প্রকাশকের কথা প্রবন্ধকার ও গবেষক হিসেবেই আফসান চৌধুরী পাঠকদের কাছে পরিচিত, বিশেষ করে ইংরেজী ভাষায় সামাজিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে গভীর অনুসন্ধানী লেখায় পারদর্শিতা তাঁকে যশ্বশী সাংবাদিকের খ্যাতি এনে দিয়েছে। বইটি আফসান চৌধুরীর প্রথম বাংলা উপন্যাস। বাংলাদেশের একজন প্রবীণ শীর্ষস্থানীয় কথাশিল্পী আখতারুজ্জামান ইলিয়াস বইটির মূল্যায়ন করেছেন এভাবে: “মানুষের মুক্তি যদি না আসে তো দেশের স্বাধীনতা দিয়ে কি হবে? স্বাধীন রাষ্ট্রেও মানুষ বন্দি হয়ে থাকে ক্ষুধার ভেতর, তাঁর শ্রম অন্যের দখলে, কামলা হয়ে সে গড়াগড়ি খায় প্রতারণা আর অপমানের স্যাঁতসেঁতে শ্যাওলায়। তার রক্ত দিয়ে ফুটিয়ে তোলা অন্ন গিলে খায় বিকট কয়েকটি হাঁ। সাধ আর ভালোবাসা তার জন্য নিষিদ্ধ করা হয়েছে, তার আকাক্সক্ষা বিবেচিত হয় ¯পর্ধা বলে। বন্দিত্ব মোচন করার জন্যেই মানুষ বেঁচে থাকে। মুক্ত হওয়ার তাগিদে অনেকে মিলিত হয়ে জ্বলে ওঠে, নিজেদের আলোয় চোখে পড়ে মুক্ত এলাকা, সেই এলাকাকে সীমাহীন বলে ঠাহর করা যায়। কিন্তু শত্রুর থাবায় সেই আলো নিভেও যেতে পারে; মানুষ তখন নেতিয়ে পড়ে, শত্রুর ফাঁদে মারা পড়ে অনেকে, কেউ কেউ ধরাও দেয়। এই জ্বলে-ওঠা আর নিভে-যাওয়া মানুষের তেজ আর গ্লানির ভেতরে আফসান চৌধুরী ছুঁতে পারেন তাদের বেঁচে থাকার ¯পন্দন। সংগঠনকে জব্দ করতে পারলেও মানুষের মুক্তির ¯পৃহা ধিকিধিকি আঁচে সংগঠিত হয়েই চলে। ‘বিশ্বাসঘাতকগণ’-এ মানুষের বলকানো রক্তের নীল ধোঁয়া আর লাল ছায়ায় পা ফেলতে ফেলতে আফসান পাঠককে জাগিয়ে তোলেন নতুন নতুন জিজ্ঞাসায়। তেজী ও ক্লান্ত এবং উদ্বুদ্ধ ও নিস্তেজ জীবনের জটিলতা খোলার উদ্যোগ নিলেও সমাধান বাতলে দেওয়ার প্রবণতা থেকে তিনি মুক্ত। বরং মানুষের অমিত সম্ভাবনাকে অনুভব করার জন্যে সশ্রম অনুসন্ধানে নিয়োজিত হতে তিনি পাঠককে অবিরাম উস্কানি দেন। এইভাবে আফসান চৌধুরী অর্জন করেন দায়িত্বশীল ঔপন্যাসিকের অস্বস্তিকর মর্যাদা।” আফসান চৌধুরী গণমাধ্যম কর্মী, গবেষক, অধ্যাপক ও উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ। এ যাবত তাঁর দুটি উপন্যাস, একটি গল্প সংকলন ও অনুবাদ বেরিয়েছে। ত্রিভাষী আফসান চৌধুরী উর্দু, বাংলা এবং ইংরেজিতে তিনটি আলাদা আলাদা ফিকশন লিখছেন। তাঁর প্রধান আগ্রহের ক্ষেত্র মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস। তিনি একাধিক তথ্যচিত্রও নির্মাণ করেছেন।
আফসান চৌধুরী চার দশকের অধিক সময় ধরে। 'একাত্তরের ইতিহাস নিয়ে কাজ করছেন। তিনি হাসান হাফিজুর রহমানের অধীনে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের দলিলপত্র' প্রকল্পের একজন গবেষক ছিলেন। স্বাধীনতাযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে নির্মিত চার খণ্ডের। ‘বাংলাদেশ একাত্তর’ (২০০৭) বইগুলাের সম্পাদক ও সহ-রচয়িতা ছিলেন। তিনি ১৯৭১ সালের সাক্ষাঙ্কার সংগ্রহ' (২০১৮) এবং গ্রামের জনগােষ্ঠীর একাত্তরের অভিজ্ঞতার ওপর গ্রামের একাত্তর' (২০১৯) বই দুইটি সম্পাদনা করেন ২০২০ সালে তিনি হিন্দু জনগােষ্ঠীর একাত্তর’ এবং ১৯৭১ গণনির্যাতন-গণহত্যা কাঠামাে, বিবরণ ও পরিসর’ গ্রন্থ দুইটি সম্পাদনা করেন। ১৯৭১ নিয়ে আফসান চৌধুরী বিবিসির জন্য ৫টি রেডিও ডকুমেন্টারি এবং তাহাদের যুদ্ধ' (২০০১) ও গ্রামের মুক্তিযােদ্ধা' (২০১৯) নামে দুইটি ভিডিও ডকুমেন্টারি ' নির্মাণ করেছেন। ২০২০ সালে তিনি একাত্তরের নারীযােদ্ধা’সহ তিনটি ডকুমেন্টারি নির্মাণ করেছেন ' একই বছরে তার লেখা ‘বাংলাদেশ ও শেখ মুজিব। '(১৯৩৭-১৯৭১)' গ্রন্থটি প্রকাশ পায়। ২০২১ সালে প্রকাশের জন্য তিনি মুজিবনগর : কাঠামাে, কার্যবিবরণ ও অভিজ্ঞতা, মুক্তিযুদ্ধের সামগ্রিক চিত্র তুলে ধরতে ‘একাত্তরপিডিয়া’ এবং নারীর একাত্তর’ গ্রন্থ তিনটি সম্পাদনা করছেন। সাংবাদিকতা ও গবেষণার পাশাপাশি তিনি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।