে গবেষণা করছেন সিক্রেটল্যাব নামের একটি গবেষণাগার প্রতিষ্ঠানে। এছাড়াও তিনি উইকিমিডিয়া বাংলাদেশ চ্যাপ্ট্যারের একজন প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। বর্তমানে তিনি সপরিবারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বার্মিংহামে বসবাস করছেন, কিন্তু বাংলার সাথে ঠিকই সম্পর্ক বাঁচিয়ে রেখেছেন তার বইগুলোর মাধ্যমে। রাগিব হাসান এর বই মানেই সহজ ভাষায় কঠিন জ্ঞানের কথা। তিনি মূলত লেখেন প্রবন্ধ। রাগিব হাসান এর বই সমূহ এর মাঝে উল্লেখযোগ্য হলো ‘বিজ্ঞানীদের কান্ডকারখানা’, ‘গবেষণায় হাতেখড়ি’, ‘মন প্রকৌশল স্বপ্ন অনুপ্রেরণা আর জীবন গড়ার ফরমুলা’, ‘বিদ্যাকৌশল: লেখাপড়ায় সাফল্যের সহজ ফরমুলা’ প্রভৃতি। রাগিব হাসান এর বই সমগ্র এর পাশাপাশি তার ব্লগিংও বাংলা ভাষাভাষী মানুষদের উপকার করছে। তার নিজের ভাষ্যমতে- শিক্ষকতা তার পেশা ও নেশা। তার শিক্ষা তিনি ছড়িয়ে দিতে চান বিশ্বব্যাপী। তাই অনলাইন শিক্ষাদান ওয়েবসাইট শিক্ষক ডট কম গড়ে তুলেছেন। তার এ উদ্যোগ ২০১৩ সালে গুগলের ‘রাইজ’ পুরস্কার লাভ করে। স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও উচ্চশিক্ষার প্রচলন করতে চান তিনি। এছাড়াও গবেষণাকর্মে পারদর্শিতার জন্য ‘ক্যারিয়ার’ পুরস্কার লাভ করেন ২০১৪ সালে।