অন্তরঙ্গরচনাকার সৈয়দ মুজতবা আলীর কালকয়ী জনাদৃতির অন্যতম কারণ তাঁর 'উজ্জ্বল শুভ্র হাস্য'। এ-ব্যাপারে বঙ্কিম প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথ যা বলেছেন তা মুজতবা প্রসঙ্গেও হুবহু প্রযোজ্য: '... উজ্জ্বল শুভ্র হাস্য সকল বিষয়কেই আলোকিত করিয়া তুলিতে পারে। ...এই হাস্যজ্যোতির সংস্পর্শে কোনো বিষয়ের গভীরতার গৌরব হ্রাস হয় না, কেবল তাহার সৌন্দর্য রমণীয়তার বৃদ্ধি হয়, তাহার সর্বাংশের প্রাণ এবং গতি যেন সুস্পষ্টরূপে দীপ্যমান হইয়া উঠে।'' বিমল হাস্যরসের যেন অফুরান এক ডেটা- ব্যাংক মুজতবা। সেখানে পাঠক রসটির সব কটি রকম মজুদ পায়-ত্রৈলোক্যনাথের হৃদয়বৃত্তিক কৌতুক, বঙ্কিমচন্দ্রের বিষণ্ণ হাস্য, প্রমথ চৌধুরীর বুদ্ধিবৃত্তিক কৌতুক, পরশুরামের প্রসন্ন হাস্য। মুজতবা আলীর ব্যাপক পাঠকপ্রিয়তার আরেকটি কারণ তাঁর উইটের চেয়ে বেশি হিউমার। তাই বলে উইটের কমতি নাই মুজতবায়। কারণ উইট হচ্ছে হিউমারেরই উন্নয়নের উপাদান, বুদ্ধিপ্রধান বৈদগ্ধ্যরসরূপে প্রাণবান হাস্যরসের শক্তিসঞ্চারী জ্ঞাতি। হিউমার যদি মানসিক অবস্থা, উইট তবে মানসিক শক্তি। হিউমার যদি বিশেষ, উইট তবে নির্বিশেষ। এই নির্বিশেষের পরশেই জীবনানুসৃতি হয়ে ওঠে মহৎ শিল্পকৃতি। সে- সূত্র মুজতবা আলী একজন মহৎ শিল্পী। তাঁর অন্তরঙ্গরচনার শৈলী নজিরবিহীন।
জন্ম ৭ই এপ্রিল ১৯৬৪, লালবাগ, ঢাকা । পিতা প্ৰয়াত সাইফুর রহমান। মাতা প্ৰয়াত আনজিরা খাতুন। পিতৃব্য প্রয়াত কবি হাবীবুর রহমান, খ্যাতনামা শিশুসাহিত্যিক । শিশুসাহিত্যের সকল শাখায় সমান স্বচ্ছন্দ। ২০০৬ সালে পেয়েছেন বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার। সবচেয়ে কম বয়সে খামখেয়ালি ছড়াগ্রন্থের জন্য পেয়েছেন শিশু একাডেমী আয়োজিত অগ্রণী ব্যাংক শিশুসাহিত্য পুরস্কার। পরে এই পুরস্কার পেয়েছেন আরও পাঁচবার । এ ছাড়াও পেয়েছেন সিকানন্দার আবু জাফর সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৪), নুরুল কাদের শিশুসাহিত্য পুরস্কার (২০০৩), পদক্ষেপ সাহিত্য পুরস্কার (২০০৫), ছােটদের পত্রিকা পুরস্কার (২০০৭), ছোটদের মেলা পুরস্কার (২০০৯/২০১০), জাতীয় ছড়া উৎসব। ২০১১ সম্মাননা, শামসুর রাহমান সাহিত্য পুরস্কার (২০১১) এবং ওয়েস্ট এন্ড হাইস্কুল পুনর্মিলনী সম্মাননা। ২০১১ । কলকাতা থেকে অন্নদাশঙ্কর সাহিত্য পুরস্কার ২০১২। প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা দুই শতাধিক। সবই শিশুসাহিত্য। দেশের খ্যাতিমান সকল প্রকাশনা সংস্থা থেকে এক বা একাধিক বই প্ৰকাশিত হয়েছে । দশ বছর সম্পাদক ছিলেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র থেকে প্রকাশিত কিশোর-তরুণদের উৎকর্ষধ্যমী মাসিক আসন্না-র । অধুনালুপ্ত দৈনিক বাংলার কিশোরদের পাতা সম্পাদনা করেছেন। পাঁচ বছর । বর্তমানে চ্যানেল আই-এর জেনারেল ম্যানেজারের দায়িত্বে কর্মরত। সাপ্তাহিক-এর প্রকাশকও তিনি। এ ছাড়া বাংলা একাডেমির ফেলো, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের স্থাপনা-সদস্য। প্রিয় শখ পুরোনো বই ও চিত্ৰকলা সংগ্ৰহ, বইপড়া, দাবাখেলা, রবীন্দ্রসংগীত শোনা ।