ভূমিকা প্রথিতযশা সাহিত্যিক ডাঃ মোঃ লুৎফর রহমান ১৮৮৯ খৃস্টাব্দে মাগুরা জেলার পরনান্দুয়ালী গ্রামে মাতুলালয়ে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা জয়েন উদ্দিন জোয়ার্দার ছিলেন স্টেশন মাস্টার। মাতা সামসুন্নাহার বেগম ছিলেন গৃহিনী। পৈতৃক নিবাস মাগুরা জেলার হাজীপুর গ্রামে। ডাঃ মোঃ লুৎফর রহমান হুগলী কলেজে ভর্তি হবার পর এতো বেশি সমাজ সেবায় আত্মনিয়োগ করেন। শিক্ষকতা দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন। প্রথমে সিরাজগঞ্জের বি. এল. ইন্সটিটিউট, পরে চট্টগ্রামের জোয়ারগঞ্জ স্কুলে শিক্ষকতা করেন। সংসারে স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনার জন্য সব ছেড়ে তিনি কলকাতায় হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা আরম্ভ করেন। ছোটবেলা থেকেই তিনি ছিলেন ভাবুক প্রকৃতির। ১৯১৫ সালে ‘প্রকাশ’ নামে তাঁর কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়। ১৯১৮ সালে প্রকাশিত হয় 'সরলা' উপন্যাস। ১৯১৯ সালে ‘পথহারা’ ও ‘রায়হান' নামে দুটি উপন্যাস প্রকাশিত হয়। ১৯২৭ সালে প্রকাশিত হয় ‘প্রীতি উপহার’ উপন্যাসটি। এ সময় ‘বাসর উপহার’ ও ‘প্রতিশোধ' নামে আরো দুটি উপন্যাস প্রকাশিত হয়। নারী জাতির উন্নতির লক্ষ্যে বাংলা ১৩১২ সালে “নারী শক্তি” নামে একটি পত্রিকা প্রকাশ করেন তিনি। শিশু-কিশোরদের জন্য রচনা করেন “ছেলেদের মাহাত্ম্য কথা” (১৯২৯), “ছেলেদের কারবালা” (১৩৩১), “রাণী হেলেন” (১৯৩৫) প্রভৃতি। ব্যক্তি মানুষের পূর্ণ বিকাশের জন্য তিনি রচনা করেন—উন্নত জীবন, মানব জীবন, মহৎ জীবন, উচ্চ জীবন, সমাজ জীবন, ধর্ম জীবন, যুবক জীবন, মহা জীবন ইত্যাদি প্রব-ন্ধগ্রন্থ। ডাঃ মোঃ লুৎফর রহমানের সমগ্র জীবন কেটেছে সুন্দরের অন্বেষায়। স্বচ্ছ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে তিনি জগৎ ও জীবন সম্পর্কে লিখেছেন। এই মানবতাবাদী, দেশ বরেণ্য সাহিত্যিক যক্ষ্মারোগে আক্রান্ত হয়ে ১৯৩৬ সালের ৩১ মার্চ মাত্র ৪৭ বৎসর বয়সে ইন্তেকাল করেন। -প্রকাশক
মোহাম্মদ লুৎফর রহমান তৎকালীন ব্রিটিশ ভারত যশোর জেলার মাগুরা মহাকুমার (বর্তমান মাগুরা জেলা) পরনান্দুয়ালী গ্রামে ১৮৮৯ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তার মাতা শামসুন নাহার এবং পিতা সরদার মইনউদ্দিন আহমদ, যিনি একজন স্টেশন মাস্টার ছিলেন। এই দম্পতীর চার পুত্র ও এক কন্যার মধ্যে মোহাম্মদ লুৎফর রহমান একজন। তার পৈত্রিক নিবাস ছিল তৎকালীন যশোর জেলার মাগুরা মহাকুমার হাজীপুর গ্রামে। লুত্ফর রহমানের পিতা ছিলেন এফ.এ পাস। ইংরেজি ভাষা ও ইংরেজি সাহিত্যের প্রতি তার পিতার অনুরাগ ছিল। সম্ভবত একারণেই পিতার অনুরাগ লুৎফর রহমানের মাঝে প্রতিভাস হয়েছিল। নারী সমাজের উন্নতির জন্য নারীতীর্থ নামে একটি সেবা প্রতিষ্ঠান গঠন এবং নারীশক্তি নামে একটি পত্রিকা প্রকাশ করেছিলেন তিনি এবং একজন চিন্তাশীল ও যুক্তিবাদী প্রাবন্ধিক হিসেবে পরিচিত হয়েছিলেন। তার প্রবন্ধ সহজবোধ্য এবং ভাবগম্ভীর। মহান জীবনের লক্ষ্য সাহিত্যের মাধ্যমে মহান চিন্তাচেতনার প্রতি আকৃষ্ট হতে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেছেন তিনি। গভীর জীবনবোধ, মানবিক মূল্যবোধ, উচ্চ জীবন, সত্য জীবন, মানব জীবন, সূহ্ম বিশ্লেষণী দৃষ্টিভঙ্গি তার রচনার প্রসাদগুণ। প্রবন্ধ ছাড়াও তিনি কবিতা, উপন্যাস ও শিশুতোষ সাহিত্য রচনা করেছেন। এফ.এ অধ্যয়নকালীন সময়ে লুৎফর রহমান তার নিজ গ্রাম হাজীপুরের 'আয়েশা খাতুন' নামে এক মহিলা সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। আয়শা খাতুনের পিতা মোহাম্মদ বদরউদ্দীন এ সময়ে মুন্সীগঞ্জ রেলওয়ের বুকিং ক্লার্ক ছিলেন। লুৎফর রহমানের সাহিত্য সাধনা শুরু হয়েছিল মূলত কবিতা রচনার মাধ্যমে। ১৯১৫ সালে চল্লিশটি কবিতা নিয়ে তার প্রথম এবং একমাত্র কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ প্রকাশিত হয়। পরে তিনি বিভিন্ন প্রবন্ধ, উপন্যাস, ছোটগল্প, কথিকা, শিশুতোষ সাহিত্য ইত্যাদি রচনা করেছেন। তার কিছু অনুবাদ কর্মও পাওয়া যায়। চরম দারিদ্রের মুখোমুখি যক্ষায় আক্রান্ত হয়ে মানবতাবাদী সাহিত্যিক ডাক্তার লুৎফর রহমান ১৯৩৬ সালের ৩১ মার্চ ৪৭ বৎসর বয়সে বিনা চিকিৎসায় নিজ গ্রাম মাগুরার হাজিপুর গ্রামে মৃত্যুবরন করেন