“সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু তৃতীয় খণ্ড, ষাটের দশক ( দ্বিতীয় পর্ব)" বইটির ফ্ল্যাপ এর লেখাঃ হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তার ধারাবাহিক আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় হয়েছিল। তাঁর ঘটনাবহুল রাজনৈতিক জীবনের অনেক কথাই এখনাে অজানা। এই প্রেক্ষাপটে বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামী জীবনের নানা ঘটনার তথ্য সংবাদপত্র থেকে তুলে এনে তা সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউট। ‘সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু শিরােনামে গ্রন্থাকারে এই তথ্যগুলাে প্রকাশ করা হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে বঙ্গবন্ধুর বিভিন্ন কার্যক্রম, বক্তৃতা, বিবৃতি, বঙ্গবন্ধু-সংশ্লিষ্ট সম্পাদকীয়, উপ-সম্পাদকীয়, কলাম, চিঠি, জনসভার বিজ্ঞাপনসহ অন্যান্য তথ্য। ধারাবাহিকভাবে তথ্য সংরক্ষণের জন্য গ্রন্থটি কয়েকটি খণ্ডে সাল অনুযায়ী প্রকাশ করা হচ্ছে। ইতােমধ্যে প্রথম খণ্ড ও দ্বিতীয় খণ্ড প্রকাশিত হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় প্রকাশিত হলাে তৃতীয় খণ্ড। এই খণ্ডে ১৯৬৫ থেকে ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত সময়ের তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। হােসেন শহীদ সােহরাওয়ার্দীর মৃত্যুর পর ১৯৬৪ সালের ২৫ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর বাসায় অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে আওয়ামী লীগকে পুনরায় সংহত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এ বৈঠকের প্রস্তাবের ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধুকে তৎকালীন পাকিস্তানের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও মাওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশকে দলের সভাপতি করা হয়। ১১ মার্চ একটি সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়, যার মাধ্যমে। বঙ্গবন্ধু সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা প্রতিরােধকল্পে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। এ সময় সেনাশাসক আইয়ুব খান বিভিন্নভাবে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করার পরিকল্পনা করে। আইয়ুব খানের মৌলিক গণতন্ত্র, সামরিক শাসনসহ বিভিন্ন কার্যক্রম-বিরােধী নেতাদের মধ্যে অগ্রগামী ছিলেন বঙ্গবন্ধু। অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলাের সাথে কাজ করতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আইয়ুব-বিরােধী প্রার্থী ফাতেমা জিন্নাহকে সমর্থন করেন। ১৯৬৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি লাহােরে পাকিস্তানের বিরােধী দলসমূহের একটি জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এ সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু তার ঐতিহাসিক ছয় দফা দাবি পেশ করেন, যাতে পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসনের পরিপূর্ণ রূপরেখা উল্লেখ করা হয়। এই দাবি সম্মেলনের উদ্যোক্তারা প্রত্যাখ্যান করেন এবং বঙ্গবন্ধুকে বিচ্ছিন্নতাবাদী হিসেবে চিহ্নিত করেন। এ কারণে তিনি ওই সম্মেলন বর্জন করে পূর্ব পাকিস্তানে ফিরে আসেন। ওই বছরই ১৯ মার্চ তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। সভাপতি হওয়ার পর তিনি ছয় দফার পক্ষে সমর্থন আদায়ের লক্ষ্যে দেশব্যাপী গণসংযােগ শুরু করেন। এ সময় তিনি প্রায় পুরাে দেশ ভ্রমণ করেন। এই ভ্রমণের সময় তিনি ঢাকা, সিলেট, ময়মনসিংহসহ বিভিন্ন স্থানে অনেকবার গ্রেফতার হন। বাঙালি জাতির অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু তাঁর ৫৫ বছরের জীবনের ৪ হাজার ৬শ' ৮২ দিন কারাগারে কাটিয়েছেন। এর মধ্যে ১৯৬৪ ও ১৯৬৫ সালে বিভিন্ন মেয়াদে তিনি ৬৬৫ দিন কারাগারে ছিলেন। ছয় দফা ঘােষণার পর বঙ্গবন্ধু যেখানে সমাবেশ করতে গেছেন, প্রায় সবখানেই গ্রেফতার হয়েছেন। ওই সময়ে তিনি ৩২টি জনসভা করে বিভিন্ন মেয়াদে ৯০ দিন কারাভােগ করেন। ১৯৬৬ সালের ৮ মে তিনি আবারাে গ্রেফতার হয়ে ১৯৬৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে মুক্তি পান। এ সময় তিনি ১ হাজার ২১ দিন কারাগারে ছিলেন। সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু গ্রন্থের এই খণ্ডে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনের বিভিন্ন ঘটনার প্রতিফলন ঘটেছে। ১৯৬৫ থেকে ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত আন্দোলনমুখর সময়ে বঙ্গবন্ধুর ওপর নানা হয়রানিমূলক কর্মকাণ্ডের বিবরণই বেশি পাওয়া যায়। তবে বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতির মধ্যে নিজস্ব জাতীয়তাবােধ তৈরি, শােষিত-বঞ্চিত বাঙালিদেরকে নিজেদের অধিকার আদায়ে ঐক্যবদ্ধ করা এবং সর্বোপরি স্বাধিকার ও স্বাধীনতা অর্জনের দিকে ধাবিত করার যে প্রয়াস চালিয়েছেন তার প্রতিফলন ঘটেছে ওই সময়ের সংবাদপত্রে।