প্রাচীন বঙ্গের রাজধানী বিক্রমপুর এক ঐতিহাসিক ও ঐতিহ্যবাহী জনপদ। বিক্রমপুর হিসেবে নামকরণের পূর্বে জনপদটি ছিল সমতট, তারও আগে প্রাচীন ‘গঙ্গারিড্ডি’ রাজ্যের অংশ। চন্দ্র, বর্মণ, শূর ও সেন রাজবংশের নৃপতিগণ এখানে রাজধানী স্থাপন করে তৎকালীন বঙ্গদেশ শাসন করে গেছেন। সুলতানি আমলের শতবর্ষ পর্যন্ত জনপদটি স্বাধীন অস্তিত্ব বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছিল। পরগনা প্রথা বিদ্যমান থাকা পর্যন্ত বর্তমান শরীয়তপুর ও মুন্সীগঞ্জ জেলা এবং ঢাকা জেলার কিছু অংশ নিয়ে বিক্রমপুর পরগনা গঠিত ছিল। আরব বণিকদের অনেকেই বাণিজ্য উপলক্ষে এবং সুফিগণ ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে নবম শতাব্দী থেকেই বিক্রমপুরে বসবাস করা শুরু করেন। ব্রিটিশ শাসনামলে এই জনপদের কৃতীসন্তান হাজী শরীয়ত উল্লাহ ব্রিটিশ শোষণ ও জমিদারদের অত্যাচারের বিরুদ্ধ তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলেন। মুক্তিযুদ্ধেও এই এলাকার সূর্য সন্তানদের রয়েছে গৌরবময় ইতিহাস। এই গ্রন্থে প্রাচীন গঙ্গারিডি রাজ্য হতে শুরু করে ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিক্রমপুরের ভউগোলিক ও রাজনৈতিক ইতিহাস ধারাবাহিক ভাবে আলোচনা করা হয়েছে। সেই সঙ্গে শিক্ষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি এবং খেলাধুলার বিস্তারিত বিবরণও স্থান পেয়েছে গ্রন্থটির প্রথম খণ্ডে। বারো ভূঁইয়াদের অন্যতম চাঁদ রায় ও কেদার রায়ের পতনের পরে বিক্রমপুর মোঘল শাসনাধীনে চলে আসে এবং আনেকগুলো জমিদার বংশের উদ্ভব ঘটে। এই সমস্ত জমিদার পরিবারগুলোর ইতিবৃত্ত এবং আরব ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে আগত মুসলিম পরিবারগুলোর ইতিবৃত্ত গ্রন্থের দ্বিতীয় খণ্ডের আলোচ্য বিষয়। প্রাচীনকাল থেকেই বিক্রমপুর শিক্ষা-দিক্ষার এক উন্নত পীঠস্থান। সংস্কৃত চর্চার ক্ষেত্রে নবদ্বীপের পরেই ছিল এর স্থান। তাছাড়া, কয়েক শতাব্দী যাবত প্রশাসনিক কেন্দ্রবিন্দু থাকায় যুগে যুগে এই জনপদে জন্ম নিয়েছেন এমন সব ব্যক্তিত্ব যারা তাঁদের মেধা ও মনন দ্বারা মানব সভ্যতায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। এ রকম ১০০০ ব্যক্তির জীবনী স্থান পেয়েছে গ্রন্থটির তৃতীয় ও চতুর্থ খণ্ডে।