...আমি শুধু কষ্ট করেছি, তা নয়। প্রচুর কষ্ট দিয়েছি, অন্যদের। কাছের মানুষদের। কষ্ট এবং প্রচ্ছন্ন দুঃখ থেকেই আনন্দের জন্ম। জীবনে চালাকি করতে হয়। আমিও করেছি। কিন্তু সাজ্জাদের কাছে আমি চালাক হতে চাইনি। বন্ধুর মতো অনেক কিছু বলেছি, যা আমার আমি হবার জন্য মূল্যবান ছিলো। অনেক অলিগলির মধ্যে হারিয়ে গিয়ে নিজের এগোবার রাস্তা এবং সাহস খুঁজে পেয়েছি। হারিয়ে যাবার দরকার ছিলো আমার। ভালো মানুষ, ভালো স্বামি, ভালো বাবা - কোনোটাই আমি নই। আমার কাছে চিরকালের প্রশ্ন, ভালো কী ? মাথা উঁচু করে বলতে পারি, খারাপ লোক আমি নই। গুণ সকলের মধ্যে থাকে। গুণ টেবিল সল্টের মতো। কিন্তু সেই গুণগুলো নিয়ে সেই মানুষটা কী করে ? জনপ্রিয় হতে চায় ? সকলের কাছে ভালো হতে চায় ? নাকি নিজের কাছে সৎ ? সততার সংজ্ঞাটা কী ? এইসব গুরুগম্ভীর সত্যিগুলো নিয়ে সহজভাবে খোলামেলা আলোচনা। সহজ সরল কথা। সত্যি কথা। সাজ্জাদ লেখে ভালো। অনেক প্রশ্ন। অনেক গভীর জায়গায় খোঁচা দেয়। সেখান থেকে কিছু একটা দাড় করানো।... -অঞ্জন দত্ত এই ম্যাজিক অঞ্জন দত্ত’র ম্যাজিক। অঞ্জন কী হতে চেয়েছিলেন ? কী হলেন ? আপনারা তাঁকে কীসের মর্যাদা দিলেন ? ইন্ডাস্ট্রি তাঁকে কতটা চিনতে পারলো ? অঞ্জন কী ? অঞ্জন কেন ? অঞ্জন কার ? আমি জেনে গেলাম, অন্য সত্য। ব্যর্থ মানে নিজেকে ভীষণভাবে ব্যর্থ ভাবা এক অভিনেতার গল্প। গান যাঁর উন্মাদনায় নেই। উত্তেজনায় নেই। কিন্তু গান চলে এল প্রচন্ড প্রতাপ নিয়ে সামনে। আরও অনেক সত্য, বন্ধুত্বের সত্য, প্রেমের সত্য, দ্রোহের সত্য। সব নতুন করে সামনে এল। অঞ্জন দত্ত সুবিশাল এক চিত্রনাট্য। তাই ‘অঞ্জনযাত্রা’য় গল্প হলো চরম কাটাকাটির। একটা গল্প কেটে জন্ম নিল নতুন গল্প। তৈরি হলো চিত্রকল্প। সঙ্গে একদল স্বপ্ন। অঞ্জন দত্ত’র জীবনের অমানুষিক স্ট্রাগল, বৈচিত্রে পূর্ণ ছন্দময় ছন্দহীনতায় ঠাসা অভিজ্ঞতার ‘সারি’। পেরণা পাবে একটা নতুন পৃথিবী। -সাজ্জাদ হুসাইন
বিচিত্র পরিভ্রমণের মধ্য দিয়ে নিজেকে আবিষ্কারের আনন্দ নিয়ে লিখেন সাজ্জাদ হুসাইন। বিরল মানুষ এবং প্রকৃতি তার লেখার প্রাণশক্তি। লেখার জন্য কখনও ঢুকে পড়েন দার্জিলিংয়ের মেঘ-কুয়াশার মধ্যে, অঞ্জন দত্তকে সঙ্গে নিয়ে। সেখানে গিয়ে অদ্ভুত নস্টালজিয়ার মধ্যে ডুবে গিয়ে রচনা করেন অঞ্জন দত্তর আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ ‘অঞ্জনযাত্রা’। এরপর আবার থিয়েটারের অঞ্জনকে নিয়ে চলে যান কলকাতার হাতিবাগানের ধসে পড়া থিয়েটারপাড়ায়। সেখানে প্রখর রোদ্দুরে অঞ্জন দত্তকে সাথে করে চলে যান নটী বিনোদিনীর বাড়ির সামনে। রাস্তার মাঝখান বরাবর দাড়িয়ে থাকা গিরীশ ঘোষের বাড়ির কম্পাউন্ডে। ম্যাজিক্যাল থিয়েটার ‘সারকারিনা’য়। সেই সূত্রে ‘ছাপাখানার ভূত’-এর উদ্যোগে ঢাকার মঞ্চে প্রথম মঞ্চস্থ হয় অঞ্জন দত্তর প্রথম নাটক ‘সেলসম্যানের সংসার’। সাজ্জাদ লিখেন অঞ্জন দত্তর নাট্যজীবন নিয়ে দ্বিতীয় গ্রন্থ ‘নাট্যঞ্জন’। খুড়ে খুড়ে খুজে বের করেন অন্য এক অঞ্জনকে। এরপর সাজ্জাদ বেরিয়ে পড়েন মৃত্যুর অপার রহস্যময়তা জানার সন্ধানে। ঈশ্বরবিশ্বাস, পরকাল, পুনর্জন্ম, আত্মা-শরীর, মহাকাল ছাপিয়ে বের করতে চান কর্মের বিশালতাকে। সেই ভাবনা থেকে ৩ খণ্ডে রচিত হয় নন্দিতজনদের নিয়ে বিশেষ সংকলনগ্রন্থ ‘এখানে মৃত্যু নেই’। এই গ্রন্থের কাজ চলতে চলতে অনন্তের যাত্রায় ছুট দেন সেইসব নন্দিতজনদের কেউ কেউ। চলে যান নবনীতা দেবসেন, মুর্তজা বশীর, নিমাই ঘোষ, নিমাই ভট্টাচার্য, আমজাদ হোসেন… তারা অন্তর্লোকে চলে যান। কিন্তু তারা রয়ে যান কর্মে। আর দিয়ে যান ঈশ্বরবিশ্বাস, মৃত্যুচেতনা, মানবজীবন, পরকাল, পুনর্জন্ম, মহাকাল নিয়ে নিজস্ব ভাবনার কথা। সেগুলো মায়া দিয়ে রচনা করেন সাজ্জাদ। সাজ্জাদ হুসাইন আবিষ্কার করেন কবীর সুমনের গানের বাইরের এক্সাইটিং এক সত্তাকে। তার আত্মদর্শন নিয়ে লিখেছেন ‘কবীরা’। লিখেছেন চারুলতাখ্যাত শিল্পী মাধবী মুখোপাধ্যায়ের থিয়েটার, সত্যজিৎ রায়, ঋত্বিক ঘটক, মৃণাল সেন, পূর্ণেন্দু পত্রীসহ নানান বিরল শিল্পীদের সাথে পরিভ্রমণের আদ্যোপান্ত নিয়ে আত্মকথনমূলক গ্রন্থ ‘মাধবীর জন্যে’।তার লেখা বাংলাদেশের কিংবদন্তিতুল্য দুই শিল্পী ববিতা ও এটিএম শামসুজ্জামানকে নিয়ে আত্মকথনমূলক গ্রন্থও প্রকাশিত হয়ে গেছে এরইমধ্যে। বই দুটির নাম যথাক্রমে ‘বিস্ময়ে ববিতা’ ও ‘আমি আমি’।দুই বাংলার কালোত্তীর্ণ গানের দল ‘মহীনের ঘোড়াগুলি’র সকল সদস্যদের সাথে আড্ডা, গল্প, তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে করে ৩ বছরের পরিভ্রমণ শেষে রচনা করেন একটি পূর্ণাঙ্গ গ্রন্থ ‘মহীনের ঘোড়াগুলির গান’। এইসব পথ পেরিয়ে সাজ্জাদ হুসাইন এখন বেরিয়ে পড়তে চান অন্য পথে। যেখানে আরও আরও অদ্ভুত মানুষেরা রয়েছে। রয়েছে প্রকৃতি। রয়েছে বিস্ময়। যা ফেলে আসা পথকে নতুন পথের সাথে পরিচয় করিয়ে দেবে।চিন্তা-চেতনার উস্কানিতে অক্লান্ত হেটে চলের এই আর্বান পথিক…