শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা ঝিন্দের বন্দী বইয়ের সামারিঃ কলকাতার রায় দেওয়ান জমিদারবাড়ি মালিক কালীশঙ্কর রায়। প্রায় দেড়শো বছর পূর্বে হঠাৎ তাঁর আগমন, এসেই তিনি এই জমিদারি কিনে নেন। বছর পাচেকের মাথায় কোন এক অজ্ঞাত লোকের দ্বারা খুন হন। বর্তমানে সেই জমিদার বাড়ির মালিক তারই দুই ছেলে গৌরীশংকর রায় ও শিবশঙ্কর রায়। হঠাৎ একদিন অচেনা এক শহর ঝিন্দ থেকে একলোক আসে, সে গৌরীশংকরকে তাদের দেশের রাজা হতে বলে। বেশ রোমাঞ্চকর ভেবে গৌরীশংকর রাজি হয়ে যান। কিন্তু তিনি সেখানে আসলে আসল রাজা নন, তিনি যাচ্ছেন আসল রাজার নকল হিসেবে। আসল রাজা কোথায় আছে কেউ জানে না। সেখানেই গৌরীশংকর পায় আসল রাজার রাণী রাজ রাজকুমারী কস্তূরীবাঈ কে। এমন করেই চলছে ঘটনা, নকল রাজা হিসেবে সকল দায়িত্ব পালন করতে থাকেন, খুঁজতে থাকেন আসল রাজাকেউ। আসলে সে রাজ্যের ছোট রাজকুমার ক্ষমতার লোভে বন্দি করে রেখেছে আসল রাজাকে। গৌরীশংকর কি উদ্ধার করতে পেরেছিলেন আসল রাজাকে? কস্তূরীবাঈ কে কি সত্যি পেয়েছিলো গৌরীশংকর? গৌরীশংকর এর সাথে কি ঝিন্দের রাজা শংকর সিংয়ের কোন সম্পর্ক আছে? জানতে পড়তে হবে বইটি। ইতিহাস, প্রেম, রাজার পরিবার এই সব কিছু মিশে আছে এই বইয়ে। কিশোর পেরোনো যে কেউ নিশ্চিন্তে পড়তে পারে এই বই।
শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় জন্মেছিলেন ১৮৯৯ সালের ৩০ মার্চ, ভারতের উত্তর প্রদেশের জৌনপুর শহরে। তাঁর আদিনিবাস উত্তর কলকাতার বরানগর কুঠিঘাট অঞ্চলে। লেখক হিসেবে তাঁর প্রথম আত্মপ্রকাশ ঘটে ২০ বছর বয়সে, যখন তিনি কলকাতা বিদ্যাসাগর কলেজে আইন নিয়ে পড়াশোনা করছিলেন। শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় উপন্যাস জগতে বাংলা সাহিত্যকে উপহার দিয়েছেন অমর গোয়েন্দা চরিত্র ব্যোমকেশ বক্সী, যা প্রথম আত্মপ্রকাশ করেছিল ১৯৩২ সালে 'সত্যান্বেষী' গল্পের মাধ্যমে। শুধু উপন্যাস বা গল্প সংকলন নয়, বাংলা সাহিত্যে শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় কবিতাও কম রেখে যাননি। ২২টি কবিতার সংকলন নিয়ে প্রকাশিত 'যৌবন-স্মৃতি' ছিল তাঁর প্রকাশিত প্রথম বই। ১৯১৯ সালে তিনি বি. এ. পরীক্ষায় পাশ করে কলকাতা ছেড়ে সুদূর পাটনায় গিয়ে থাকতে শুরু করেন এবং সেখানেই আইন নিয়ে পড়াশোনা চালাতে থাকেন। আইন নিয়ে পড়াশোনা শেষ করে একদম পুরোপুরিভাবে গল্প ও উপন্যাস লেখায় ঝুঁকে পড়েন। ১৯৩৮ সালে পাটনা ছেড়ে মুম্বাই যান বলিউডে কিছু কাজের উদ্দেশ্যে এবং ১৯৫২ সালে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির সাথে সমস্ত চুক্তি বাতিল করে মুম্বাই ছেড়ে পুনে চলে আসেন। সেখানে থাকাকালেই একের পর এক প্রকাশিত হতে থাকে শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় এর বই সমূহ যার বেশিরভাগই ছিল ভৌতিক, রোমান্টিক ও আধ্যাত্মিকতা সম্পর্কীয় গল্প। ব্যোমকেশ সমগ্র ছাড়াও 'গৌড়মল্লার', 'তুমি সন্ধ্যার মেঘ', 'তুঙ্গভদ্রার তীরে' এর মতো দুর্দান্ত সব উপন্যাস আছে শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের বই এর তালিকায়। শুধু বাংলা নাটক বা চলচ্চিত্র না, তাঁর লেখা ব্যোমকেশ বক্সী জায়গা করে নিয়েছিল হিন্দি টিভি সিরিজ ও হিন্দি চলচ্চিত্রেও। অর্জনের ঝুলিতে অনেক পুরষ্কারের মাঝে তাঁর রয়েছে রবীন্দ্র পুরষ্কার, যা তিনি পেয়েছিলেন 'তুঙ্গভদ্রার তীরে' উপন্যাসটি লিখে এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পান শরৎ স্মৃতি পুরস্কার। ১৯৭০ সালের ২২ সেপ্টেম্বর এই লেখকের জীবনাবসান ঘটে।