"ইংল্যান্ডের রূপকথা"বইটির প্রথমের কিছু অংশ: এক চিরন্তনী গল্পের প্রবহমান ধারায় আজও সবচেয়ে সজীব, প্রাণবন্ত, রসঘন ও কৌতূহল উদ্দীপক গল্প হচ্ছে ককথা। রূপকথার গল্প রূপকাশ্রিত নাটকীয় ঘটনা-সংঘটনের অপূর্ব চিত্রমালা। এইসব গল্পের কাহিনী স্বচ্ছততায়া নদীর মতাে বেগবান, চরিত্রগুলাে অতিমানবিক, দুর্দম ও সাহসী, ভাষারীতি মানুষের সহজাত মৌখিক ভঙ্গিসমৃদ্ধ এবং গল্পগুলাে সুবিন্যস্ত, দৃঢ় নাটকীয় ও সমৃদ্ধ সহজিয়া রসে সিক্ত। সর্বমানবিক আবেদনের কারণে রূপকথার গল্প যুগের পর যুগ ধরে বংশ-পরম্পরায় এগিয়ে চলেছে। এসব গল্পের মৃত্যু নেই। রূপকথা শুধুমাত্র বহমান সময়ের ছবি ধারণ করে তাই নয়, রূপকথা আসলে প্রতীকায়িতভাবে জীবনেরই অনতিক্ষুদ্র অভিজ্ঞতার সারমর্ম উপহার দেয়। যে জাতি যত বেশি উন্নত সে জাতির রূপকথার গল্প তত বেশি সমৃদ্ধ। যাদের গৌরবময় অতীত-গাথা রয়েছে তাদের রূপকথা ততবেশি চিত্তাকর্ষক। কল্পনাশক্তির সহজাত ক্ষমতায় গল্পগুলাে আকর্ষণীয়, গতিবেগসম্পন্ন ও চিত্তমনােহরণকারী। প্রাচীন জাতিগুলাের মধ্যেই রূপকথার সন্ধান তাই বেশি পাওয়া যায়। একই রূপকথা আবার বহুদেশে বিভিন্ন ধারায় প্রচলিত রয়েছে। কাহিনী ঈষৎ পরিবর্তিত হয়ে আরেক জনগােষ্ঠীর কাছে সেই গল্প নির্মিত হয়েছে অন্যভাবে। রূপকথার এই বহু বিচিত্র পথ পরিক্রমার মধ্য দিয়ে আমরা মানব-ইতিহাসের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হয়ে পড়ি। রূপকথার গল্পে শুভ ও কল্যাণের জয় হয়। অসুন্দর ও অকল্যাপ পরাজিত হয় বারবার। রূপকথার গল্পে প্রতীকায়িতভাবে। শেষ পর্যন্ত মানুষের জয়গান লিপিবদ্ধ থাকে। তাই রূপকথার গল্প আমাদের কাছে আজও অতি প্রিয়। আজও রূপকথা অবিসংবাদিতভাবে সাহিত্যের একটি জনপ্রিয় মাধ্যম। সর্বমানবিক চেতনালব্ধ বিশ্ববােধ ও ভ্রাতৃত্বের প্রতীক হয়ে আছে রূপকথা। রূপকথার মৃত্যু নেই। রূপকথা জীবনেরই স্বপ্ন-সম্ভাবনার প্রতীক বলেই সে অমর। শিল্পগুণান্বিত মাধ্যম বলেই প্রভাবসঞ্চারী প্রাচীন জনগােষ্ঠীতে রূপকথার সংখ্যাধিক্য লক্ষণীয়। ভারতবর্ষ, চীন, জাপান, ল্যাটিন আমেরিকা, জার্মানি, স্ক্যান্ডিনেভীয় দেশসমূহ, ইংল্যান্ড, কোরিয়া, আফ্রিকা ইত্যাদি দেশে বিভিন্ন ধরনের রূপকথার গল্প পাওয়া যায়। প্রতিটি গল্পই অভিনব, যৌক্তিক পর্যালােচনা করলে বােঝা যাবে গল্পগুলাে নিরেট গল্প নয়, একটি জাতির প্রতিনিধিত্বকারী সংস্কৃতির ছাপ রয়েছে এগুলােতে, আত্মপরিচয়ের সন্ধানে ব্যাপৃত প্রতিটি গল্প যেন ইতিহাসের ঘুম ভাঙিয়ে কথা বলে ওঠে।
জন্ম ৭ই এপ্রিল ১৯৬৪, লালবাগ, ঢাকা । পিতা প্ৰয়াত সাইফুর রহমান। মাতা প্ৰয়াত আনজিরা খাতুন। পিতৃব্য প্রয়াত কবি হাবীবুর রহমান, খ্যাতনামা শিশুসাহিত্যিক । শিশুসাহিত্যের সকল শাখায় সমান স্বচ্ছন্দ। ২০০৬ সালে পেয়েছেন বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার। সবচেয়ে কম বয়সে খামখেয়ালি ছড়াগ্রন্থের জন্য পেয়েছেন শিশু একাডেমী আয়োজিত অগ্রণী ব্যাংক শিশুসাহিত্য পুরস্কার। পরে এই পুরস্কার পেয়েছেন আরও পাঁচবার । এ ছাড়াও পেয়েছেন সিকানন্দার আবু জাফর সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৪), নুরুল কাদের শিশুসাহিত্য পুরস্কার (২০০৩), পদক্ষেপ সাহিত্য পুরস্কার (২০০৫), ছােটদের পত্রিকা পুরস্কার (২০০৭), ছোটদের মেলা পুরস্কার (২০০৯/২০১০), জাতীয় ছড়া উৎসব। ২০১১ সম্মাননা, শামসুর রাহমান সাহিত্য পুরস্কার (২০১১) এবং ওয়েস্ট এন্ড হাইস্কুল পুনর্মিলনী সম্মাননা। ২০১১ । কলকাতা থেকে অন্নদাশঙ্কর সাহিত্য পুরস্কার ২০১২। প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা দুই শতাধিক। সবই শিশুসাহিত্য। দেশের খ্যাতিমান সকল প্রকাশনা সংস্থা থেকে এক বা একাধিক বই প্ৰকাশিত হয়েছে । দশ বছর সম্পাদক ছিলেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র থেকে প্রকাশিত কিশোর-তরুণদের উৎকর্ষধ্যমী মাসিক আসন্না-র । অধুনালুপ্ত দৈনিক বাংলার কিশোরদের পাতা সম্পাদনা করেছেন। পাঁচ বছর । বর্তমানে চ্যানেল আই-এর জেনারেল ম্যানেজারের দায়িত্বে কর্মরত। সাপ্তাহিক-এর প্রকাশকও তিনি। এ ছাড়া বাংলা একাডেমির ফেলো, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের স্থাপনা-সদস্য। প্রিয় শখ পুরোনো বই ও চিত্ৰকলা সংগ্ৰহ, বইপড়া, দাবাখেলা, রবীন্দ্রসংগীত শোনা ।