"দ্য এ্যালকেমিস্ট" বইয়ের ভূমিকার অংশ থেকে: সব জীবনেরই একটা লক্ষ্য থাকে। উচ্চশিক্ষা, মান-সম্মান, অর্থ-বিত্ত, মনের মানুষ সব কিছুই লক্ষ্যার্জনের মাধ্যমেই মানুষ তা অর্জন এবং সুখে জীবন কাটাতে চায়। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হচ্ছে লক্ষ্যটিকে চেনা এবং সেদিকেই আদাজল খেয়ে একনিষ্ট চিত্তে ধাবিত হওয়া। লক্ষ্যের আরেক নাম স্বপ্ন। উন্নতির স্বপ্ন বড় হবার স্বপ্ন অনেকইে দেখে। কেউ কেউ শেষপর্যন্ত তা লালন করে। কেউ কেউ আবার তা শুরুতেই হারিয়ে যে জীবন আসে সেটাই বেঁছে নিয়ে সেভাবেই জীবন কাটিয়ে দেই। স্বপ্ন আমরা সকলেই দেখি তবে হতাশায় পড়ে তা আবার হারিয়েও ফেলি। স্বপ্নের পথে হাঁটতে অনেক সময় মন ভয় পায়। সেই ভয় সামনে এগুতে সায় দেয় না বরং আপত্তি করে। স্বপ্ন পূরণের একাগ্রতা কিংবা ধৈর্য না থাকলে লক্ষ্য যে আজীবন অপূরণীয় থেকে যাবে সেটা স্বাভাবিকভাবেই অনুমেয়। ভীত হৃদয় বলে, কোনাে কিছু চাইলেই যদি না পাওয়া যায় তবে তার পিছে শুধু শুধু সময় নষ্ট করা বৃথা। কিন্তু কষ্ট, শ্রম, অধ্যবসায় এসবের যে কী ক্ষমতা তা অনেকের কাছেই অজানাই থেকে যায়। আমাদের মধ্যে কিছু মানুষ আছে স্বপ্নের পথে পাড়ি দেন ঠিকই কিন্তু মাঝপথে হারিয়ে ফেলেন। তারা কখনােই নিজের সফলতাকে ছুঁতে পারেন না। এমনও আছে যারা সফলতার একদম দ্বারপ্রান্তে গিয়েও হতাশ হয়ে ফিরেন। আবার অনেকে লক্ষ্যের দিকে যাত্রা শুরু করে ভুলে অন্যদিকে ভীতু হয়ে বসে যান। অন্য কোনাে মােহ তাকে আসল গন্তব্য থেকে সড়িয়ে দেয়। এ্যালকেমিস্ট এমন একটি লেখনি যা আমাদের মনস্তত্ত্বকে তথা পুরাে জীবন বদলে দেয়। ‘দ্য এ্যালকেমিস্ট’ অলৌকিক যাদু, স্বপ্ন এবং আমরা যে গুপ্তধন সর্বত্র খুঁজে বেড়াই সেইসব বিষয়ের এক অনন্য উদাহরণ। বইটির লেখক পাওলাে কোয়েলহাে বর্তমানে সবচেয়ে জনপ্রিয় লেখকদের একজন।
ব্রাজিলিয়ান ঔপন্যাসিক পাওলো কোয়েলহো ডি’সুজা ১৯৪৭ সালের ২৪ আগস্ট দেশটির রাজধানী রিও ডি জেনেরিওতে জন্মগ্রহণ করেন। একই শহরে তার শিক্ষাজীবনের শুরু এবং বেড়ে ওঠা। আইন বিষয়ে কিছুদিন পড়াশোনার পর ভ্রমণের নেশায় তা আর শেষ করতে পারেননি। ঐ সময়টা ভবঘুরের ন্যায় ঘুরে বেড়িয়েছেন মেক্সিকো, উত্তর আফ্রিকা, দক্ষিণ আমেরিকা, চিলিসহ ইউরোপের বিভিন্ন অঞ্চলে। এর পরপরই ছোটবেলার স্বপ্ন বই লেখাকে বাস্তবে রূপ দেন। ১৯৮২ সালে ‘হেল আর্কাইভস’ নামক বই দ্বারা সাহিত্য অঙ্গনে প্রবেশ করেন। তবে এই প্রবেশ আকর্ষণীয় ছিলো না। এমনকি দ্বিতীয় প্রকাশিত বই ‘প্রাক্টিক্যাল ম্যানুয়েল অব ভ্যাম্পায়ারিজম’ তার নিজেরই অপছন্দের তালিকায় ছিলো। ১৯৮৭ সালে ‘পিলগ্রিমেজ’ এর পর ১৯৮৮ সালে প্রকাশ পায় তার আরেক বই ‘দ্য আলকেমিস্ট’। পাওলো কোয়েলহো এর বই হিসেবে ‘দ্য আলকেমিস্ট’ বইটিই মূলত কোয়েলহোর লেখক-জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। তবে ‘৮৭ সালে বইটি প্রকাশিত হয়েছিলো ব্রাজিলের একটি ছোট প্রকাশনা সংস্থা থেকে, যারা ন’শোর বেশি কপি ছাপাতে নারাজ ছিলো। ১৯৯৩ সালে একই বই আমেরিকার বিখ্যাত প্রকাশনী হারপার কলিন্স থেকে প্রকাশিত হলে পাঠক মহলে হুলুস্থুল পড়ে যায়। বইটি এখন পর্যন্ত মোট ৮০টি ভাষায় অনূদিত হয়েছে, যা পাওলো কোয়েলহো এর বই সমূহ এর মাঝে অনন্য। কোয়েলহোর কাহিনীগুলোর বিশেষত্ব হলো তার কল্পনাশক্তির জাদুকরী মোহ। কোনো সরল গল্প দ্বারা তিনি গভীর জীবন দর্শনবোধ পাঠকদের মাঝে সঞ্চালন করতে চান, এবং সফলতার সাথে করেও এসেছেন। পাওলো কোয়েলহো এর বই সমগ্র-তে স্থান পাওয়া উপন্যাসগুলোর মাঝে ‘দ্য আলকেমিস্ট’, ‘ব্রিদা’, ‘দ্য ডেভিল এন্ড মিস প্রাইম’, ‘দ্য জহির’, ‘দ্য ভ্যালকাইরিস’ উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও ‘দ্য মাডি রোড’, ‘দ্য রং গিফট’, ‘দ্য জায়ান্ট ট্রি’, ‘দ্য ফিশ হু সেভড মাই লাইফ’, ‘আই উড র্যাদার বি ইন হেল’, ‘রিবিল্ডিং দ্য ওয়ার্ল্ড’ এর মতো ছোটগল্পগুলোতেও দর্শনের প্রমাণ মেলে, যা পাঠকদের গভীরভাবে ভাবতে শেখায়। পাওলো কোয়েলহোর আরেক পরিচয় তিনি গীতিকার। বেশ কিছু জনপ্রিয় ব্রাজিলীয় গানের জনক তিনি।