বইটির ভূমিকা থেকে নেয়াঃ মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। আর সৃষ্টির সেরা জীব বলেই তার থাকবে ব্যক্তিত্ব ও সাফল্য। ব্যক্তিত্ব ছাড়া তার সাফল্য আশা করা যায় না। ব্যক্তিত্বই ব্যক্তি মর্যাদা বৃদ্ধি করে। ব্যক্তিত্বহীন মানুষের সমাজে কোনাে মূল্য নেই। এ পৃথিবীতে তার জন্ম নেয়া আর না নেয়ার মধ্যে কোনাে পার্থক্য থাকে না। ব্যক্তিত্ব মানুষকে মহান করে তােলে। প্রত্যেক মানুষই চায় সফলতা লাভ করতে আর সফলতা লাভ করতে হলে তাকে অবশ্যই পরিশ্রমী, সৎ ও সাহসী হতে হবে। কত্তিমানের যেমন মত্যু নেই তেমনি মানুষ হয়ে জন্ম নিলে অবশ্যই ব্যক্তিত্ব ও সাফল্য অর্জন করতে হবে। সৃষ্টিকর্তার পৃথিবীতে আমরা কি শুধু খাওয়া ও ঘুমের জন্যে এসেছি? অবশ্যই না। আমরা জীবনটাকে ভালােভাবে উপলব্ধি করতে এসেছি। মানুষ হিসেবে প্রত্যেকের এ কথাগুলাে মনে রাখতে হবে। অত্যন্ত দক্ষতাসম্পন্ন ও নীতিবান লেখক ডেল কার্নেগির অসাধারণ বই ব্যক্তিত্ব বিকাশ ও সাফল্যের সহজ পথ। নিউইয়র্কের সবচেয়ে দুঃখী ছেলে ছিলেন তিনি। তিনি ছিলেন দরিদ্র বংশের ছেলে। তাঁর বাসস্থান ছিল নােংরা আর আরশােলাপূর্ণ। এছাড়া নােংরা সব রেস্তোরায় তাকে খাবার খেতে হতাে। তিনি এসব ঘৃণা করতেন। তিনি কাজকেও ঘৃণা করতেন। একসময় তিনি চিন্তা করে দেখলেন, এভাবে জীবন চলে না। কোনাে একটা কাজ করতে হবে। পরে তিনি বয়স্কদের রাতে শিক্ষা দেয়ার কাজ নিলেন। এতে তার অনেক ছাত্র-ছাত্রী হলাে। সেখানে তিনি প্রচুর সুনামও লাভ করেন। তারপর জীবনে বড় হতে গেলে যেমন ব্যক্তিত্ব ও সাফল্য দরকার ঠিক সেভাবে তিনি কাজ করতে লাগলেন। তিনি ছিলেন মিশুক প্রকৃতির লােক। এছাড়া ভালাে বক্তৃতাও দিতে পারতেন। তিনি মানুষের সাথে মিশতে গিয়ে দেখলেন কেন তারা হতাশাগ্রস্থ, কেন তারা সফলতা লাভ করতে পারছেন না। এসব নানা দিক চিন্তা করে ব্যক্তিত্ব বিকাশ ও সাফল্যের সহজ পথ’ বইটি লিখে ফেললেন তিনি। এছাড়াও সবার অজানা চারটি বইও লিখেছিলেন। কিন্তু আদৌ ভাবেননি, এগুলাে খুব ভালাে বিক্রি হবে। তিনিই আজকে সবচেয়ে অবাক হওয়া লেখক। | জন্মের পর মা-বাবা আমাদের লালন-পালন করে বড় করে তােলেন। আবার তারা আমাদের বিদ্যা শিক্ষার জন্য বিদ্যালয়-মক্তবে পাঠান। তখন শিক্ষকরা আমাদের প্রেরণা। উৎসাহ দেন যাতে আমরা বড় হতে পারি। তেমনি ডেল কার্নেগি তাঁর এই বইটি প্রেরণাশক্তি, আদর্শ দিয়ে তৈরি করেছেন যাতে বিশ্ব মানবের কাছে বইটি প্রয়ােজনীয় বলে মনে হয়। তিনি নিজে অনেক পড়তেন, আবার সকলের কথা শুনতেন কিভাবে তারা সাফল্য লাভ করেছেন। তাদের কথা শুনে সত্যিকার অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন। শুধু শিক্ষা লাভ করে সাফল্য অর্জন করা যায় না। তার অবশ্যই ব্যক্তিত্ব থাকতে হবে। অনেকে উচ্চ শিক্ষা লাভ করে কিন্তু তাদের থাকে না ব্যক্তিত্ব। আসলে ব্যক্তিত্ব সম্পূর্ণ আলাদা বিষয়। এটা শেখানাে যায় না। এটা ব্যক্তির নিজের ওপর নির্ভর করে। অনেক সময় দেখা যায় সমাজের অনেক নিচুস্তরের মানুষ বা অশিক্ষিত লােক, শুধুমাত্র ব্যক্তিত্বের জন্য সমাজের সবাই তাদের কদর করে। তারা সমাজের নেতৃত্ব দেয়, গ্রামের মাতবর হয়। এসবের কারণ হচ্ছে ব্যক্তিত্ব। ব্যক্তিত্বই মানুষকে অনেক উপরে নিয়ে যায় । এর সাথে শিক্ষার কোনাে মিল নেই। একজন ব্যক্তি শুধুমাত্র উচ্চ ডিগ্রিপ্রাপ্ত হলেই হয় , তাকে ব্যক্তিত্ববানও হতে হয়। ব্যক্তিত্ববান লােকের কাছে সবাই যায়। সুতরাং আপনাকে নয়, আপনার চারিত্রিক গুণাবলী বলে দেবে আপনি কে? ব্যক্তিত্বের পাশাপাশি লেখক সাফল্যের কিছু সহজ পথের কথাও বলেছেন যা একটি ব্যক্তির জন্য খুবই প্রয়ােজন। মানুষ জ্ঞান, বুদ্ধির অভাবে হাতের কাছে থাকা সুযােগটাও কাজে লাগাতে পারে না। অপরদিকে দেখা যায়, একটু বুদ্ধির জন্য সহজে একটা লােক সফলতা লাভ করেছে। শুধু সাফল্যের পেছনে দৌড়ালে হবে না, অধ্যাবসায়, চেষ্টা, সাধনাও থাকতে হবে। স্বপ্ন দেখতে হবে। তাহলেই জীবনে সফলতা আসবে। আপনি পরিশ্রমী হলে সাফল্যই আপনার হাতে ধরা দেবে। তখন আর আপনাকে সাফল্যের পেছনে দৌড়াতে হবে না। ব্যক্তিত্ব বিকাশ ও সাফল্যের সহজ পথ’ একটি চমৎকার বই যা শুধু আপনাকে দিতে প্রস্তুত। আমি নিশ্চিত এ বই পড়ে আপনি জীবনে সফলতা লাভ করতে পারবেন। বইয়ের এক একটি প্যারায় এক একটি সফলতা রয়েছে। তাই বলছি, সফলতার পেছনে দৌড়ে পরিশ্রমী, কৌশলী হয়ে উঠুন আর ব্যক্তি বিশেষদের মতাে সাফল্য অর্জন করে বিশ্ব মানবের কাছে রেকর্ড করুন।
ডেল ব্রাকেনরিডজ কার্নেগী, এক দরিদ্র কৃষক পরিবারে ২৪ নভেম্বর, ১৮৮৮ সালে জন্ম নেওয়া এই আমেরিকান লেখক তাঁর আত্ম-উন্নয়নমূলক প্রশিক্ষণ পদ্ধতি ও বইয়ের পাতায় আজও বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় এক নাম। সেলফ-ইম্প্রুভমেন্ট, সেলসম্যানশিপ, করপোরেট ট্রেনিং, পাবলিক স্পিকিং, ও ইন্টার পার্সোনাল স্কিল এর মতো দারুণ সব প্রশিক্ষণের উদ্ভাবন ও এসব বিষয়ে লেখা ডেল কার্নেগী এর বই সমূহ আশার আলো দেখিয়েছে অসংখ্য হতাশাচ্ছন্ন মানুষকে। মিসৌরিতে দরিদ্র কৃষক পরিবারে জন্ম নেওয়ার দরূণ বালক বয়স থেকেই কাজ করেছেন ক্ষেতখামারে। এর মাঝেও ওয়ারেন্সবার্গের সেন্ট্রাল মিশৌরি স্টেট ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা চালিয়ে গিয়েছেন। কলেজ শেষে জীবিকার তাগিদে বেকন, সাবান এবং লার্ড (শূকরের চর্বি মিশ্রিত করা) তৈরির কাজও করতে হয় আর্মর অ্যান্ড কোম্পানির জন্য। ফার্মের প্রধান হিসেবে অনেক সাফল্য লাভ ও ৫০০ ইউএস ডলার সঞ্চয়ের পর ১৯১১ সালে বহুদিনের লালিত স্বপ্ন অধ্যাপক হওয়ার জন্য বিক্রয় সেবার কাজটি ত্যাগ করেন তিনি। কিছু ব্যর্থতার অভিজ্ঞতা ঝুলিতে নিয়ে যখন ওয়াইএমসিএ- এর ১২৫ নম্বরে বাস করতে শুরু করেন, তখনই পাবলিক স্পিকিং এর ধারণাটি মাথায় খেলা করে কার্নেগীর। সেই সময় মোট লভ্যাংশের ৮০% শতাংশের বিনিময়ে ওয়াইএমসিএ এর পরিচালকের কাছে শিক্ষা প্রদানের আগ্রহ প্রকাশ করেন। এভাবেই ১৯১২ সাল থেকে কার্নেগী কোর্সের যাত্রা শুরু হয়। পুরো আমেরিকাবাসীর কাছে ধীরে ধীরে আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধির পথ হয়ে উঠে তার পদ্ধতি। ডেল কার্নেগী এর বই সমগ্র এর মধ্যে ‘হাউ টু উইন ফ্রেন্ডস অ্যান্ড ইনফ্লুয়েন্স’ বইটিকে তার সেরা অবদান হিসেবে ধরা হয়। প্রথম প্রকাশের মাত্র কয়েক মাসের মধ্যেই যার ১৭তম মুদ্রণও প্রকাশ করতে হয়েছিলো। ডেল কার্নেগী এর লেখাগুলো বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। ‘বিক্রয় ও জনসংযোগ প্রতিনিধি হবেন কীভাবে’, ‘বন্ধুত্ব ও সম্পদ লাভের কৌশল’, ‘বড় যদি হতে চাও’, ‘ব্যক্তিত্ব বিকাশ ও সাফল্যের সহজ পথ’ এমন নানা নামের অনূদিত ডেল কার্নেগী বাংলা বই অনুপ্রেরণা যোগাচ্ছে বাংলাভাষী পাঠকদেরও। ডেল কার্নেগী শ্রেষ্ঠ রচনাসমগ্র এর মধ্যে আরও আছে ‘দ্য বায়োগ্রাফি অব আব্রাহাম লিংকন’, ‘ফাইভ মিনিট বায়োগ্রাফিস’ এবং ‘বিশ্বায়নের পটভূমি’। ১ নভেম্বর, ১৯৫৫ সালে আমেরিকান এই অধ্যাপক মৃত্যুবরণ করেন।